সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ৬ সেকেন্ডের এক ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, রেখা রানী বড়ুয়ার নেতৃত্বে অজ্ঞত বেশ কয়েকজন লোক শিক্ষক জিনবোধি ভিক্ষকে কোতোয়ালি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে মারধর করছেন। এ সময় তাকে জুতা দিয়ে আঘাত করতেও দেখা যায়।
তবে এ ঘটনায় শিক্ষক ভিক্ষুর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি'র অভিযোগ তুলেছেন ওই নারী নেত্রী। তার দাবি, ধর্মীয় কাজে অংশ নিতে গেলে বৌদ্ধ মন্দিরের সভাপতি শিক্ষক জিনবোধি ভিক্ষু তার শাড়ি ধরে টান দেন। তিনি যৌন হয়রানির শিকার।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপের সাথে তার বক্তব্যের মিল পাওয়া যায়নি। ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষকের সাথে ওই নারীর তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। একপর্যায়ে ওই নারী ও শিক্ষক দু'জন দুজনের দিকে রুখে যান। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি হয়। তর্কের সূত্রপাত ধরেই শাড়ি টানার ঘটনাটি সংগঠিত হয়েছে। তাই বিশিষ্ট জনের মতামত, এ ঘটনায় যৌন হয়রানি পরিলক্ষিত হয়নি। পূর্বের বিরোধের কারণেই মূলত এ হামলার সূত্রপাত।
ড. জিনবোধি ভিক্ষু বলেন, 'অবৈধ, অনির্বাচিত এবং বৌদ্ধমন্দির জালিয়াতকারী ওরা। ওরা নির্বাচনের পরাজিত শক্তি। বৌদ্ধ মন্দিরকে কেন্দ্র তারা দীর্ঘদিন যাবত আমাদের বিরোধিতা করছেন। এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে।হাইকোর্ট থেকে জজকোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাদের অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। আমরা গুরুপূজার আয়োজন করি। এ বৌদ্ধ বিহারের আমি সভাপতি। ওরা কোনো ভক্ত বা গুরুজনদের ঢুকতে দিচ্ছে না। ওই সময়ে ওই নারী আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে নেয়। পুলিশ নিয়ে যখন গিয়েছি তখন মোবাইল ফেরত দিতে বাধ্য হয়েছে।' আমি শাড়ি ধরে টান দিয়েছি- ঠিক তখনই এমন নাটকের সৃষ্টি করেছেন।
যৌন হয়রানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি ৬৪ বছর বয়সী একজন শিক্ষক। উনি আমার বোন, উনার ছেলেমেয়ে মানুষ করেছি আমি। আমি যৌন হয়রানিতে জড়িত না। 'তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, বৌদ্ধ মন্দিরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা বৌদ্ধ মন্দির দখল করে রাজত্ব কায়েম করতে চায়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং ওই নারীর শাস্তির দাবিতে আগামী রবিবার নগরীর প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক সংস্থা (চসাস)। মানববন্ধনে সকল সচেতন নাগরিকদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানান তারা।
শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক সংস্থার সভাপতি সৈয়দ দিদার আশরাফী ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান এহতেসাম স্বাক্ষরিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা বলেন, বৌদ্ধ মন্দিরের নেতৃত্ব ও ভিক্ষু স্যারের একুশে পদক পাওয়াকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্র করছে একটি মহল। তারা তার রাষ্ট্রীয় এই মর্যাদাকে মেনে নিতে পারেনি। তাই পূর্বপরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রের জাল জাল বুনছেন বিপথগামী শত্রুরা। আমরা মনে করি, বৌদ্ধ বিহারে মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় কাজে এত লোকের উপস্থিতিতে কোন নারীর শ্লীলতাহানী করা সম্ভব নয়। তার ওপর এ হামলা উদ্দেশ্য প্রণোদিত, উদ্বেগজনক।
আমরা দেখেছি তর্ক থেকেই সংঘর্ষের উদ্ভব ঘটেছে। এর আগে কোন যৌন হয়রানীর ঘটনা ঘটেনি। তার বিপথগামী শত্রুরা নারী দিবসকে কেন্দ্র করে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাদের টার্গেটই ছিল নারী দিবস, যেন বাংলাদেশের সকল নারীর সমর্থন পাওয়া যায়।কোতোয়ালি থানা পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চসাস সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, নগরীর কোতোয়ালি থানায় দু’পক্ষই পাল্লাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, নিজের হাতে আইন তুলে নিতে কোনো ব্যক্তিকে কখনোই আইন উৎসাহিত করে না, তবুও যদি কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়, তা কেবলই অপরাধ। এ ক্ষেত্রে ওই নারী তাই করেছেন। যেখানে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে তার উপর হামলা হয়েছে- সেটি যে ফৌজদারি অপরাধ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই অভিযোগ নয়, মামলা গ্রহণ করে সুবিচার নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম ওবায়দুল হক বলেন, 'সেখানে একটি অনুষ্ঠান নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়। যাকে নিয়ে দ্বন্দ্ব তিনিই অনুষ্ঠানে আসেননি। দুপক্ষই লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সেগুলোকে সাধারণ ডায়েরি হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
0 মন্তব্যসমূহ