কক্সবাজারের নারীদের উন্নয়নে ‘অগ্রযাত্রা’র বিশেষ প্রস্তাবনা


নিজস্ব প্রতিবেদক: নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও পর্যটনখাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কক্সবাজারকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগঠন ‘অগ্রযাত্রা’ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা উত্থাপন করেছে।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী নীলিমা আক্তার চৌধুরী মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার প্রতি বিশেষ কিছু অনুরোধ জানিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের ক্ষমতায়ন, পর্যটনবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিকল্পনা।

তিনি বলেন, “কক্সবাজারের নারীরা ঐতিহ্যগতভাবে রক্ষণশীল হলেও, তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা এবং স্থানীয় পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের প্রসার ঘটিয়ে কক্সবাজারকে একটি উন্নত উদ্যোক্তা নগরীতে পরিণত করা সম্ভব।”

নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে ৫টি মূল প্রস্তাবনা:

১. স্থানীয় অর্থনীতি ও খাদ্য নিরাপত্তা:


কক্সবাজারের প্রায় ৪৫ লক্ষ স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও জীবিকার চাহিদা মেটাতে Agriculture, Food Security & Livelihood প্রকল্প গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে, ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে মৎস্য, শুটকি, মুক্তা আহরণ ও লবণ শিল্পে নারীদের প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিং একাডেমি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

২. নারীবান্ধব ব্যবসা কেন্দ্র ও ডিসপ্লে সেন্টার স্থাপন:

নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতায় কক্সবাজারে একটি মাল্টিফাংশনাল নারীবান্ধব ব্যবসা কেন্দ্র ও ডিসপ্লে সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে, যা পর্যটন খাতের সাথে নারীদের কার্যকর সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করবে।

• আন্তর্জাতিক মানের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও নার্সিং কলেজ স্থাপন:
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের জন্য দক্ষ নারী ও যুব কর্মী তৈরি করতে ভাষা প্রশিক্ষণ, উন্নত কারিগরি প্রশিক্ষণ ও একটি নার্সিং কলেজ স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

• স্থানীয় নারী নেতৃত্বাধীন সংগঠনের জন্য তহবিল বরাদ্দ:
বর্তমানে USAID ও WFP-এর তহবিল সংকোচনের ফলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তাই, স্থানীয় সংগঠনগুলোর জন্য অর্থায়নের দাবি জানানো হয়েছে, যাতে তারা দক্ষতার সাথে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারে।

• আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন:
কক্সবাজারকে একটি পর্যটন নগরী হিসেবে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের ‘পোলেনেশিয়ান কালচারাল সেন্টারের’ আদলে আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

নীলিমা আক্তার চৌধুরী বলেন, “আমরা যদি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’— শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব, ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে কক্সবাজারসহ সারাদেশেই অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা সম্ভব।”

তিনি আরও বলেন, নারীদের সর্বস্তরে মর্যাদাপূর্ণ সহঅবস্থানের জন্য সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা জোরদারের প্রয়োজন।

সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার সুদৃষ্টি কামনা করে উত্থাপিত এই প্রস্তাবনাগুলো কক্সবাজারসহ দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ