অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চাই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শান্তির ব্যতিক্রমী প্রচারণা


মোঃ কামরুল ইসলাম কামু, পঞ্চগড়ঃ
 

পঞ্চগড় সদর উপজেলার আমলাহার গ্রামের সাইফুল ইসলাম শান্তি এবার অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে নেমেছেন। শান্তি দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। বিভিন্ন সময়ে সমাজের নানা অসঙ্গতি নিয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে সব সময় আলোচনায় থেকেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। এর আগে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসনের জন্য ঢাকায় একাই মানববন্ধন করেছিলেন এই তরুণ। ২০১৯ সালে পদ্মাসেতুর গুজবের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ পায়ে হেঁটে পদযাত্রা করেন। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে সামনে পেছনে প্লাকার্ড, মাথায় ‘ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই’ ‘লেখা সম্বলিত টুপি পরে নিজের হ্যান্ড মাইকে প্রচারণা শুরু করেন।শান্তি বলেন, যদি আগামীতে আবারও হিন্দুদের ওপর হামলা করা হয় তবে আমি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে আমরন অনশনসহ আরও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।তিনি হিন্দুদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ‘যারা হিন্দুদের জান মাল, ঘরবাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে বা ভবিষ্যতে যদি কেউ আবার এধরনের হামলা করে তবে এদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুুদন্ডের বিধান রেখে সংসদে আইন পাস করার জোর দাবি জানাচ্ছি। সরকারকে বলবো জরুরি ভিত্তিতে পার্লামেন্ট অধিবেশন ডেকে এ আইন পাস করুন ও দ্রুত তা কার্যকর করুন

শান্তি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি "অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই" কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হয়েছি। তারপরও শহর জুড়ে আমি কর্মসূচী পালন করেছি। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের জানমাল, বাড়ি ঘর ও মন্দিরের ওপর যে নারকীয় হামলা চলছে তার জন্য আমি একজন মুসলিম মানুষ হয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।  সেই সাথে  এ ধরনের বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও দোষীদের শাস্তি দাবি করছি। বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। বাংলাদেশ রবীন্দ্রনাথের দেশ, কাজী নজরুলের দেশ। বঙ্গবন্ধুর গড়া অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে হিন্দু মুসলিম, বৌদ্ধ খ্রীস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ জন যুগ যুগ ধরে একসাথে বাসবাস করে আসছে। 

এ দেশে একধর্মের মানুষ আরেক ধর্মের মানুষের শত্রু হতে পারে না। মুসলিম ভাই বোনদেরকে বলতে চাই দয়া করে কেউ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনকে ধর্মীয় শত্রু ভাববেন না।  তারাও আমাদের মত সৃষ্টির সেরা জীব। এই হিন্দুদেরকেও মহান আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন। আমাদের ইসলাম ধর্মের কোথাও লিখা নেই যে অমুসলিমদের প্রতি খারাপ আচরণ করতে হবে, তাদের পূজা মন্দির আক্রমণ করতে হবে। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দিতে হবে। এটা কোথাও লিখা নেই।  আর আমাদের ইসলাম ধর্ম কখনো এধরনের অন্যায় দাবিকে সমর্থন করে না। কোন অমুসলিম প্রতিবেশি অসুস্থ হলে তার সেবাযতœ করাকেও ইসলাম নিষেধ করেনি। বরং কোন অমুসলিম রোগীকে দেখতে যাওয়া সুন্নাত। 

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) নিজে অমুসলিম প্রতিবেশি রোগীদের দেখতে যেতেন। এর মানে হচ্ছে আমাদের নবী কারীমও  কখনো অমুসলিমদের ওপর জুলুম নির্যাতন করতেন না এবং  তিনি জুলুম নির্যাতনও পছন্দ করতেন না।আমি একজন মুসলিম। আমার ধর্ম ইসলাম। সুতরাং আমার ইসলাম ধর্মের অবমাননায় আমারো কষ্ট লাগে। আমারও অনুভূতিতে আঘাত লাগে। আমি মুসলমান ভাই বোনদের অনুরোধ করবো কেউ যদি আমাদের ইসলাম ধর্ম কে অবমাননা করে বা আমাদের পবিত্র কুরআন মাজিদ অবমাননা করে বা  আমাদের প্রিয় নবী করিম ( সাঃ) কে অবমাননা করে তবে আপনারা তার জন্য শান্তিপূর্ন পরিবেশ বজায় রেখে সরকারের কাছে বিচার দাবি করবেন, পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করবেন। অবশ্যই সরকার তার বিচার করবেন। দোষীদের শাস্তি দিবেন। 

কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে নিজে নিজে এজন্য দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে বর্বরতা করতে পারিনা। যদি করি তাহলে আমরা মুসলমান না, মানুষও না। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি অর্জনে সংখ্যালঘুদের অবদান রয়েছে। এ দেশের গোড়াপত্তন বর্তমান সংখ্যালঘুরাই করেছে। দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, দেশের জন্য ফাঁসিতে ঝুলেছে, সায়ানাইড খেয়েছে এই সংখ্যালঘুরাই। আমরা কারোর উসকানিতে বা গুজবে কান দিয়ে অন্য ধর্মের মানুষের বাড়ি ঘরে আক্রমণ করতে পারি না। কারোর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালাতে পারি না, কাউকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ও ধর্মচ্যুত করতে পারি না। হিন্দুরাও মানুষ তাদেরকেও আমাদের মত স্বাধীন ভাবে  ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করার ও নিরাপদে বসবাস করার অধিকার রয়েছে। আসুন সবাই হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীস্টান সবাই একসাথে মিলেমিশে বসবাস করি এবং দেশের কল্যানে কাজ করি।মুসলিমদের বলবো সবাই বুকে হাত দিয়ে বলুন তো অন্যায় ভাবে গুজবে কান দিয়ে কাউকে নির্যাতন করা, কারোর বাড়িতে হামলা করা কারোর মন্দিরে হামলা করাকে আমাদের ধর্ম সমর্থন করে কি? জি না কেউ বলতে পারবেন না যে আমাদের ধর্ম তা সমর্থন করে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ