সংবাদ প্রকাশের জেরে বাড়িতে ঢুকে সাংবাদিক সেলিমের উপর হামলা ও হত্যাচেষ্টা


নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজার রামু ধেচুয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার সলিম উল্লাহর ভয়াবহ দূর্নীতি, ঘুস গ্রহন ও ভুমির খতিয়ান জালিয়াতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের জের ধরে দৈনিক আপন কন্ঠের নির্বাহী সম্পাদক ও কক্সবাজার জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সেলিমের বাড়িতে ঢুকে সশস্ত্র হামলা ও হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে দূর্নীতিবাজ  তহসিলদার সলিম উল্লাহ। এ ঘটনায় আহত সাংবাদিক সেলিম কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বিশ্রামে রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সাংবাদিক সেলিমের স্বজনরা। 

রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯ টার দিকে কলাতলীস্থ সাংবাদিক সেলিমের বসত বাড়িতে এই হামলা ও হত্যা চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। 

হত্যা চেষ্টাকারী তহসিলদার সলিম উল্লাহ বর্তমানে রামু উপজেলার ধেচুয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। সলিম উল্লাহ ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডস্থ পাহাশিয়াখালী এলাকার বাসিন্দা মৃত সিরাজুল হকের পুত্র।

দায়েরকৃত এজাহার সূত্রে জানা যায়, রামুর ধেচুয়া পালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার সলিম উল্লাহর বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে “দৈনিক আপন কণ্ঠ” পত্রিকায় বিগত ১২/০৬/২০২৪ইং তারিখ 'তহসিলদার সলিম উল্লাহর নজিরবিহীন দুর্নীতি ও জালিয়াতি' শিরোনামে, বিগত ০২/১০/২০২৪ইং তারিখ 'রামুর ধেচুয়া পালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসের মূর্তিমান আতংক তহসিলদার সলিম উল্লাহ' শিরোনামে এবং বিগত ০৫/১২/২০২৪ইং ৩রিখ 'অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। ভূমি জালিয়াতির মহা-নায়ক ধেচুয়া পালংয়ের তহসিলদার সলিম উল্লাহর খুঁটির জোর কোথায়(?), ভয়াবহ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কোটি টাকার বিনিময়ে নামজারি খতিয়ান সৃজন' শিরোনামে কয়েকটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। তাছাড়া স্থানীয় ও জাতীয় আরো বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমেও তার বিরুদ্ধে একই ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসব সংবাদ প্রকাশের জের ধরে তহসিলদার সলিম উল্লাহ সাংবাদিক সেলিমের উপর চরমভাবে ক্ষুদ্ধ হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি প্রদর্শন ও পেশাগত কাজে বাধা সৃষ্টি করে আসিতেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল অনুমানিক ৯টার সময় অতর্কিতভাবে তহসিলদার সলিম ও তার সহযোগি অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন সন্ত্রাসী মারাত্মক অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় সাংবাদিক সেলিমের বসতবাড়ির গেইট খুলে বাসায় ঢুকে পড়ে এবং অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ শুরু করে।

এসময় তারা সাংবাদিক সেলিমকে হত্যার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক ৫,০০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ) টাকা অবৈধ চাঁদা দাবী করেন। কিন্তু চাঁদা দিতে অপারগতা জানালে সলিম উল্লাহ ও তার সহযোগীরা সাংবাদিক সেলিমকে শারিরিকভাবে লাঞ্চিত করে গলা টিপে শ্বাসরোধপূর্বক হত্যার চেষ্টা চালায়।  এসময় সলিম উল্লাহ সাংবাদিকের পকেটে থাকা নগদ ১০,০০০/- (দশ হাজার) টাকা কেড়ে নেয়। তার শোর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় তহসিলদার সলিম উল্লাহ পুনরায় হুমকি দেয় যে, তার বিরুদ্ধে পুনরায় কোন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হইলে কিংবা দাবীকৃত চাঁদার টাকা না দিলে সাংবাদিক সেলিমকে অপহরণ পূর্বক খুন করে লাশগুম করে ফেলবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সলিম উল্লাহ তহসিলদার হিসেবে যোগদানের পর মুলত বিগত ২০০৯ সালের পর থেকে আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপি’র প্রভাব খাটিয়ে ভুমি অফিসে নানা ধরনের অপকর্ম শুরু করেন। অসংখ্য ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভুমি সংক্রান্ত এমন কোন অনিয়ম-দূর্ণীতি-জালিয়াতি নেই, যা তিনি বিগত ১৫ বছরে করেননি। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে তার সব ক’টি কর্মস্থলেই কোন বিধি নিয়ম মানতেন না এই বেপরোয়া তহসিলদার সলিম উল্লাহ। ইচ্ছেমত অফিস করতেন, ইচ্ছেমত নিজের রেট বসিয়ে ঘুস নিতেন। বদলিও হতেন নিজের পছন্দমত জায়গায়। নিয়মিত অফিস না করলেও কোন এসিল্যান্ড, ইউএনও বা ডিসি সাহস করতেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। 

জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি টাকার বিনিময়ে ভুয়া নামজারি খতিয়ান সৃজন, সরকারী অধিগ্রহনকৃত জমি জজালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া খতিয়ান সৃজন করে সরকারের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎসহ অসংখ্য অনিয়মের মাধ্যমে সাধারন মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গত কয়েক বছরে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেলেও তার কোন অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে দাবী ভুক্তভোগীদের।  

সলিম উল্লাহর কাছে নানাভাবে অত্যাচার-হয়রানির শিকার হওয়া অনেক ভুক্তভোগীরা এসিল্যান্ড, জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেও রহস্যজনক কারনে তহসিলদার সলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে এপর্যন্ত দৃশ্যমান কোন  ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা মেলায় এবং কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারনে বিগত জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান তহসিলদার সলিম উল্লাহকে চকরিয়া থেকে মহেশখালীর কেরুনতলীতে শাস্তিমূলক বদলী করেন। কিন্তু তহসিলদার সলিম তার যাদুর কাঠির ইশারায় মহেশখালীতে যোগদান না করে জেলা প্রশাসকের আদেশ অমান্য করে নিজের পছন্দমত রামু উপজেলার ধেচুয়াপালং ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যোগদান করেন। 

অসংখ্য ভুক্তভোগী তার কাছে হয়রানির শিকার হয়ে ভুমি অফিসের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরছেন। যার অসংখ্য তথ্য প্রমান সহ দৈনিক আপন কন্ঠ সহ স্থানীয় ও জাতীয় গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। 

কক্সবাজার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) .... জানান, সাংবাদিকের উপর হামলার অভিযোগে দায়েরকৃত এজাহার পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক যথাযথ আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন এর সাথে সাক্ষাৎ করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে। দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ