মোঃ মনছুর আলম (এম আলম): 'ঝুঁকিপূর্ণ ও ফিটনেস বিহীন' আখ্যা দিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও বিআরটিএ নগরীতে হিউম্যান হলার গাড়ী চলাচল বন্ধ ঘোষণা করলেও আবার তা সংস্কার করে ফিরেছে নতুন রূপে। তবে নগরীতে যে হিউম্যান হলার চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়, পরে সেসব অন্য রুটে চলাচল নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। নগরীতে বন্ধ করে দেওয়া এমনই হিউম্যান হলার অধিকাংশ এখন কথিত মিনিবাস রূপে পটিয়া থেকে নতুন ব্রীজ রুটে চলছে অবাধে।
চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবৈধ পরিবহনের সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। রুট পারমিট নেই, নেই ফিটনেস আর লাইসেন্স। তবুও এসব পরিবহন চলছে বিরামহীন ভাবে। প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র বিহীন লক্করঝক্কর গাড়ি সড়কে দিব্বি চলাচল করলেও দেখার যেন কেউ নেই। তবে শীগ্রই এসব পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
পটিয়া টু নতুনব্রীজ প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন হচ্ছে ট্রাফিক আইন। যানবাহনের মালিকেরা ট্রাফিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অদক্ষ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহীন চালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিচ্ছেন। ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তা উপেক্ষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। যানবাহনের ত্রুটি ও লাইসেন্স সংক্রান্ত সকল বিষয় দেখার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের হলেও দায়িত্ব নিয়ে চলছে অবহেলা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নতুনব্রিজ থেকে পটিয়া শান্তির হাট ও বাদামতল গামী অধিকাংশ কথিত মিনিবাস চালকদের মধ্যে বেশীর ভাগই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এসব পরিবহনের নেই কোনো রেজিস্ট্রেশন ও চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স। এসব কথিত মিনিবাস চালকদের বেশীরভাগ অদক্ষ ও দ্রুত গতিতে মিনিবাস চালানোর কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এছাড়াও এই মিনিবাস যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে বিপাকের পড়ছে পথচারীরা। বেশীরভাগ সময় সড়কে জ্যাম সৃষ্টি করে যাত্রী উঠানো হয়।
সরেজমিন আরো দেখা গেছে, এসব কথিত মিনিবাসে যাত্রী ধারণক্ষমতা ২৬ জন। কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকে আরও ৪-৫ যাত্রী। সামনে চালকের পাশের বসানো হয় আরও কয়েকজনকে। সব মিলিয়ে ৩০-৩২ জন যাত্রী, একজন চালক ও তাঁর সহযোগী নিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ব্যস্ততম সড়কে চলছে প্রতিটি কথিত মিনিবাস। যাত্রীপ্রতি ৪০ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়। কোনো নির্দিষ্ট স্টপেজ নেই, যাত্রী ওঠানো-নামানো চলে সব সড়কেই। কখনো যাত্রী নেমে গেলে চালকের সহকারী হাতের ইশারায় যাত্রী তোলেন। আবার যাত্রীর ইশারায় কথিত মিনিবাস থামিয়ে ফেলেন এর চালক।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পটিয়া টু নতুন ব্রীজ রুটে শতাধিক বাস-মিনিবাস চলাচল করে। এসবের মধ্যে বেশির ভাগ চালকেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকে না। রাজনীতি-সংশ্লিষ্টরা এর সঙ্গে জড়িত।
এসব কথিত মিনিবাস গুলোর চালকদের মধ্যে শামশু বলেন, মিনিবাস চলাচলের পথে ট্রাফিকে ধরলে মালিক সমিতির নেতারকে ফোন দিলে চা-পানির টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন। মালিকদের মধ্যে লিটন বলেন, পটিয়া টু নতুন ব্রীজ রুটে তার একটি মিনিবাস রয়েছে। তবে নেই কোন বৈধ কাগজপত্র। এরজন্য মালিক সমিতিকে দৈনিক ২০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয় বলে জানান। এদিকে মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ ইউনুসের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ২০০ টাকা করে চাঁদার কথা অস্বীকার করেন। এবং তার সমিতিতে কোন অবৈধ যানবাহন নেই বলে দাবী করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন পরিবহনের ব্যানারে পটিয়া টু চট্টগ্রাম নতুনব্রীজ চলাচলরত অধিকাংশ বাসের রুট পারমিট, টেক্সটোকেন, ইনস্যুরেন্স ও ফিটনেস সাটিফিকেট নেই। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলেও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গাড়িগুলো চলছে বীরদর্পে।
এপ্রসঙ্গে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগের মোটরযান পরিদর্শক তীর্ত প্রতীম বড়ুয়া মুঠোফোনে জেলা কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। জেলা মোটরযান পরিদর্শক ইকবাল আহমেদ বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতেছি। এধরণের কোন তথ্য পাওয়া মাত্র আমরা ব্যবস্থা নেব।
0 মন্তব্যসমূহ