এদিকে কলেজ শাখার সহকর্মীদের দাবি, প্রভাষিকা সানজিদা মোখতার তানজিন এবং লুৎফুন্নেসা সিকদার জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৎকালীন মাউশি, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধান ড. গোলাম মাওলা, মাউশি'র সিনিয়র কর্মকর্তা প্রফেসর মোশাররফ হোসেন এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জসিমউদ্দিনের সহযোগিতায় এমপিওভুক্ত হয়েছেন। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে পরিচালনা কমিটির সভার কার্যবিবরণী পাল্টিয়ে তাঁরা দু'জন শিক্ষক নিয়োগকালীন সময় শিক্ষক নিবন্ধন পাশ না করেই এমপিওভুক্ত হয়েছেন। অভিযোগ আছে, কলেজ শাখা চালু করার পূর্বে দৈনিক আজাদীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে তাতে শর্ত ছিল শিক্ষক নিবন্ধন আবশ্যক।অন্যান্য আবেদনকারী যথারীতি শিক্ষক নিবন্ধন পাশের সনদ জমা দিয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু দু'জন আবেদনকারী প্রভাবশালী ব্যক্তির সুপারিশে শুধুমাত্র খণ্ডকালীন প্রভাষিকা হয়ে কিছুদিনের জন্য নিয়োগ পান। কিন্তু নিয়োগপ্রাপ্তির আট বছর পর এমপিওভুক্তির কার্যক্রম শুরু হলে পূর্বের পরিচালনা কমিটির রেখে যাওয়া সভার কার্যবিবরণী পরিবর্তন করে জালিয়াতির মাধ্যমে এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেন গভর্নিং বডির সভাপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তাঁদের নানা ফাঁকফোকর জানিয়ে দেন মাউশিতে ১৬ বছর ধরে কর্মরত কর্মকর্তা অধ্যাপক মোশাররফ। তাঁরা রিজ্যুলেশন খাতার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে এবং কিছু অংশে পূর্বের সিদ্ধান্ত বদল করে ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেন। মাউশির সিনিয়র কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের পরামর্শে প্রয়োজনীয় তথ্য যুক্ত করে ফাইল পাঠানো হয় মাউশি কার্যালয়ে। সভার মূল কার্যবিবরণীতে অনেক উলট-পালট হলেও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনকালে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক প্রধান ড. গোলাম মওলা তা দৃষ্টিতে না এনে এড়িয়ে যান। এ ছাড়া এমপিওভুক্তির জন্য যে দু'টি কমিটি করা হয়েছিল তারাও গোপন আঁতাত করে কোন কিছু বাছ-বিচার না করেই ফাইল অনুমোদন দেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সানজিদা মোখতার বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আমি আবেদন করেছি, তখনও শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা দেইনি, পরে অবশ্য পাশ করেছি। প্রথমে আমাকে রিজেক্ট করা হলেও পরে আমি মাউশি'র মোশাররফ স্যারের সহযোগিতায় ফাইল প্রস্তুত করে পাঠিয়েছি। ড. গোলাম মাওলা স্যার আমাকে সাহায্য করেছেন।শিক্ষক নিবন্ধন পাশ না করে কেন নিয়োগ পরীক্ষা দিলেন জানতে চাইলে লুফুরন্নেছা সিকদার বলেন, আমার বাবার সুপারিশক্রমে অধ্যক্ষ গিয়াসউদ্দিন আমাকে পরীক্ষা দেয়ার সুয়োগ দিয়েছিলেন। এক বছর পর শিক্ষক নিবন্ধন পাশ করেছি মাউশির সহযোগিতায় এমপিওভুক্ত হয়েছি। দেরিতে এমপিওভুক্ত হওয়া নিয়ে আহমউল্লা বলেন, আমার একবার এমপিও হয়েছিল। কোন কারণে তা বাতিল হয়ে যায়। সানজিদা মোখতার ঢাকায় তদবির করে আমার এমপিও এনে দিয়েছেন।
সাবেক অধ্যক্ষ ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, যে তিনজন এমপিওভুক্ত হয়েছেন তারা মূলত। প্রাতিষ্ঠানিক বেতনে নিয়োগ। আহমদউল্লাহ'র এমপিও হওয়ার কোন সুযোগ নেই, সানজিদা মোখতার ও লুৎফুন্নেছা সিকদারের শিক্ষক নিবন্ধন ছিল না। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অনুরোধ করায় নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে দিয়েছিলাম। তাঁরা কখনো এমপিও চাইবে না বলে আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আমি চলে আসার পর মাউশির পরিচালক ড. গোলম মাওলা ও মোশাররফ হোসেনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় রেজুলেশন উলট-পালট করে এমপিও হয়েছেন। এ ব্যাপারে আমি তদন্তের দাবি করছি।
অভিজ্ঞমহল বলছেন, শিক্ষা প্রশাসনে ঘাঁপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য দমাতে না পারলে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা কলুষিত হয়ে যাবে। প্রকৃতঅর্থে শিক্ষক যদি দুর্নীতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়ে শিক্ষকতা করেন তাহলে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হবে না। অবিলম্বে ব্যাপক তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতির বীজ উৎঘাটন করা জরুরি।
0 মন্তব্যসমূহ