গত তিন দশক ধরে কোন উন্নয়ন নেই সৈয়দপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের। ফলে এর হেরিং বন্ডের ইট উঠে খানাখন্দ ও ছোট বড় গর্ত হয়ে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে টার্মিনালটি। এতে চালকরা বাস, মিনিবাস ও দূরপাল্লার কোচ টার্মিনালে পার্কিং না করে সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের ওপর পার্কিং করছে। এতে মহাসড়কে নিত্যদিন যানজটসহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বাস যাত্রীরা। ফলে বাস টার্মিনালটি এখন জনদুর্ভোগের টার্মিনালে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর-রংপুর মহাসড়কের নিয়ামতপুর এলাকায় ১৯৮৯ সালে চালু হয় বাস টার্মিনালটি। সেই থেকে টার্মিনালের আর কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। এরপর ২০০৪ সালে নীলফামারী জেলা প্রশাসন টার্মিনালের দায়িত্ব সৈয়দপুর পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করে। পৌরসভা দায়িত্ব গ্রহণের পর টার্মিনাল থেকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা আয় করলেও কোন উন্নয়ন করেনি টার্মিনালের। দীর্ঘ তিন দশক ধরে উন্নয়ন ও সংস্কার না হওয়ায় টার্মিনাল জুড়ে খানাখন্দ ও ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে টার্মিনালটি যাত্রী ও যানবাহনের জন্য ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে কাদা ও গর্তগুলোতে পানি জমে থাকে। এতে যানবাহন টার্মিনালে ঢুকলে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে বাস-মিনিবাস ও কোচগুলো টার্মিনাল ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ এই টার্মিনাল হয়ে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক বাস-মিনিবাস যাতায়াত করে বিভিন্ন গন্তব্যে। বর্তমানে এটি ব্যবহার অযোগ্য হওয়ায় সব যানবাহন মহাসড়কের ওপর দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করাতে বাধ্য হচ্ছে। এতে ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে দৈনিক শত শত যাত্রী গন্তব্যে যাতায়াত করছেন। গাড়ী ও যাত্রীদের জটলায় মহাসড়কে নিত্যদিন যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে বেহাল টার্মিনাল সংস্কার ও ব্যবহারযোগ্য করতে নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সৈয়দপুর পৌরসভা মেয়র বরাবরে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু চিঠি দেয়ার পরও সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। চিঠিতে মালিক সমিতি টার্মিনালের দূরাবস্থা তুলে ধরে ব্যবহারযোগ্য করার দাবি জানিয়েছেন।
নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি শাহনওয়াজ হোসেন সানু বলেন, সৈয়দপুর টার্মিনাল হয়ে প্রতিদিন আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার অগণিত গাড়ী চলাচল করে। এর মধ্যে সৈয়দপুরের মালিকদের গাড়ী রয়েছে দুই শতাধিক। কিন্তু টার্মিনাল ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ায় কোন গাড়ী টার্মিনালে প্রবেশ এবং যাত্রী ওঠানামা করাতে পারছে না। এসব গাড়ী মহাসড়কের ওপর পার্কিং করায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন চালক ও যাত্রীরা। বছরের পর বছর টার্মিনালে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বর্তমানে টার্মিনাল চত্বরের ইট উঠে খানাখন্দে ভরে গেছে। এতে গাড়ী পার্কিং ও ধোলাই কাজে সমস্যা হচ্ছে। তিনি দুর্ভোগ লাঘবে টার্মিনালটি দ্রুত ব্যবহার যোগ্য করতে পৌর মেয়রের উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দেন। একইভাবে মালিক সমিতির সহ-সভাপতি আনোয়ারুল হাফিজ জানান, টার্মিনাল থেকে মোটা অংকের আয় হলেও টার্মিনালের উন্নয়নে ভ্রুক্ষেপ নেই পৌরসভার। সংস্কারের অভাবে টার্মিনালে গাড়ী পার্কিং ও যাত্রী পরিবহন করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, সৈয়দপুর রেল ও আকাশপথে যাতায়াতের সুবিধা থাকায় সড়কপথে বহু যাত্রী আসেন রেল ও বিমান ধরতে। কিন্তু টার্মিনালের বেহাল দশায় লাগেজ নিয়ে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। টার্মিনাল ভবন থাকলেও কোন সেবাই পাচ্ছেন না তারা। নামে ওয়াশরুম থাকলেও ব্যবহারে সমস্যায় পড়তে হয়।
এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মমতাজ আলী বলেন, অসংখ্য গর্তে ভরা টার্মিনালে গাড়ীর যাত্রা বিরতিতে সমস্যা হচ্ছে। বর্তমান অবস্থায় টার্মিনালে গাড়ী ঢুকলে স্প্রিং, টায়ার ও চেসিসে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনাও ঘটেছে অনেকবার। ফলে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে গাড়ীর চালকরা টার্মিনাল ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে গাড়ি পার্কিং করা নিয়ে। এমন নানা সমস্যায় সৈয়দপুর বাস টার্মিনাল পরিত্যক্ত টার্মিনালে পরিণত হয়েছে।
জানতে চাইলে, সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বাস টার্মিনালের দূরাবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমান বাস টার্মিনালকে আধুনিকায়ন করতে এমজিএসপি প্রকল্পভুক্ত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি পৌর কাউন্সিলরসহ এমজিএসপি প্রকল্পের কর্মকর্তারা টার্মিনালের বর্তমান অবস্থা পরিদর্শন করেছেন। খুব শিগগির বাস টার্মিনালের উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। তবে এই সময়ের মধ্যে টার্মিনাল ব্যবহারযোগ্য করতে খানাখন্দ ও গর্ত ভরাট করা হবে। এজন্য কাউন্সিলরদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চলাচল উপযোগী করা হবে টার্মিনালটিকে। এতে টার্মিনালের বর্তমান দূরাবস্থা দূর হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
0 মন্তব্যসমূহ