সৈয়দপুরে মেকানিক হত্যা মামলার আসামি গ্রেফতার মোবাইল উদ্ধার


মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ

সৈয়দপুরে সাব্বির হোসেন কাল্ল (২৮) হত্যা মামলার আসামি মাসুদ রানাকে (৩০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে কাল্লুর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার গভীররাতে সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের নিজবাড়ি আবাসন গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা তার শ্বশুর সুলতান খালুয়ার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। আজ বুধবার দুপুরে আসামি মাসুদরানাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। 

সৈয়দপুর থানা পুলিশের সুত্র জানায়, হত্যার শিকার মোটর মেকানিক সাব্বির হোসেন কাল্লুর স্ত্রী আদুরী (২৪) বাদি হয়ে মঙ্গলবার বিকেলে এজাহারনামীয় একজনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে সৈয়দপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর থেকেই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের ধরতে বিভিন্ন তৎপরতা শুরু করে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ জোড়ালো অভিযান শুরু করে। সুত্রটি জানায় থানার অফিসার ইনচার্জ মো.  আবুল হাসনাত খানের নির্দেশনায় থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) খায়রুল আনামের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক মো. মতিয়ার রহমানসহ সঙ্গীয় ফোর্স বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত নিয়ে ঘটনাস্থলের পাশে থাকা সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে। এতে দেখা যায় গত সোমবার সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ঘটনাস্থল নিয়ামতপুর বাস টার্মিনালের অদূরে খালেক ফিলিং স্টেশনের সন্নিকটে একটি ফার্নিচারের গোডাউনের পিছনের পুকুরপাড়ে যেতে দেখা যায় মেকানিক কাল্লুকে।

এরপর ১০টা ৫৫ মিনিটে নিয়ামতপুর ডাঙ্গা পাড়ার সাইদুল ইসলামের পুত্র ধৃত আসামি মাসুদ রানা (৩০) একই স্থানে যায়। সেখান থেকে ওই আসামি কাল্লুর মোবাইল ফোন দিয়ে  তার মায়ের সাথে (আসামির মা) কথা বলে। কিন্তু তার মায়ের ফোনটি আসামির স্ত্রী ময়নার নামে রেজিস্ট্রেশন থাকায় তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ফোনের লোকেশন শনাক্ত করা হয়। পরে মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২ টায় কামারপুকুর ইউনিয়নের নিজবাড়ি আবাসন গুচ্ছগ্রামে আসামির শ্বশুড় সুলতান খালুয়ার বাড়ি থেকে আসামি মাসুদ রানাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

জানতে চাইলে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো.  আবুল হাসনাত খান বলেন, সিসি ফুটেজের ভিডিও সংগ্রহ এবং তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যার শিকার কাল্লুর মোবাইল ফোনের লোকেশন শনাক্ত করে আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাদক সংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় এ হত্যাকান্ড ঘটেছে বলেছে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এঘটনায় অন্য কোন বিষয় রয়েছে কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে। আজ বুধবার দুপুরে আসামি মাসুদরানাকে আদালতের মাধ্যমে নীলফামারী জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।     

প্রসঙ্গতঃ গতকাল মঙ্গলবার সকালে শহরের নিয়ামতপুর বাসটার্মিনালের অদূরে খালেক ফিলিং স্টেশনের সন্নিকটে একটি ফার্নিচারের গোডাউনের পিছনের পুকুরপাড় থেকে মোটর মেকানিক সাব্বির হোসেন কাল্লুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত কাল্লুর বাড়ি শহরের চামড়াগুদাম ক্যাম্প এলাকায়। সে ওই এলাকার মৃত নাসিম ড্রাইভারের পুত্র। মঙ্গলবার ওই এলাকার ফার্নিচারের গোডাউনের পিছনে অবস্থিত একটি পুকুরের কেয়ারটেকার মাছের খাদ্য দিতে গিয়ে পুকুরপাড়ে একটি লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার দিলে লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিযে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করেন। রংপুর থেকে সিআইডির ক্রাইম সিনের একটি দলও ঘটনাস্থলে এসে তারাও সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করেন। ওই রিপোর্টে মাথার পিছনে আঘাত এবং কান দিয়ে রক্ত বের হয় বলে উল্লেখ করা হয়। সেখান থেকে আলামত হিসাবে একটি ইট, গাঁজা কাটার সরঞ্জাম, সিগারেটের বেশ কয়েকটি শেষাংশসহ সিগারেটের খালি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। পরে লাশ উদ্ধার করে থানায় আনে পুলিশ। 

লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে মৃত কাল্লুর স্ত্রী আদুরী (২৪)সহ পরিবারের লোকজন লাশ শনাক্ত করে। কাল্লুর স্ত্রী আদুরি জানান, গত সোমবার সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় সে। সকাল ১০টার দিকে তার ফোনে (কাল্লু) দুইবার কল দেয়া হলেও রিসিভ করা হয়নি। পরে আবার ফোন দিলে তখন থেকেই তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। মঙ্গলবার সকালে লোকমুখে তার স্বামী লাশ উদ্ধারের খবর পান। স্থানীয়দের অনেকেই জানান, কাল্লু মোটর মেকানিকের কাজ করতো। কাজের কারণে প্রায় ২/৩ দিন বাড়িতে আসতো না। মাদকসেবনের সাথে জড়িত ছিল বলে জানান অনেকে। তাদের ধারণা মাদক সংক্রান্ত কারণেই ওইদিন এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ