আশ্চর্যের বিষয় হল, শেখ হাসিনার নিজেকে এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দাবি করা এবং পদত্যাগ না করার দাবি নিয়ে ইউনুস-সহ গোটা সরকার মুখে কুলুপ এঁটে আছে। আওয়ামী লীগের তরফে দাবি করা হয়েছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে থাকলে তাঁর পদত্যাগপত্র সরকার প্রকাশ করুক।
৫ অগাস্ট হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে ৮ অগাস্ট রাত ৮’টা পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনও সরকার ছিল না। সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর সরকারিভাবে তিনিই প্রথম দেশবাসীকে জানান বাংলাদেশ টেলিভিশনে ভাষণ দিয়ে।
সেই তিনি সম্প্রতি একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবর আমার জানা ছিল না। দেশের অস্থির পরিস্থিতি নিয়ে আমি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতার সঙ্গে সেনা নিবাসে বৈঠক করছিলাম। আমাকে বৈঠকের মাঝে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে গিয়েছেন। প্রশ্ন হল, সেনা প্রধানকে অন্ধকারে রেখে প্রধানমন্ত্রী বা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অমন অস্থির পরিস্থিতিতে দেশ ছাড়া সম্ভব ছিল কি?
কিন্তু শেখ হাসিনাকে ভারতে পৌঁছে দিয়েছিল বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যে বিমান সেটির স্কোয়াক কোড (যা উড়ানের আগে প্রতিটি বিমানের জন্য বরাদ্দ হয়) এজিএএস ১৪৩১-এর ফ্লাইট ডিটেলস রিপোর্ট থেকে দেখা গেছে, সেটি ঢাকা থেকে সরাসরি ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয় বিকাল ৩’টা ১১ মিনিটে।
জানা যাচ্ছে ঢাকার একটি সেনা বিমান বন্দর থেকে তাঁর ফ্লাইটটি ওড়ে। ততক্ষণে গণভবনে লুটতরাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। মিডিয়াতেও খবর হয়ে যায়, হাসিনা পালিয়েছেন। কিন্তু বিমানের রিপোর্ট বলছে, তিনি দেশ থেকে পালিয়েছেন বলে খবর হওয়ার পর আরও অন্তত দু-আড়াই ঘণ্টা ঢাকাতেই ছিলেন। হেলিকপ্টার তাঁকে গণভবন থেকে সেনা বিমান বন্দরে পৌঁছে দিয়েছিল।
প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, সেনা বিমানের দেশের সীমা অতিক্রম করে পড়শি দেশে যেতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুমতি লাগে। শেখ হাসিনার দেশত্যাগ এবং তাঁকে বিমানে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার অনুমতি কে দিয়েছিলেন? সেনা প্রধান জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়ে অবগত ছিলেন না। প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য, বিমান বাহিনীর প্রধান এই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। কারণ আর্মি চিফ ওয়াকার-উজ-জামান বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান। সর্বাধিনায়ক হলেন রাষ্ট্রপতি। যদিও রাষ্ট্রপতির ওই মর্যাদা আলঙ্কারিক। তাঁর পক্ষে শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগের অনুমতি দেওয়া সম্ভব ছিল না।
জানা যাচ্ছে, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি বাংলাদেশের আকাশসীমায় থাকাকালে সেটির ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করা ছিল। এই যন্ত্র অফ করা থাকলে বিমানকে আকাশে লোকেট করা যায় না। শুধু এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে। পাইলটের এই সিদ্ধান্ত থেকে ধারণা করা হচ্ছে, দেশের ভূখণ্ডে শেখ হাসিনার বিমান নিরাপদ বোধ করেনি। মনে করা হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটির নিরাপত্তার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল।
নিরাপত্তার দিকটি আরও স্পষ্ট হয়েছে বিমানটির দিল্লি যাওয়ার রুট থেকে। ঢাকা থেকে সরাসরি দিল্লিগামী বিমানগুলি ওড়ার পর বাংলাদেশের উত্তর প্রান্তের শহর রাজশাহীর আকাশ ছুঁয়ে পশ্চিমবঙ্গের মালদহের উপর দিয়ে দিল্লির দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার বিমান কলকাতার উপর দিয়ে উড়েছিল। এরফলে বাংলাদেশের আকাশসীমা অতিক্রম করতে বিমানটির পনেরো মিনিট সময় কম লাগে। মনে করা হচ্ছে শেখ হাসিনা দ্রুত দেশের আকাশসীমা অতিক্রম করে ভারতের সীমানায় ঢুকে পড়তে চেয়েছিলেন।
0 মন্তব্যসমূহ