নীলফামারীর ডিমলায় নদীগর্ভে বিদ্যালয়! পাঠদান চলছে স্পার বাঁধে


নীলফামারী ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্টঃ

নীলফামারীর ডিমলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের পূর্ব ছাতুনামা আমিন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।ফলে করোনা মহামারীতে দীর্ঘ দেড় বছর  পর শিক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো  খুললেও  এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে নদী তীরবর্তী স্পার বাঁধ (গ্রাম রক্ষা বাঁধ)’র উপর একটি খুপরি ঘরে গাদাগাদি করে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ১০৫ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করান ৩ জন শিক্ষক।স্পার বাঁধে টিনের চালার একটি খুপড়ি ঘড়ে একসাথে তিন শ্রেণির পাঠদান চলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ কারও কথা ঠিকভাবে শুনতে পায় না। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়টি ১৯৯১ সালে পূর্ব ছাতুনামা চরের ৪৬ শতক জমিতে স্থাপন করা হয়। এটা সরকারি হয় ২০১৩ সালে। সে সময় চরের ২৫০ জন শিক্ষার্থীর পদচারণায় বিদ্যালয়টি মুখর ছিল।

এরপর থেকে বার বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে।টিনশেডের বিদ্যালয়টি পাকাকরণে ১০-১২ বার বরাদ্দ এলেও নদী ভাঙনের কারণে তা ফেরত চলে যায়। চার বার ভাঙনের শিকার নদীটি স্থান পরিবর্তন হওয়ায় এখন মূল জমি থেকে প্রায় তিন কিলেমিটার দূরে স্পার বাঁধের ওপর স্থান হয়েছে বিদ্যালয়টির। বিদ্যালয়ের ভবন ও কোন জায়গা না থাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্পার বাঁধের উপর একটি টিনের দু চালা ঘরের মধ্যে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। তীব্র তাপদাহে  ভ্যাপসা গরম আর বর্ষা মৌসুম হাওয়ায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। তিস্তা নদীতে সামান্য পানি বাড়লেই বন্যার ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পাঠদান বন্ধ করে ছুটি দিতে বাধ্য হন শিক্ষকেরা।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিদ্যালয়টি নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়ে। বেশ কয়েকবার বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করা হলেও গত বছর নদী ভাঙ্গনের পর আর বিদ্যালয়টি পুন:নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যালয়ের এ অবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে পড়ছে। দিনদিন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ খলিলুর রহমান জানান সামনের বর্ষা মৌসুমের আগে যদি ভবন নির্মাণ না করা যায় তাহলে পাঠদান কার্যক্রম চালানো কঠিন হয়ে পড়বে। অভিভাবক হজরত আলী বলেন, বিদ্যালয়টি বারবার নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়ায় আমরা খুবই বিপাকে পড়েছি। আমরা বাচ্চাদের যেমন খোলা আকাশের নিচে পাঠদানের  জন্য পাঠাতে পারছি না, আবার না পাঠিয়ে ঘরে বসিয়েও রাখতে পারছি না।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাশ জানান, চরের এই প্রতিষ্ঠানটি আবারও চালু করতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তিস্তায় স্কুলের মূল জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় পাকাকরণের অর্থ বারবার ফেরত চলে যায়। তবে নতুন করে বিদ্যালয়ের নামে জমি পেলে ভবনের অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন জানান, বিকল্পভাবে বিদ্যালয় খোলার ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে দেওয়া হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ