আব্দুল আলীম নোবেলঃ
কক্সবাজার সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে কিছু কুচক্রি মহল। বাঁকখালীর নদীর মহোনা,চৌফলদন্ডী,পোকখালী, তেঁতিয়া নদী ও খালে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করা হলেও রহস্যজনক কারণে নিরব রয়েছে প্রশাসন। চলমান বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের বালু বাণিজ্যের কারণে অবৈধ বালু সিন্ডিকেট অনেকটা প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বালি উত্তোলনের কাজে ব্যবহার হচ্ছে অবৈধ ভলগেটও। চরম দায়সারা মনোভাব বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের । বাঁকখালী নদীসহ বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ড্রেজার ম্যাশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হলে নেপথ্যে রয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক নয়ন শীল বালু উত্তোলনকারী এই সিন্ডিকেটের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধার নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে তার বিরুদ্ধে। প্রতি সপ্তাহে একবার এসে এই উপরি সুবিধা নেন বলেও অভিযোগ নয়ন শীলের বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডী খাল, তেতৈয়া খাল, পোকখালী খাল, মুক্তারকুল খাল, ছমুদা ব্রীজ ও চৌফলদন্ডী বড় ব্রিজ সংলগ্ন স্থান এবং বাঁকখালী নদীর মহোনা নাজিরার টেক থেকে লম্বা বড় নল বসিয়ে নির্বিকারে বালু উত্তোলনের চিত্র দেখা গেছে।
এখানে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় শাহাজাহান মিয়া, শাহজাহান মেম্বার, আদিল এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারি গিয়াস উদ্দীন, বাবুল, মোস্তফাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছের মানুষ রয়েছে এই সিন্ডিকেটে। অপর দিকে
বলাকা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী চট্টগ্রামের বাসিন্দা গিয়াস উদ্দীন জানিয়েছেন স্থানীয় কিছু লোকজনকে বালি উত্তোলনের সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমন বক্তব্য দেওয়া হলেও বালু উত্তোলণে কাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটি খোলশা করেনি তিনি ।
তবে বালু উত্তোলনের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএর কোন ধরনের অনুমোদন নেই বলে জানিয়েছেন ট্রাফিক সুপারভাইজার আজাদ হোসেন, এছাড়া তিনি আরো জানিয়েছেন, আমাদের লজিস্টিক সাপোর্ট থাকলেও অভিযানের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট না থাকায় আমরা সঠিক সময়ে অভিযান করতে পারিনা। এর মাঝেও এ্যাসিলেন্ড ও ইএনও দিয়ে একাধিক অভিযান পরিচনা করেছি। আমার বক্তব্যটি ছাপাতে উপ-পরিচালকের অনুমতি নেওয়ার অনুরোধ রইল।
উপ-পরিচালক নয়ন শীলের দায়সারাভাবে বক্তব্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশের কথা বলে ভারত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার কথা বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
বক্তব্য নেওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার অফিসে একাধিকবার গিয়েও বক্তব্য নেওয়ার সম্ভব হয়নি, অপর দিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডক্টর আব্দুল হামিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদকের বক্তব্য মোবাইল ফোনে শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ(বিআইডব্লিউটিএ)এদের প্রধান দায়িত্ব এটি, এর মাঝেও এসিল্যান্ড এবং আমার নেতৃত্বে অনেকবার অভিযান পরিচালনা করেছি। আসলে কাজের পরিধি বেশি হওয়ায় তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনা করা অনেকটা সম্ভব হয় না। এর পরেও এসিল্যান্ডকে দিয়ে অভিযান পরিচালনার ব্যবস্থা করবো।
সহকারী কমিশনার ভূমি সদর উপজেলা, কক্সবাজার মো: জিল্লুর রহমান বলেন,বিআইডব্লিউটিএর লোকজনকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে কয়েক লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করেছি, অনেক মালামালও জব্দ করেছি, বালি উত্তোলনের খবর পেলে প্রয়োজনে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, এই এলাকায় নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্বিকারে বালু উত্তোলন করে চলেছে। এতে নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষি জমি ও বসতভিটাও পড়েছে হুমকির মুখে। পাশপাশি মেশিনের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আশপাশের মানুষেরা। অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা ক্ষমতাসীন ব্যক্তি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উপজেলার বেশ কিছু স্থানে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ওইসব স্থানে ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টরের সারিবদ্ধভাবে আনা-নেয়ার লম্বা লাইন দেখে যে কারো মনে হবে যেন অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহাউৎসব চলছে।
আর যত্রতত্র ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে রাস্তাঘাট ও বাঁধ নষ্ট হয়ে একদিকে যেমন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
শুধু তা নয়, সড়ক দিয়ে বে-পরোয়া ভাবে ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচল করায় দুর্ঘটনাও ঘটছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী তাদের চলাচলের রাস্তাঘাট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নষ্ট হওয়ায় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি। বালুদস্যুরা অসাধু কিছু লোকের সাথে আতাঁত করে নির্বিচারে বালু ব্যবসা করে আসছে।
বালু উত্তোলনের বিষয়টি সতত্য স্বীকার করে চৌফলদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান,ওইসব স্থানে বালু উত্তোলন বন্ধের প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
(ইউপি) সদস্য শাহজাহান বালি উত্তোলনের সাথে জড়িত নেই বলে দাবী করেন তিনি।
0 মন্তব্যসমূহ