চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় ভেজাল তেল-ঘি কারখানার সন্ধান: সংবাদ প্রকাশ করলে দেখে নেওয়ার হুমকি


গাজী গোফরান: চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানাধীন ছৈয়দ শাহ রোডস্থ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পাশে তালুকদার ভবনে অবৈধভাবে মোড়কজাত করা হচ্ছে ভেজাল সরিষার তেল, ঘি, চা-পাতা এবং দধি। ভেজাল তরল দুধ সরবরাহের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, তালুকদার ভবনের মালিক জামায়াত নেতা ঈসা তালুকদারের একটি গরুর খামার রয়েছে। খামারে ২৫-৩০টি গরু থাকলেও ১৫-২০টি দুগ্ধজাত গাভী রয়েছে। এসব গাভী থেকে দৈনিক গড়ে ১৫০-২০০ লিটার দুধ সরবরাহের সক্ষমতা থাকলেও তিনি গড়ে দুধ সরবরাহ করেন ৫০০-৫৫০ লিটার। দধি বিক্রি করেন গড়ে ৫০ কেজি। বিভিন্ন এলাকা থেকে ভেজাল ঘি সংগ্রহ করে নিজস্ব খামারের দুধ থেকে তৈরি বলে মোড়কজাত করে চালিয়ে দেয়। এছাড়া বিএসটিআই অনুমোদনহীন নিন্ম মানের সরিষার তেল এবং চা-পাতাও বিক্রি করেন তিনি। স্বল্প পরিমাণ গরু থেকে এত বেশী দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য সরবরাহ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সন্দেহ পোষণ করে আসছিলো সচেতন এলাকাবাসী। তবে অনেকের ধারণা ঈসা তালুকদারের মতো নামাজি ও দাড়ি-টুপি ওয়ালা লোক এমন ভেজাল কিছু করতে পারেন না। তাই কেউ প্রশাসনকে বিষয়টি জানাননি।
প্রতিবেদকসহ অন্য সংবাদ মাধ্যমের ৫ জন সাংবাদিক বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে অনুসন্ধানে গেলে দেখা যায়, ঈসা তালুকদারের নিজস্ব ভবনের নীচে একটি দোকানে এসব ভেজাল সরিষার তেল, ঘি, দধি, চা-পাতা বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে স্বল্প পরিমাণে পণ্য থাকলেও ভেজাল পণ্য মজুদ করা হয়েছে ভবনের ৩য় তলায়, যেই ফ্ল্যাটে তিনি স্ব পরিবারে থাকেন। ফ্ল্যাটের গোডাউনে কি পরিমাণ পণ্য মজুদ রয়েছে এবং কি কি রয়েছে দেখার অনুমতি চাইলে ঈসা তালুকদার সাফ জানিয়ে দেন ভেতরে ঢুকা যাবে না। এসময় বিক্রয় কেন্দ্রে দেখা যায়, বিভিন্ন সাইজের স্টীকারবিহীন মোড়কজাত ঘি। ডেস্কে “আল- বারাকাহ” নামে আলাদা স্টীকার রাখা আছে। সেখান থেকে স্টীকার লাগানো হচ্ছে। স্টীকারের নীচের ঠিকানা মার্কার দিয়ে মুছে দেওয়া হলেও কালি ঘষে ঠিকানা দেখা যায় সিরাজগঞ্জের। সেখানে দেওয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে মোখতার নামের এক ব্যক্তি নিজেকে এই ব্র্যান্ডের ঘি এর মালিক পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি ঈসা তালুকদারকে ড্রামে ভরে খোলা ঘি সরবরাহ করেন। সাদা মোড়কে খুচরা বিক্রি করতে বলেছেন, স্টীকার লাগানোর কোন অনুমতি দেননি।
এছাড়া “বাংলার নির্যাস” ব্র্যান্ডের সরিষার তেলের ঠিকানা দেখা যায় রাজশাহীর বনগ্রামে। “সতেজ” ব্র্যান্ডের চা পাতার ঠিকানা চট্টগ্রামের চাক্তাই হলেও নকল “কোয়ালিটি” ব্র্যান্ডের চা পাতার ঠিকানা সিলেট।
ঈসা তালুকদার বলেন, সরিষার তেল এবং চা পাতা মোড়কজাত করে আনেন। কিন্তু এসব কোম্পানির বিএসটিআই অনুমোদনের ছাড়পত্র চাইলে কোম্পানি তাকে দেয়নি বলে জানান। সিরাজগঞ্জ থেকে বিএসটিআই অনুমোদিত আল বারাকাহ কোম্পানির খোলা ঘি এনে এখানে মোড়কজাত করেন, কোম্পানী তাকে অনুমতি দিয়েছে তাই এখানে অপরাধের কিছু নেই। এক স্থানে মোড়কজাতের অনুমোদন নিয়ে অন্য স্থানে মোড়কজাত করার সুযোগ নেই, এরপরেও কেন করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আইন না থাকলে আগামীতে আর করবেন না।


এসময় ইসমাইল ইমন নামে এক ব্যক্তি এসে নিজেকে নতুন সময় পত্রিকার সাংবাদিক এবং বিএনপি নেতা ও মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি এম এ হাশেম রাজুর আস্থাভাজন পরিচয় দিয়ে বলেন, কিসের সাংবাদিক এখানে সাংবাদিকের কোন কাজ নেই।

এটা আমার এলাকা, এখানে কোন সাংবাদিক আসলে আমাকে জানিয়ে আসতে হয়। এইসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে চাঁদাবাজির মামলা করে জেলে ঢুকানোর হুমকীও দেন ভেজালকারীর পক্ষ নেওয়া এই কথিত সাংবাদিক। একপর্যায়ে তিনি নিজের মুঠোফোনে ছবি/ভিডিয়ো ধারণ করতে থাকেন এবং বলেন এগুলো চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করে ফেসবুকে দেওয়া হবে।

ঈসা তালুকদারের ভয়ে কেউ সরাসরি মুখ খুলতে না চাইলেও কয়েকজন এলাকাবাসী নাম প্রকাশ না করে জানান, ঈসা তালুকদার একসময় জামায়াতের সক্রিয় নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় তিনি নিষ্ক্রিয় হলেও বিভিন্ন সময় তার বাসায় জামায়াত নেতা-কর্মীদের আনাগোনা দেখা যায়। জামায়াতের মধ্যম সারির একজন ডোনার হিসেবেও তিনি এলাকায় সুপরিচিত। এলাকার একটা কিশোর টোকাই গ্রুপ তার পক্ষ নিয়ে কাজ করে। তার সাথে কারো বাকবিতন্ডা হলে এই গ্রুপকে লেলিয়ে দেয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআই চট্টগ্রাম এর উপ পরিচালক মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, এই ধরনের পণ্য মোড়কজাত করতে অবশ্যই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগবে এবং ল্যাব থাকতে হবে। যারা এরকম অবৈধভাবে পণ্য মোড়কজাত করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ