দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় পাটের আবাদ ও চাহিদা বেশি, ভাল দামে কৃষকরা খুশি


বিশেষ প্রতিনিধি দিনাজপুরঃ

দিনাজপুরে খানসামা উপজেলার বাজারে পাটের আমদানি ভালো। চাহিদাও বেশি। পাটের দাম পেয়ে আনন্দ কৃষকের মনেও। পাকেরহাট বাজার দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় পাটের বাজার। এই হাটের রাস্তার উভয় পাশে সারিসারি দাঁড়ানো পাট বোঝাই ভ্যানগাড়ি। ভ্যান থেকে লোড হচ্ছে ট্রাক্টরে। কেউ ডিজিটাল পাল্লায় মাপছেন। আবার পাট নিয়ে বাজারে আসা মাত্রই ঠিক হচ্ছে দাম। ওই ভ্যানেই ফিরে যাচ্ছে পাট। আনলোড হচ্ছে ব্যবসায়ীর গুদাম ঘরে। এ যেন নিস্তব্ধ পাটের বাজারে নীরব বিকিকিনি।

মঙ্গলবার সকালে উপজেলার পাকেরহাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ী, ফড়িয়া, মিল মালিক প্রতিনিধিসহ ক্রেতাদেরও উপচে পড়া ভীড়। পাট নিয়ে বাজারে থিতু হতে না হতেই চড়া দামে পাট কিনে গুদাম ঘরে নিচ্ছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। ফলে আমদানি বেশি হলেও ক্রয়ের ক্ষেত্রে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সাথে পেরে উঠছেননা মিল মালিক প্রতিনিধিরা।

সংশ্লিষ্ট সকলেই বলছেন, গত বছর মৌসুমের শেষে ভালো দাম পাওয়ায় এবার শুরুতেই পাট কিনে মজুদ করতে মরিয়া মৌসুমী ব্যবসায়ীসহ মিল মালিক ও ফড়িয়ারা। এই হাটে ৪২ কেজিতে মণ ধরা হচ্ছে পাটের। অর্থাৎ কৃষক ৪২ কেজি পাট মেপে দিলে ক্রেতার কাছে সেটার ওজন ধরা হচ্ছে ৪০ কেজি। প্রতি মণ তোষা পাট বিক্রি হচ্ছে ৩১০০ টাকা থেকে ৩৩০০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে দেশী পাট বিক্রি হচ্ছে ২১০০ থেকে ২৪০০টাকা দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহেও এই বাজারে প্রতি মণ তোষা পাট বিক্রি হয়েছে ২৩০০ থেকে ২৬০০ টাকা দরে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাটের দামের এই ঊর্ধ্বগতি।

ছাতিয়ানগড় গ্রাম থেকে পাট বিক্রি করতে এসেছেন মজিবর রহমান। তিনি জানান, এবার ৩ বিঘা জমিতে পাট লাগিয়েছেন। চাষ, সার-বীজ ও নীড়ানি বাবদ বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ৫ হাজার টাকা। সেখানে ফলন পেয়েছেন বিঘায় ১৫ম ণ পাট। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৪৬ হাজার টাকা।

এবারে পাটের ফলনও হয়েছে ভালো। পাট গাছের বাড়ন্তকালীন সময়ে বৃষ্টিপাত কম হওয়াসহ অনূকুল আবহাওয়া ফলনের মূল কারন বলছেন কৃষকরা। তবে আঁশ ছাড়ানোর সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাল-বিল-পুকুরে সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে অনেককেই।

বাজারে পাট কিনতে আসা পপুলার জুট প্রসেস লিমিটেডের প্রতিনিধি মো. ইমরান জানান, গত ১০ বছরেরও অধিক সময় প্রতি মৌসুমে এখানে পাট কিনেন তিনি। কোন বারেই মৌসুমের শুরুতে পাটের দামের এমন ঊর্ধবগতি দেখেননি। তিনি বলেন, গত বছর মৌসুমের শেষে প্রতিমন পাটের দর গেছে ৬ হাজার টাকারও বেশি। এবারো অধিক লাভের আশায় মৌসুমী ব্যবসায়ীসহ অনেকেই পাট কিনে মজুদ করছেন। আমরা মিল মালিক প্রতিনিধিরা কৃষকের কাছে ভেড়ার আগেই পাট বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করা স্বত্ত্বে এক মৌসুমী পাট ব্যবসায়ী বলেন, গেলবার শুরুতে ২২’শ টাকা মণ দরে কিছু পাট রাখছিলাম। মাত্র আড়াই মাস পরে ঢাকার পার্টির কাছে প্রতি মণ ৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেছি। এবছর সমিতি থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে এবং ঢাকার পার্টির পাঠানো কিছু টাকা দিয়ে পাট কিনতেছি। জানালেন প্রতিবছর মৌসুমে পাট কেনাবেচা করেন তিনি। টানা কয়েক বছর লোকসান দিয়ে গেলবছর লাভ করেছেন। তবে এবারও দ্বিগুন লাভের আশা করছেন এই পাট ব্যবসায়ী।

এদিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে পাটের আবাদ কমলেও এবারই পাটের আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রার বেশি হয়েছে। এবার ১২০০ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো। সেখানে ১৩২০ জমিতে পাট উৎপাদন হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব রায় বলেন, পাটের আবাদ থেকে মানুষ বিমুখ হয়ে যাচ্ছিলো। কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার, কৃষকদের সচেতনতা সর্বোপরি গেল বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা পাটের আবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। আগামীতে পাটের আবাদ আরো বেশি হবে বলে তিনি আশা করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ