বিশেষ প্রতিনিধি, দিনাজপুরঃ
পাট সোনালী আঁশ, প্রতিবছর পাট বিদেশে রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আর্জন করে বাংলাদেশ সরকার। গত বছরে পাটের দাম ভাল পাওয়ায় পাট চাষে ঝুঁকে পড়েছে দিনাজপুরের পাট চাষিরা। এবছর পাটের ভাল ফলন হয়েছে, তা জাগ দিতে এবং ধোয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার পাট চাষিরা। এবার জেলায় ৪ হাজার ৪২৬ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, জানিয়েছেন দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তর।
জেলার ১৩ টি উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ডোবা-নালা আর খাল-বিলে কৃষকেরা আঁটি বেঁধে বর্ষার পানিতে পাট জাগ দিচ্ছে। আবার নিদিষ্ট সময়ে যারা পাটের বীজ বপন করেছেন, তারা বর্তমান জাগ থেকে তুলে আঁশ ছড়াতে শুরু করেছেন। পাট রোপন থেকে জাগ এবং ধোয়া পর্যন্ত কৃষকের বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা। সৌসুম অনুযায়ী বীজ রোপন করলে বিঘাপ্রতি পাট উৎপাদন হয় ১০ থেকে ১২ মণ। আবার অনেকেই ইরি ধান কাটা-মাড়ায়ের পর রোপন করলে আসে ৮ থেকে ১০ মণ পাট। তবে গতবছর পাটের দাম ভাল পাওয়ায়, এবছর পাটের চাষ বেশি করেছে কৃষকেরা।
পাট লাগানো ১০০ দিনের মাথায় তা কাটার উপযোগী হয়ে উঠে। পাট কেটে ডোবাতে আঁটি বেঁধে তা ১৫ থেকে ১৬ দিন পচনের জন্য রাখতে হয়। আঁটিগুলো পানিতে ডুবিয়ে তার ওপর কচুরি পানা দিতে হয়, যাতে সুর্যের আলো না পড়ে। ডোবার কিনারে বসে কৃষকেরা পচন পাটের আঁটিগুলো একটার পর একটা করে তার গা থেকে আঁশগুলো ছড়িয়ে নিয়ে তা আবার পেঁচিয়ে রাখছেন। পাটের আঁশ শুকনোর পাশাপাশি তার পাটখড়িগুলোও শুকাচ্ছেন তারা। পাটের সাথে ভাল দাম পাচ্ছেন তারা পাটখড়ির, এক মণ পাটখড়ি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।
দেশের চাহিদা পুরন করে সরকার তা বিদেশে রপ্তানি করেন। পাট থেকে সুতা,কাপড়, সুতলি, বস্তাসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি হয়।এছাড়াও পাটখড়ি থেকে হার্ডবোর্ড সহ জ্বালানি কজে ব্যবহার হয়ে থাকে। গেলো বার পাট চাষিরা পাটের দাম পেয়েছে প্রায় ২৫০০ টাকা। বর্তমানে বাজারে তার দাম ২৫০০ থেকে ২৬০০ টাকা আছে। কৃষকরা আশা করছেন এবছর পাটের দাম আরও ভাল পাবে।
বিরামপুর উপজেলার শারামপুর গ্রামের পাট চাষি। মোকারম হোসেন বলেন, পাটের মৌসুম শুরুতেই আমি পাট চাষ করেছি। তাই ১৬ দিন আগে তা আঁটি বেঁধে এই ডোবাই ডুবিয়েছি। আজ থেকে পাট ধোয়া এবং আঁশ ছড়াতে শুরু করেছি। গতবার আমি বিঘাপ্রতি ১২ মণ পাট পেয়েছি, আশা করছি এবারও তেমনি পাবো। গত বার আমি ২ বিঘা মজিতে পাট চাষ করেছিলাম। দাম ভাল থাকায় এবছর আমি ৩ বিঘাতে পাট চাষ করেছি।
বিরামপুরের কাটলা গ্রামের শফি মিয়া বলেন, পাট চাষে ভাল লাভ আছে, তবে বর্তমান পাট জাগ দেওয়ার জায়গার অভাব। আগের মতো আর পাট জাগ দেবার মতো ডোবা নালা নেই। কয়েক দিন থেকে বর্ষার পানি হচ্ছে, ছোট-খাট ডোবা নালাগুলো পানিতে ভরে গেছে। এখন এসব স্থানে পাট জাগ দিচ্ছি। ইরি ধান কাটা-মাড়াই করে পাট লাগিয়েছি, তাই পাট কাটতে এবং জাগ দিতে নমলা হয়েছে। তবুও আশা করছি বিঘাপ্রতি ৮ থেকে ১০ মণ পাট ঘরে তুলতে পারবো।
বিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার নিক্সোন চন্দ্র পাল জানান, এবারে উপজেলায় ১৯০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গত বছর পাট চাষ হয়েছিলো ১৮০ হেক্টর। দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মাঠে প্রায় সব পাট কাটা শেষ হয়েছে, পাট জাগ আর আঁশ ছড়াতে কৃষকেরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। আশা করছি পাট চাষিরা তাদের মনোপুত ফসল ঘরে তুলতে পারবে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহো জানান, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩ টি উপজেলায় এবার কৃষকেরা পাট চাষ করেছে ৪ হাজার ৪২৬ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় পাটের ফলন ভাল হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার কৃষি অফিসার এবং কর্মীরা পাট চাষের জন্য কৃষকদের সেবা দিয়ে আসছেন। আশা করছি আগামীতে জেলায় আরও পাটের চাষ বৃদ্ধি পাবে।
0 মন্তব্যসমূহ