আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, ‘যতদিন বাংলার জনগণ আওয়ামী লীগের সাথে আছে ততদিন কোনো বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না।’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বিদেশি প্রভুর ষড়যন্ত্রে লাফালাফি করে কোনো লাভ হবে না। বঙ্গবন্ধু জীবনে কারো কাছে মাথা নত করেননি, মৃত্যুর ভয়ে ভীত হননি। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও জয়গান গেয়েছেন। তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। তিনিও বারবার মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গেয়ে গেছেন। এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার সৈনিক আমরা, কর্মী আমরা। আমাদের ভয় দেখান। আমরা রাজপথে লড়াই করে এই পর্যায়ে এসেছি।’
দলের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার বিকালে সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আজকে আবার নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আমরা দেখছি, এখন কিছু বিদেশি আমাদের মানবতা, গণতন্ত্রের সবক দিচ্ছেন, পাঠশালা খুলে বসেছেন। এই দেশে গণতন্ত্র, মানবতার পাঠশালা খুলেছেন কাদের নিয়ে? ওই বিএনপি-জামায়াত। যারা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর কোথায় ছিল গণতন্ত্র, কোথায় ছিল মানবতা? শুধু নৌকায় ভোট দেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। ১০ হাজার মা-বোনকে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল।’
‘আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়াকে প্রকাশ্য জনসভায় বোমা মেরে হত্যা করা হয়েছিল। তখন কোথায় ছিল আইনের শাসন। জনপ্রিয় এমপি আহসানউল্লাহ মাস্টারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, নাটোরের এমপি মমতাজ উদ্দিন আহমেদকে কুপিয়ে, খুলনার অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমামকে হত্যা করা হয়েছিল বোমা মেরে। সাতকানিয়ায় এক বাড়িতে ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তখন কোথায় ছিল গণতন্ত্র, কোথায় ছিল আইনের শাসন’,- প্রশ্ন রাখেন তিনি।
‘আওয়ামী লীগকে কেউ গণতন্ত্রের সবক দিতে হবে না’, উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা (বিদেশি) গণতন্ত্র ও মানবতা হরণকারীদের নিয়ে পাঠশালা খুলে গণতন্ত্রের সবক দেন। আমাদের সবক দিতে হবে না। আমাদের বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মিয়ানমারের ১০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে পৃথিবীতে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। এরপর আর কোনো মানবতার সবক আমাদের দেখানোর আর দরকার নেই।’
হানিফ বলেন, ‘বিএনপি নেতারা খুব উৎসুক, খুব উজ্জীবিত। ভয় দেখাচ্ছেন। আমাদের আন্তর্জাতিক শক্তির ভয় দেখাচ্ছেন। আওয়ামী লীগকে, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চান। আপনারা কাকে ভয় দেখান? বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক আমরা। জননেত্রী শেখ হাসিনার কর্মী আমরা।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি ইতিহাসের নাম। এখন আর শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, অনুভূতির নাম। কারণ, এই দেশের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে যা কিছু অর্জিত হয়েছে তা হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।’
হানিফ বলেন, ‘১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পৃথক দু’টি ভূখণ্ড নিয়ে প্রতিষ্ঠা পায় পাকিস্তান। এর একটি ভূ-খণ্ড ছিল পূর্ব পাকিস্তান এবং আরেকটি ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। শুরু থেকেই আমরা ছিলাম পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী। শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণ এবং তাদের কার্যকলাপের কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝেছিলেন এই স্বাধীনতা বাঙালি জাতির জন্য নয়, এই স্বাধীনতায় বাঙালির অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে না, অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। তারপরেই ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করে বাঙালি জাতির অধিকারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম শুরু করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৫৬’র শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয় দফা ঘোষণার মধ্য দিয়ে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা মুক্ত হওয়ার পর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়ার পর একাত্তরের ৭ই মার্চ জাতির পিতা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। আমরা নয় মাস যুদ্ধ করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এই স্বাধীনতা কারো দয়ায় আসেনি। এই স্বাধীনতা এসেছিল জাতির পিতার নেতৃত্বে। এই স্বাধীনতার একমাত্র দাবিদার জাতির পিতার হাতে গড়া আওয়ামী লীগ, অন্য কারো নয়।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ার পূর্বেই জাতির পিতাকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর এই দেশ উল্টোপথে চলেছিল। জাতির পিতার কন্যা দেশে ফিরে আসার পর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেছিলেন। গণতন্ত্র, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। দেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে চরম দারিদ্র্য দেশ আজ আন্তর্জাতিকভাবে উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত। মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ, মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সবকিছু অর্জিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।’
আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের নেতাকর্মীদের শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক চক্রান্ত আর এই দেশের যুদ্ধাপরাধীদের দোসর বিএনপিকে মোকাবিলা করে নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় এনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
বিডি প্রতিদিন
0 মন্তব্যসমূহ