নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজারের রামু উপজেলার ফতেকারকুল ইউনিয়নের সোহাগ পাড়ায় দীর্ঘদিন ধরে পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। শামসুল আলম রুবেলের পরিবারের দাবি, তাদের ১০০ বছরের পৈতৃক সম্পত্তি প্রায় ৫০ বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন মোহাম্মদ আলম, তার ছেলে আনো মিয়া এবং নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন। আদালতের দেওয়া স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সম্প্রতি দখলকারীরা ওই জমিতে বাড়ি নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) জমির মালিক শামসুল আলম রুবেল বাঁধা দিতে গেলে নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা তাকে গুরুতরভাবে মারধর করে। বর্তমানে তিনি রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও মোহাম্মদ আলম ও তার সহযোগীরা জমিতে বাড়ি ও বাউন্ডারি নির্মাণ করছেন। এ বিষয়ে রুবেলের পরিবার অভিযোগ করেন, জমিটি তাদের পূর্বপুরুষ আহমদ কবিরের নামীয় সম্পত্তি। আদালত থেকে এই জমিতে তাদের পক্ষে ডিগ্রি পেলেও দখলকারীরা জমি ছাড়তে রাজি হয়নি।
ভুক্তভোগী শামসুল আলম রুবেল জানান, “আমাদের এই জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে এবং আমরা একটি স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পেয়েছি। কিন্তু দখলকারীরা তা অমান্য করে বাড়ি নির্মাণ করছে। বাধা দিতে গেলে তারা আমাকে মারধর করেছে।” তিনি এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি দাবি করেন।
এদিকে, নজরুল ইসলাম দাবি করেন, “এই জমি আমরা ১০০ বছর ধরে ভোগদখল করছি। তবে আমরা চাই বিষয়টি সামাজিক বা আইনগতভাবে মীমাংসা হোক। শামসুল আলম গংদের ১০ শতাংশ জমি আমাদের দখলে এবং আমাদের ১০ শতাংশ জমি তাদের দখলে রয়েছে।” তবে রুবেলকে মারধরের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
ঘটনার দিন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করা হলে রামু থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশ স্থানীয় জনগণকে সংঘাতে না জড়ানোর নির্দেশ দেয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমন কান্তি চৌধুরী জানান, “৯৯৯ থেকে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়টি আমরা জেনেছি। যদি কেউ অভিযোগ দেয়, তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয়দের মতে, এই জমি নিয়ে অনেক আগে থেকেই বিরোধ চলছিল। ভুক্তভোগী পরিবার আদালতের রায় পক্ষে পেলেও জমি ফিরে পায়নি। দখলকারীরা প্রভাব খাটিয়ে জমি দখল অব্যাহত রেখেছে।
শামসুল আলম রুবেল ও তার পরিবার বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তারা দাবি করেন, দখলকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা আইনের সঠিক প্রয়োগ পাচ্ছেন না। ভুক্তভোগী পরিবার প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, “আদালতের রায় অমান্য করে জমি দখল এবং হামলার মতো ঘটনা আইনের প্রতি অবজ্ঞার পরিচয় দেয়। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এলাকায় উত্তেজনা আরও বাড়তে পারে।”
ভুক্তভোগী পরিবার এবং স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পান এবং হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হয়।
0 মন্তব্যসমূহ