মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ
ছোট ভাইয়ের পাত্রী দেখানোর কথা বলে আটকে রেখে মারপিট এবং দুইজন মেয়ের সঙ্গে ছবি তুলতে বাধ্য করে কামরুল হাসান ওরফে দুলাল (৩৭) নামের এক ব্যক্তি কাছ থেকে জোরপূর্বক ৭২ হাজার টাকা কেড়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে।
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের নিমবাগান এলাকার এক বাসায় প্রতারণার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামী নাজিমুল ইসলাম ওরফে টাইগারকে (৫১) গ্রেফতার করেছে সৈয়দপুর থানা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শহরের শেরে বাংলা সড়কের চৌধুরী টাওয়ার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার নাজিমুল ইসলাম ওরফে টাইগার (৪২) উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পাকাধরা গ্রামের মকবর আলী ছেলে।
সে আন্তঃজেলা প্রতারক চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং তার নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। মামলা সুত্রে জানা যায়, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের চালুনিয়া গ্রামের মো. রুস্তম আলীর ছেলে কামরুল হাসান ওরফে দুলাল (৩৭) তার ছোটভাই সাদ্দাম হোসেনের (২২) জন্য পাত্রি দেখতে একই এলাকার পরিচিত মো. বাদলকে (৪৫) বলেন। পরে মাস খানেক আগে দুলালকে রংপুর মাহীগঞ্জের সাতমাথায় এক মহিলার সঙ্গে পরিচয় করে দেয় প্রতারক চক্রের সদস্য মো. বাদল। ওই পরিচয়ের সূত্রে অজ্ঞাত ওই মহিলা মোবাইল ফোনে দুলালকে জানায় তাঁর ভাই সাদ্দামের জন্য পাত্রী দেখেছেন।
এরই প্রেক্ষিতে গত ২৮ অক্টোবর ওই মহিলা মোবাইল ফোনে দুলালকে মাহীগঞ্জে ডেকে নেয়। পরে তার ভাইয়ের পাত্রী দেখার জন্য রংপুর থেকে সৈয়দপুরে শহরের নিমবাগান এলাকায় নাজিমুল ইসলাম ওরফে টাইগারের ভাড়া বাসায় আনে। সেখানে একটি ঘরে বসিয়ে রাখা হয় তাঁকে। কিছুক্ষণ পরেই সেখানে দুই জন অজ্ঞাত মেয়েকে ঘরে ঢুকিয়ে দুলালের পাশে বসায়। এসময় বিভিন্ন অশ্লীল ভঙ্গিতে জোরপূর্বক ওই মেয়েদের সাথে ছবি তুলতে বাধ্য করা হয়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দুলালের পকেটে থাকা ২২ হাজার টাকা কেড়ে নেয় তারা। এসময় প্রতারক নাজিমুল ইসলাম ওরফে টাইগার এসে নিজেকে গোয়েন্দা ( ডিবি) পুলিশ পরিচয় দিয়ে দুলালের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
এতে দুলাল অস্বীকৃতি জানালে প্রতারক চক্রের প্রধান টাইগারসহ অন্যান্যরা দুলাললে মারপিট করতে থাকে। এ সময় তাঁর কাছে থাকা ডাচ বাংলা ব্যাংকের এটিএম কার্ড কেড়ে নিয়ে পাসওয়ার্ড জানাতে বাধ্য করে। পরে প্রতারক চক্রের সদস্যরা দুলালকে আটকে রেখে ডাচ বাংলা ব্যাংকের বুথে গিয়ে দুলালের একাউন্ট থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে পুণরায় ফেরত আসে ওই বাসায়। এরপর দুলালকে ওই বাসা থেকে বের করে বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি গাড়িতে উঠিয়ে বলে সোজা বাড়ি চলে যা। এনিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি দেয় তাঁকে।
কিন্তু দুলাল কিছুদুর গিয়ে বাস থেকে নেমে থানায় আসে। এ ঘটনায় সে (দুলাল) বাদী হয়ে প্রতারক চক্রের হোতা নাজিমুল ইসলাম ওরফে টাইগার (৪২) তার স্ত্রী সহিদা খাতুন (৩৫), রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার মো. বাদল (৪৫), ও জলঢাকার জনৈক দেব (৩৯)সহ অজ্ঞাত ৫ জনকে আসামী করে সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পরেই থানা পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযানে নামেন। একই সাথে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে মামলার প্রধান আাসামী টাইগারের অবস্থান নিশ্চিত হয়।
পরে ওইদিন রাত আড়াই টার দিকে সৈয়দপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. খায়রুল আনাম মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. সাহিদুর রহমান সঙ্গীয় পুলিশকে নিয়ে শহরের শেরে বাংলা সড়কের চৌধুরী টাওয়ার এলাকা থেকে তাকে আসামি টাইগারকে গ্রেফতার করেন।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল হাসনাত খান প্রতারণা মামলার প্রধান আসামী নাজিমুল ইসলাম ওরফে দুলালকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান আসামী টাইগারকে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে নীলফামারী কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
0 মন্তব্যসমূহ