আব্দুল মালেক, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মানুষ ও পরিবেশের বন্ধু গাছ। মানুষ ও প্রকৃতি একবারে কাছাকাছি থাকে এই গাছ । গাছ মানুষকে বাঁচার অক্সিজেন দেয়, ছায়া দেয়, ফল দেয় জীবন বাঁচানোর জন্য দেয় মহাঔষধ । গাছ নিজেকে বিলিয়ে দেয় শুধু মানুষের কল্যাণে। মানবজাতিকে সুন্দর জীবন উপহার দেয় এই গাছ। পাশাপাশি রোগ থেকে মুক্তি, অভিজাত জীবনযাপনে সুগন্ধি, খাবারে স্বাদ বাড়াতে মশলা তা-ও পাওয়া যায় এই গাছ থেকেই। কিন্তু ওই গাছই যদি প্রকৃতি ও মানুষের জন্য আগ্রাসী-প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে- তা হলে সেটি আতঙ্কের বিষয়।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য পিকেএসএফ এর অর্থায়নে রোপনকৃত বনজ, ফলজ ও ভেষজসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৫ হাজার গাছ কেটে সাবাড় করছে দুর্বৃত্তরা। ইউপি চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি দিনের পর দিন গাছ কেটে নিয়ে গেলেও উপজেলা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের । তবে গোপন সূত্রে জানা গেছে এই গাছ প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরূপ দূর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ কাজে ব্যবহার করেছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার। যার ফলে গাছ কেটে উজাড় করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি এই কর্মকর্তা।
গত ২০১০/১১ অর্থবছর পিকেএসএফ এর অর্থায়নে তিস্তা বহুমুখী সমাজ কল্যাণ সংস্থার অধীনে গোলনা ইউপি চেয়ারম্যানের চুক্তিবদ্ধতায় ইউনিয়নের বিভিন্ন কাঁচা রাস্তায় প্রায় ১৫ কিঃমিঃ জুড়ে এ-সব গাছের চারা রোপণ করা হয়। রাস্কা গুলো সদ্দারপাড়া থেকে জমুপাড়া, ভাদুরদরগা পাকারাস্তা থেকে মানিক হাজীর বাড়ি হয়ে দলবাড়ি দিয়ে অমুল্য চেয়ারম্যানের বাড়ি পর্যন্ত, কালীগঞ্জ নালা থেকে সাবেক চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের বাড়ি হয়ে রথবাজার পর্যন্ত, জিন্নার স্কুল থেকে হিন্দুপাড়া, সাদুরবাজার থেকে ইয়াসিনের বাড়ি এবং গাভীর ডাঙ্গাসহ বিভিন্ন রাস্তায় ১৫কিঃমিঃ জুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এসব গাছ রোপন করা হয়।
আর সুবিধাভোগিদের লোভ দেখিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা পশাসনকে ম্যানেজ করে এসব গাছ কেটেছে তিস্তা বহুমুখী সমাজ কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন। গাছ কেটে নিলেও, গাছের গোড়া রাস্তায় রয়ে গেছে। মানিক হাজি পাড়ার ভুক্তভোগী মৃত. হোসেন আলীর স্ত্রী জাহেদা বেগম বলেন, কি কমু বাও, হামরা এইলা গরীব মানুষ, হামার কথার কি দাম আছে। কায় শুনবে কার কথা, বুকে বড় ব্যাথা। গাছ গুলা হামরা ছোয়ার মতন কোলেপিঠে করে বড় করছি। হামরা বোলে একদিন ম্যালা টাকা পামু। এখন গাছ গুলা কাটিয়া নিগাইছে ম্যালা দিন হইল কোন খবর নাই। হামরা বেচ্ছাগুলা ৪/৫দিন জলঢাকা বাসস্টান অফিস গেছিনো দেখা পাইনা। এরকম অভিযোগ গোলাম মোস্তফা, আমিনুর রহমান ও রবিউল ইসলাসহ অনেকের। ভুক্তভোগী গোলাম মোস্তফা বলেন, আমাদেরকে সদস্য করা হয়েছে, প্রত্যেক সদস্যদের নিকট টাকাও নিয়েছে। যেমন আমি সতেরো!শ টাকা দিয়ে সদস্য হয়েছি সুবিধা পাওয়ার জন্য। কিন্তু কি দেখলাম, গাছ কেটে নেয়ার সময় আমার জমিতে লাগানো গাছ তারা কেটে নিয়ে গেছে।
গোলনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল আলম কবীর বলেন, আমাকে বলেছে যে, ১৫/২০ টা গাছ কাটানো হবে। তাই আমি সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করে গাছ কাটার রেজুলেশন করে দিয়েছি। কিন্তু তাঁরা যে ১৫ হাজার গাছ কেটেছে তাতো আমি জানিনা। তবে তিস্তা বহুমুখী সমাজ কল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মুঠো ফোনে বলেন, মিনিস্ট্রি থেকে গাছ কাটানোর কাগজ আছে।
এই বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলার চেষ্ঠা করলে তিনি কোন উত্তর দেননি। তবে সংশ্লিষ্ঠ ও উদ্ধৃতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলে জানালেন উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর। ওই দিন বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর(অবঃ) রানা মোহাম্মদ সোহেল এম.পি. কে অবগত করলে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
0 মন্তব্যসমূহ