আপডেট ১ আগষ্ট কক্সবাজারে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল, ২ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী

খোরশেদ আলম টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে হঠাৎ করে বন্যা দেখা দিয়েছে। গেলো সোমবার থেকে বিরতিহীন বৃষ্টির কারণে জেলার ৭ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। নদী ও খালের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পানি ঢুকেছে গ্রামে। পাহাড়ী ঢলে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। যার কারনে কবলিত এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে কক্সবাজার পৌরসভার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি জলাবদ্ধতা দেখা গেছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সড়কে। প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার শহরের হলিডে মোড় এলাকা, টেকপাড়া, চাউল বাজার সড়ক, হাঙরপাড়া, গোলদিঘির পাড়, বৌদ্ধমন্দির এলাকা, পাহাড়তলী, কলাতলী, সদর ইউনিয়নের ঝিলংজাসহ ২০টির বেশি গ্রাম। কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন সড়ক, উপসড়ক প্লাবিত হয়ে একপর্যায়ে অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়ে পানি। এতে অনেক বাড়িঘরের আসবাবপত্র ও দোকানের মালামাল নষ্ট হচ্ছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের চেইন্দা এলাকা দিয়ে হাঁটু পরিমাণ বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এতে করে যানবাহন চলাচল ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া চকরিয়া মানিকপুর সড়ক, রামু নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কসহ জেলার বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কে বন্যার পানি উপচে পড়ায় যানবাহন চলাচল ব্যহত হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলার উখিয়া টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, রামু সদর উপজেলার ৭০টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এতে এসব এলাকার ২ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। মাতামুহুরী ও বাকখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘর-বাড়িতে পানি ডুকে যাওয়ায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্র চলে গেছে। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মাতামুহুরী ও বাকখালী নদীর কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে ঢলের পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মাতামুহুরি নদীর দুপারের পাঁচটি ইউনিয়নে পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে পড়ে কয়েক হাজার বাড়ি ঘর প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, বাকখালী নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। বাকখালী নদীর তীরবর্তী রামু ও সদর উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ৫০ হাজার বাসিন্দা হঠাৎ করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এছাড়া কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়াসহ ১ নম্বর ওয়ার্ডে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ৫০০ বাড়ি ঘর তলিয়ে গেছে। উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়ন ও টেকনাফ ইউনিয়নের হ্নীলা ও হোয়াইকং ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পানিবন্দী মানুষের জন্য দ্রুত সরকারি সহায়তা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। বৈরি আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে ফলে জেলেরাও কর্মহীন রয়েছে। কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একে এম তারিকুল আলম বলেন, জলাবদ্ধতা এই শহরে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই সমস্যা নির্মূলে পৌর মেয়রের নেতৃত্বে পৌর পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে। আমরা ইতিমধ্যে নাল নর্দমা দখল করে নির্মিত স্থাপনা ধ্বংস করে পুণরায় উদ্ধারের কাজ শুরু করেছি। কক্সবাজার আবহাওয়ার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল হান্নান জানিয়েছেন, টানা দুইদিনের বৃষ্টিতে কক্সবাজারে ২৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী তিন দিনও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা আছে। এদিকে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সাজারের উখিয়া, টেকনাফ ও শহরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যাচ্ছে না। তবে পান্দিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে স্ব স্ব ইউএনও ও জনপ্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ