নিশান নোয়াখালী জেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সহ সম্পাদককের দায়িত্বের আড়ালে জাহাজমারা ইউনিয়নে বিগত সরকার আমলে আওয়ামিলীগের দলীয় প্রভাব বিস্তার করে একই কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছিল। আওয়ামী নেতাদের অস্তিত্ব এখন প্রায় বিলীন হলেও এই নিশানের দাপট আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য বিএনপির মুখুশ ধারণ করে বলে জানা যায়।
এছাড়াও সরকার পতনের আগে লুৎফুল্ল্যাহিল মজিদ নিশানকে সবাই জানতো আওয়ামী লীগের এবং সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর ডানহাত বামহাত হিসেবে, এমনি আওয়ামী লীগ এর সময় তাদের মিছিল মিটিংয়ে অংশ নিয়েই নিজেকে একজন আওয়ামী লীগ হিসেবে জানান দিয়েছেন এলাকায়।
তার এমন দুমুখো রাজনৈতিক স্বভাব নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিএনপির সিনিয়র নেতা বলেন, নিশানের মত আরো অনেকে বর্তমানে মুখুশ পালটিয়ে বিএনপি ছত্রছায়ায় চলে আসছে। এরা প্রকৃতপক্ষে সুবিধাবাদী লোক, এদের কারণে বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা। তাই আমদের দলীয় নীতিনির্ধারকরা এসব বিষয়ে খুব সচেতন এবং ইতিমধ্যে অনেককে বহিষ্কারও করেছেন। এই নিশানের বিষয়টিও আমলে নিয়ে বিএনপির উপর মহল থেকে দ্রুত একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশা করছেন তিনি।
অভিযোগের সুত্রে জানা যায়, ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর পরই সুবিধাভোগী লুৎফুল্ল্যাহিল মজিদ নিশান তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়া জাহাজমারা বাজার উঠে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার স্লোগান দিয়ে বাজার দখল করে থাকে। সুবিধা ভোগ করার জন্য দল পরিবর্তন করে ওই রাতে মানুষের ঘর বাড়ী অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। এসব অপকর্মে তার সঙ্গে জড়িত মাহমুদুল হক জসীম মেম্বার, জানা যায় এই মাহমুদুল হক জসীম সরকার পতনের পর লুৎফুল্ল্যাহিল মজিদ নিশান এর ডানহাত ও বামহাত হিসেবে কাজ করে, এবং এই জসীম মেম্বারের নেতৃত্বে লুৎফুল্ল্যাহিল মজিদ নিশান এর নির্দেশে স্থানীয় মনির নামে এক ব্যক্তির ৮টি ও রবিয়লের ২টি গরু সহ ঘরের মালামাল, স্বর্নালংকার নিয়ে ঘর বাড়ী ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করে। এই গরু গুলির মধ্যে ২টি গরু মুগবুল হাজীর বাজার নিয়া জবাই করে সন্ত্রাসীরা ভাগ বন্টন করে নিয়া যায়। আর বাকী গুলি বিক্রয় করে। উক্ত বিষয় নিয়া মনির স্ত্রী ও রবিয়ল নৌবাহিনীর অফিসে অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পায়নি। একই রাত্রে সেন্টার সভাপতি মিল্লাদ এর দোকান ঘর লুটপাট করে সব প্রায় ৮ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
গত ৬ই আগষ্ট হইতে ৩০ শে আগষ্ট পর্যন্ত আবুল সেরাং এর ২টি অটোরিক্সা, তাদের দোকান ঘর দখল করে বিএনপির অফিস করা হয়। বাদশা নামে এক লোক থেকে ১০ হাজার, ইসমাইল সেরাং থেকে ৬০ হাজার হেলাল মেম্বার থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় সহ আলা উদ্দিন মেম্বারের দোকান ঘর লুট করে নিয়া যায়।
তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়া গত ৩ই সেপ্টেম্বর রাত্রে কাদিরার ঘাট এ বাকের মেস্ত্ররী ও সোহেলের বাড়ী দোকান ঘর লুট ও অগ্নিসংযোগ করে সব ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ৫ই সেপ্টেম্বর রাত্রে আলাদিগ্রামে ইয়াছিনের বাড়ী লুটপাট এবং তার ৫টি গরু নিয়া যায়। এইভাবে প্রতিনিয়ত সাধারন মানুষের বাড়ী ঘর ভাংচুর লুটপাট চাঁদা আদায় সহ তাদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়। অত্র এলাকার বিএনপি নেতা আনোয়ার, আলা উদ্দিন তার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তাদের ভাই বাবুলকে পিটিয়া মাথা পাটিয়ে আহত করে। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনা।
এলাকাবাসী জানায়, গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর লুৎফুল্ল্যাহিল মজিদ নিশান ও মাহমুদুল হক জসীম সুবিধা ভোগ করার জন্য দল পরিবর্তন করে ওই রাতে মানুষের ঘর বাড়ী অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে নতুন করে চাঁদা বাণিজ্য শুরু করে। সম্প্রতি জাহাজমারা ইউনিয়নে দুটি হত্যার ঘটনায় মামলায় নাম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে।
মিলন উদ্দিন নামে একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমাকে মিথ্যা মামলায় নাম দিয়ে ও ভয় দেখিয়ে ৭০ হাজার টাকার নিয়েছে নিশান, আমি ছাড়াও আরো বহুত লোক রয়েছে যাদের থেকে সে মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করে, আমরা এলাকাবাসী ভয়ে আতঙ্কে আছি কখন জানি আবার ভয় দেখিয়ে টাকা চেয়ে বসে।
জানা যায় লুৎফুল্ল্যাহিল মজিদ নিশান এর ডান হাত হিসাবে কাজ করে হাতিয়া জাহাজমারা ম্যাকপাসানের নামকরা ডাকাত ও সন্ত্রাস জাফর কোম্পানি। তার মাধ্যমে বেশিরভাগ অপকর্ম করিয়ে নেয় এই জাহাজমারার চাঁদাবাজদের গডফাদার লুৎফুল্যাহিল মজিদ নিশান। জাহাজমারা ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো নিশান গ্রুপ, এই গ্রুপের মাধ্যমে চলে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাজি, হতে শুরু করে সকল অপকর্ম।
গোপন সুত্রে জানা যায়, ভোলা ও মনপুরা থেকে আওয়ামী লীগ এর শাসন আমলে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ও সন্ত্রাসী আসামী গুলো পালিয়ে এসে নিশান এর প্রমোদ খানায় লিপ্ত হয়। এলাকাবাসী তার ভয়ে মুখ খুলে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর শাসন আমলে চাষাবাদ কৃত নিমতলীর জমি গুলো নতুন করে দাগ প্রতি ৫ হাজার টাকা করে নিয়ে চাঁদা নির্ধারণ করে কিছু লোকের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। এবং আরো অনেকে অভিযোগ করেন, আমরা নিমতলীর দাগ প্রতি লুৎফুল্ল্যাহিল মজিদ নিশান ৫ হাজার টাকা করে না দিলে সে আমাদেরকে ধান কাঁটতে দিচ্ছে না, তাই নিমতলীর জমি চাষাবাদ মানুষেরা বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হচ্ছে।
অভিযুক্ত লুৎফুল্ল্যাহিল মজিদ নিশানের মন্তব্য নেওয়ার জন্য বারবার তার মুঠোফোনে কল দিয়েও তিনি তা রিসিভ করেন নি, তাই তার মন্তব্য নেওয়া হয়নি।
এই বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক খোকন বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান মহোদয় যে কোন অপরাধের বিষয়ে দল থেকে জিরো টলারেন্স অলরেডি দিয়েছেন। আমিও তাই বলবো, কোন অপকর্ম কারী বিএনপি দলে থাকতে পারবে না। আপনি যে বিষয় টা বললেন যদি তার অভিযোগটা প্রমানিত হয় তবে অবশ্যই দল তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুর রহমান জানানঃ অপকর্মে লিপ্ত কেউ বিএনপির নেতাকর্মী হতে পারে না, সুসময়ের কাউকে প্রয়োজন নেই দুঃসময় যারা দলের সাথে ছিলো এবং কোন অপকর্মে লিপ্ত নেই তারাই বিএনপিতে জায়গা পাবে। আপনি যেই বিষয়ে বললেন আমরা দল থেকে সঠিক তদন্ত করবো এবং তার বিরুদ্ধে দল থেকে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেনঃ আমাদের নেতা জনাব তারেকে রহমান এর নির্দেশ অপকর্ম যেই করবে না কেন, দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। অপকর্মকারীদের জাতীয় দল বিএনপিতে জায়গা নেই। আমরা হাতিয়ার দলীয় লোকদের সাথে বসবো তার পর আমি আপনাকে জানাবো।
বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান জনাব মো: শাহজাহান বলেন আমি তার বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাইনি, যদি এমন কোন অভিযোগ থাকে তাহলে দল তার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে ব্যাবস্থা নিবে।
0 মন্তব্যসমূহ