কিশোরগঞ্জে শিক্ষার্থী ছাড়াই চলছে ভেড়ভেড়ি কামাল উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসা, অবকাঠামো হ-য-ব-র-ল অবস্থা


বিশেষ প্রতিনিধিঃ

বরাদ্দের টাকা আত্মসাত, মোটা অর্থের বাণিজ্য করে গোপনে নিয়োগ দেয়ার পায়তারা, শিক্ষক কর্মচারীদের উপস্থিতি বেশি থাকলেও নেই কোন শিক্ষার্থী, পুরাতন টিনের ছাউনির নিচে দুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘর, নেই কোন অবকাঠামো উন্নয়ন।  "কাজীর গরু কিতাবে থাকলেও, গোয়ালে নেই" কাগজে কলমে শিক্ষার্থীদের নাম দেখা গেলেও বাস্তবে তা পাওয়া যায়নি। সব মিলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

এমন দৃশ্য দেখা যায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার ভেড়ভেড়ি কামাল উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসায়। বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) বেলা ১১টায় সরেজমিনে ওই প্রতিষ্ঠানে গেলে জানা যায়, এবতেদায়ী  থেকে দাখিলস্থরে এই মাদ্রাসাটি স্থাপিত হয়েছে ১৯৮৭ সালে, যার কোর্ড নং-১৪৮০৩৮। কিন্তু অসাধু কিছু লোকজনের কারণে প্রতিষ্ঠানটির এই বেহাল অবস্থা। উপরোক্ত এসব অভিযোগ ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয়দের। নাম বলতে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যক্তি জানান, শিক্ষক কর্মচারীরা আসে কিন্তু ছাত্র ছাত্রী না থাকায় ক্লাস হয় না তাই তাড়া চলে যায়, আসা যাওয়ার তাদের চাকরি।


মাদ্রাসার তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এখানে মোট শিক্ষার্থী ২৬২ জন। এবতেদায়ীতে ১০৮ জন, দাখিল শাখায় ১৫৪ জন। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও পাওয়া যায় মাত্র ৪ জনকে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ৬ষ্ট শ্রেণীতে দুইজন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস চালাচ্ছেন এক শিক্ষিকা, নবম শ্রেণির অপর দুইজন শিক্ষার্থী বসে আছে তাদের ক্লাসরুমে মেতেছে তারা খোশগল্পে। এবতেদায়ীতে ৩ জন, দাখিল শাখায় ১২ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারী দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রায় দিনেই অনুপস্থিত থাকায় খেয়ালিপনায় চলে বাকি শিক্ষকরা।

টিনসেটের ঝুঁকিপূর্ণ এই পুরাতন ঘর দুটির উপরে তাকালে আকাশের তাঁরা দেখা যায়। এমনকি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অফিস কক্ষের দেয়ালে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। এছাড়াও টয়লেট নির্মাণ ও পুরাতন টিন সংস্করণের জন্য ২০২১-২২ অর্থ বছরের গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় এমপির বিশেষ বরাদ্দ টিআর/নগদ অর্থ হিসেবে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পেলেও নামে মাত্র কাজ দেখিয়ে অর্থ লোপাট।

অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার এডহক ও বর্তমানে নিয়মিত কমিটির সভাপতি হিসেবে স্থানীয় এমপির চাচাতো ভাই থাকার পরও কোন প্রকার উন্নয়নের ছোঁয়া দেখা যায়নি। মাদ্রাসার গোপন সূত্রে জানা গেছে, বড় আশায় এমপির চাচাতো ভাইকে কমিটির সভাপতি করেও এখনো কোন বরাদ্দ বা একাডেমিক ভবনের মুখ দেখতে পারেনি তাঁরা। তিনটি শূন্য পদে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানান অভিযোগের একটি ভিডিও ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। গত শুক্রবার ১৩ অক্টোবর উক্ত মাদ্রাসায় তিনটি শূন্য পদে নিয়োগের কথা থাকলেও কোন কারণবসত তা ভেস্তে যায়। ওইদিন পুটিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটনের সেই অভিযোগের ভিডিওটি ভাইরাল হয়। 

ইউপি চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটন জানান, ওটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতো নয়, জুয়াচুরির আড্ডাখানা। আপনারা(সাংবাদিকরা) পারলে নিউজ করেন, কি হবে আমি দেখবো। মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নুহু ইসলাম অভিযোগের বিষয় গুলো এড়িয়ে যান এবং নিউজ করলে ক্ষতি হবে বলে তিনি অনুরোধ করেন। এদিকে মাদ্রাসার সভাপতি রাজিবুল আহসান এর সাথে একাধিক বার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এবিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এটিএম নুরুল আমিন শাহ্ এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, আমি কয়েকদিন আগে গিয়েছিলাম। মাদ্রাসার যা অবস্থা আমার রিপোর্ট করা ছাড়া উপায় নেই। এখন প্রতিষ্ঠানটির অবস্থা খুবই লাজুক তিনটি পদে নিয়োগ দিতে গিয়ে, তাদের ওখানে গন্ডগোল শুরু হয়েছে। তাছাড়া সুপার দীর্ঘদিন ধরে সাসপেনশন অবস্থায় ছিল হাইকোর্টে মামলাও হয়েছিল অনেক কাহিনী আছে। এছাড়াও তাদের সতর্ক করেছি তাড়াতাড়ি সমাধানের জন্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ