এ সুযোগে হাসপাতালটির কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা শুরু থেকেই লুটপাঠে জড়িয়ে পড়ে। নিয়োগ বাণিজ্য ও ঔষধ সহ মালামাল চুরি, কমিশন বাণিজ্য থেকে শুরু করে হরেক রকম অপকর্ম। UNFPA প্রদত্ত গাড়ী যথাক্রমে প্রতিটি টমটম থেকে কমিশন বাবদ নেয়া হয়েছে ১৫ হাজার টাকা ( মাসিক) হারে, বাস থেকে নেয়া হচ্ছে মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং টি আর এক্স মাইক্রোবাসেও একই। হাসপাতালের এম্বুলেন্সগুলো রোগী আনা নেয়ার চাইতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত কাজেই ব্যবহার হয় বেশি। হাসপাতালের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে ষ্টাফের চাহিদাও বাড়তে থাকার সুযোগে প্রায় ২ শতাধিক কর্মচারী কোন প্রকার নীতিমালা ছাড়াই নিয়োগ দেয়া হয়। অবৈধ পহ্নায় নিয়োগ এসব কর্মচারীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। শুধু নিয়োগেই ক্ষান্ত নন তারা, ৬ মাস ব্যবধানে চাকরিতে পূন:নিয়োগের কথা বলে বেতনের ধরণ অনুযায়ী নানা প্রলোভনে প্রতিজনের কাছথেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন পরিমাণের অর্থ। যারা এসব অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে তাদের কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই চাকরী ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। দাতা সংস্থার দেয়া কন্সট্রাকশন বাজেটের অধীনে রত্না পালং বার্থ সেন্টারের দেয়াল নির্মাণ বাবদ কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ ধরনের আরো অসংখ্য দূর্ণীতির গ্যাড়াকলে যুক্ত হতে থাকে হোপ ফাউন্ডেশন।
সর্বশেষ প্রতিষ্টানটির সর্বোচ্চ পর্যায়ের দাতা সংস্থা UNFPA এর উর্ধতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনে তাদেরকে কয়েকবার সতর্ক করলেও প্রতিষ্টানটির দূর্নীতিবাজরা তাতে কর্ণপাত করেনি, বরং রোগীদের জন্য UNFPA, WHO, UNICEF থেকে অর্থ ও ঔষধ সরবরাহ থাকলেও রোগীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে চিকিৎসার বিনিময়ে ঔষধ পত্রাধি।
এসব বিষয়ে স্থানীয় কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সংস্থাটির সিনিয়র ম্যানেজার শওকত আলী ও ফিল্ড কো অর্ডিনেটর শাহনাজ বেগম রীতিমতো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন,এবং শুরু করেন সাংবাদিক ম্যানেজ সহ স্টাফদের সাথে অসংলগ্ন আচরণ।এমনকি তারা নানা প্রকার খুঁনসুটি ও দুর্ব্যবহারও বাকী রাখেননা তারা। কর্মচারীদের নিজ দাসের ন্যায় মনে করেন এরা। দীর্ঘদিনের অভিযোগ দাতা সংস্থা গুলো প্রতি ৩ মাস অন্তর হাসপাতালে অর্থ বরাদ্দ দিলেও নির্দিষ্ট সময়ে কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধে কার্পণ্য করেন।এমনকি বেতন ভাতা চাইতে গেলে গালিগালাজ সহ নানা অপবাদ শুনতে হয়।নিন্ম পদের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এমন বৈষম্য করা হলেও সিনিয়র কর্তারা ঠিকই মাসের বেতন মাসে পান।
দাতা সংস্থার তদন্তে এসব অভিযোগ স্পষ্ট হলে গত ৩১জুন থেকে হোপ ফাউন্ডেশনের সাথে সকল প্রকার চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করে। কোন প্রকার অর্থ ছাড়ে অস্বীকৃতি জানায় দাতা সংস্থা গুলো।তাদের ভাষ্য আমরা হোপ ফাউন্ডেশনের সাথে আর কোন কাজে রাজি নই।এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত ১আগষ্ট হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদুজ্জামান ও সিনিয়র ম্যানেজার শওকত আলী UNFPA এর কক্সবাজারস্থ ওয়ারহাউজে গিয়ে ওখানকার ম্যানেজারকে অকথ্য ভাষায় গালগালাজ ও বৈদ্যুতিক তার খুলে ফেলাসহ সামনের রাস্তা কুড়ে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে আসে। এ ব্যপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের অরিরিক্ত সচিব সহ সরকারে বিভিন্ন দপ্তরে ওয়ার হাউজের সরবরাহ কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান নিরাপত্তা চেয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। যার স্মারক নং আঞ্চ: পণ্যা:/কক্স/২৩/।
এদিকে, দাতা সংস্থার সাথে চুক্তি ও অনুদান বন্ধ হওয়ায় প্রতিষ্টানটি মুখ থুবড়ে পড়ে। এবার শুরু হয় দূর্নীতিবাজ ৩ কর্মকর্তার নতুন আয়নাবাজি। কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে তারা সকল কর্মচারীদের দুই মাসের বিনা বেতনে ছুটির কথা বলে ছাটাই করলেও বিগত ৩/৪ মাসের কোন বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করেনি বলে জানায় সংস্থাটিতে কর্মরত অধিকাংশ কর্মচারী। তাদের দাবি আবারও কান্ট্রি ডিরেক্টর বর্তমানে ২ শতাধিক কর্মচারীর স্থলে ১০/১৫ জন কর্মচারীকে চাকরীতে বহাল নিয়োগ বানিজ্য চালাচ্ছে।
হোপ ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত বার্থ সেন্টারগুলোর প্রায় শতাধিক কর্মচারীও চাকরী হারিয়ে ২ মাসের বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছে। চাকরী না থাকায় তারা অনেকটা দিশেহারা।এমনকি আরেকটি এনজিওতে চাকরীর পরীক্ষা দিলেও সেখানেও হোপ ফাউন্ডেশনের ঐসব অসাধুরা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া পন্ডে স্থানীয় কয়েকটি নিউজ পোর্টালকে ব্যবহার করেন তারা। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ সহযোগীতাকারী ডা: সিফাত, ডা: আল আমিন ও ডা: আশিক কে নিয়ে সম্পুর্ন ভুয়া একটি খবর প্রচার করে যার কারনে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয় এনজিও সংস্থাটি। এতে করে সম্পুর্ণ অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় শতাধিক চাকরী প্রার্থীর জীবন জীবিকা। হোপ ফাউন্ডেশনের কথা হলো তারা বেতন ও দিবেনা, অন্য কোথাও চাকরীও করতে দিবেনা এমন অভিযোগ কর্মচারীদের।
তারা জানান এখন দূর্বিষহ জীবন পার করছেন। বিষয়টির ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণেন জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার সিভিল সার্জন ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের হস্থক্ষেপ চেয়ে কক্সবাজার শহরে প্রায় ৩ শতাধিক ভোক্তভূগী ও চাকরী ফেরত প্রার্থী মানববন্ধন করেছেন।
উল্যেখিত বিষয়ে হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, আমরা দাতা সংস্থার টাকা পাওয়ার আগে কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ করতে পারিনা। তারা টাকা দিলে তবেই আমরা তাদের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করি।
0 মন্তব্যসমূহ