মো. কামরুল ইসলাম কামু, পঞ্চগড়ঃ
হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত পঞ্চগড়ের সীমান্তবতর্ী উপজেলা তেঁতুলিয়ার উপড় দিয়ে বয়ে গেছে মহানন্দা নদী।যে নদীটি ভারত থেকে উৎপত্তি।যুগ যুগ ধরে পাথরের সাথে মিশে আছে এ এলাকার বিপুল জনগোষ্ঠি। তেতুঁলিয়ার ডাকবাংলো ঘেঁষে নদীটির অবস্থান। নদীটি বাংলাদেশের ভ্থ-খন্ডের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে।দীর্ঘকাল ধরে মহানন্দার পাথর সারাদেশের রাস্তা- ঘাট, দালান, বাড়িসহ বিভিন্ন নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সূত্র থেকে জানা গেছে, ভারতে উৎপত্তি হয়ে প্রচুর পরিমাণে নুড়ি পাথর আর সিলিকন বালি নিয়ে ১৮ কিলোমিটার প্রবাহিত এই নদী। এই নদীতে থাকা পাথর-বালির এই সম্পদকে ঘিরে জীবন নির্বাহ করছেন প্রায় ৩০ হাজার পাথর শ্রমিক।দিন দিন নদীটির বুকে পাথরের খনি কমতে শুরু করেছে। আগে বড় আকারের পাথর পাওয়া গেলেও এখন অত্যন্ত ছোট আকারের পাথর পাওয়া যাচ্ছে।ফলে চিন্তার ছাপ পড়েছে পাথর শ্রমিকের চোখে-মুখে।
এছাড়া শুধু মহানন্দাই নয়, করোতোয়া এবং ডাহুক নদী থেকেও পাথর উত্তোলন করছেন হাজার হাজার শ্রমিক। করোনা সংকটকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব নদী থেকে পাথর উত্তোলন করে পরিবারের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করছে শিক্ষার্থীরাও। এসব নদীর পাথর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। পাথরের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সংশ্লিষ্ট এসব মানুষ হতাশায় পড়েছেন।
তারা বলছেন, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় পাথর কমে যাচ্ছে। কারণ নদীর স্রোতে এসব পাথর ও নুড়ী বালি ভেসে আসে। অন্যদিকে পানি কমে যাওয়ায় নদীগুলোতে চাষ করা হচ্ছে বোরো ধান। এ কারণেও নদী থেকে পাথর উত্তোলন করা যাচ্ছে না।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে এই শ্রমিকেরা প্রতিদিন ভোরে নদীর পানিতে নেমে পড়ে। পাথর তোলার জন্য তারা ট্রাকের টিউব, কোদাল ব্যবহার করে। তারপর নদীর জলে ডুব দিয়ে উত্তোলন করেন পাথর এবং বালি। একসময় সারাদিন খেটে খুটে আয় হতো ৯শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। এই দিয়েই সংসার চলতো তাদের। বর্তমানে আয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। একজন শ্রমিক আয় করছেন মাত্র ৩’শ থেকে ৪’শ টাকা।
উপজলার মহানন্দা নদী তীরবর্তি গ্রাম সর্দার পাড়ার মোস্তফা কামাল (৫৫) জানান, প্রায় ৫০ বছর ধরে এই নদীতে পাথর উত্তোলন হচ্ছে। হাজার হাজার শ্রমিক পাথর তুলে সংসার চালান। বাপ দাদার আমল থেকে এই নদীতে পাথর তুলে আমাদের সংসার চলে।
এখনকার অবস্থা আগে কখনও দেখিনি। আগে বড় বড় পাথর পাওয়া যেতো। সারা দিনে আয় হতো হাজার টাকা। এখন নদী শুকিয়ে যাচ্ছে। পাথর পাওয়া যাচ্ছে না। আয় কমে গেছে। জিনিস পত্রের দাম বেড়ে গেছে। সংসারে টানাটানি চলছে।
ভজনপুর এলাকা থেকে ২০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে পাথর তুলতে যান আনোয়ার“ল ইসলাম (৪২)। তিনি জানান, আগে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টায় ৩০ থেকে ৪০ সিএফটি পাথর তুলতাম। এখন সারাদিন কাজ করে ১৫ থেকে ২০ সিএফটি পাথর পাওয়া যায়। তাও গুড়ো পাথর। গুড়ো পাথরকে বলা হয় চিপ আর গ্রিবেল। এসব পাথরের দাম কম। আগে পাথর শ্রমিকও কম ছিলো। এখন শ্রমিকের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। আয় রোজগার আগের থেকে অনেক কমে গেছে।জানা গেছে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরাও অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন,নদীটিতে শুকনো মৌসুমে নদীতে বলতে গেলে পানি থাকে না। পািনর স্রোতও কমে যায়। তাই পাথর কম পাওয়া যায়। বর্ষা মৌসুমে আবার বেশি পরিমাণে পাথর পাওয়া যাবে। তবে আমরা পাথর শ্রমিকদের ইউনিয়ন ভিত্তিক সেবা প্রদান করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো।
0 মন্তব্যসমূহ