মো. কামরুল ইসলাম কামু,পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় আনজুমান আরা আঁচল (২১) নামের এক গৃহবধূকে স্বামীর ভিটেবাড়ি ছাড়া করতে মারধর করেছেন তার স্বামীর চাচা মোহাম্মদ আলী হোসেন (৫৫) ও তাদের পরিবারের লোকজন। এমনকি তার স্বামীর রেখে যাওয়া দোকানটিও তালা ভেঙ্গে প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ সময় তাদের বাঁধা দিতে গিয়ে আহত হন ওই গৃহবধূর মা মিনি আক্তার (৩৮)। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাদের উদ্ধার করে তেতুঁলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করেন।
গত বুধবার দুপুরে তেতুঁলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডাংগাপাড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। জানা যায়,২০১৮ সালের ২ আগষ্ট জেলার তেতুঁলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডাঙাপাড়া এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুসের একমাত্র সন্তান সাইফুল ইসলাম বিজয়ের সাথে সদর উপজেলার পৌর এলাকার রামের ডাংগা আমির হামজার বড় মেয়ে আনজুমান আরা আচঁলের বিয়ে হয়। বিয়ের প্রায় দেড় বছর পরে ২০১৯ সালের ১৭ই ডিসেম্বর সাইফুল তার স্ত্রীর নামে বাড়ি ভিটে ও একটি দোকান সহ সাড়ে ৫২ শতক জমি দলিল করে দেন। ঠিক এর ৯ দিন পরে একই বছরের ২৬ শে ডিসেম্বর বিজয় তেতুঁলিয়া থেকে পঞ্চগড়ে আসার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যায়।
ওই গৃহবধূর করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, স্বামী সাইফুল ইসলাম বিজয় মারা যাওয়ার অল্প কিছুদিন আগেই তার ৭/৮ বিঘা জমির মধ্যে স্ত্রী আনজুমান আক্তার আঁচলের নামে বাড়ি দোকান ও বাড়ি ভিটেসহ সাড়ে ৫২ শতক জমি দলিল করে লিখে দেন বিজয়। কিন্তু বিজয় মারা যাওয়ার পরেই শুরু হয় সংকট। তার কোন ভাই বোন নেই। বিজয়ের বাবা আব্দুল কুদ্দুস মারা গেছেন অনেক আগেই। তার মা বিউটি বেগম অন্যত্র সংসার করছেন। বিজয় মারা যাওয়ার পর বিজয়ের সৎ চাচা মোহাম্মদ আলী হোসেন, আব্দুর কাদের ও ফুফাতো ভাই হারুন মিলে আচঁলকে ভিটে ছাড়া করতে উঠে পড়ে লাগে। এক পর্যায়ে বিজয়ের রেখে যাওয়া দোকানটিতে তালা মেরে দেয় তারা। এ বিষয়ে পুলিশ সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছিলেন না আচঁল।
স্বামীর ভিটে ছেড়ে চলে যেতে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছিল তারা। মঙ্গলবার রাতে বিষয়টি নিয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সমাধানের চেষ্টা পুলিশ। কিন্তু বৈঠক অমিমাংসিত অবস্থায় শেষ হয়। বুধবার দুপুরে নিরুপায় আচঁল দোকান খুলতে গেলে তার মা মিনি আক্তার সহ তাদের উপর লোকজন নিয়ে হামলা করে বিজয়ের সৎ চাচা মোহাম্মদ আলী হোসেন, আব্দুল কাদের, চাচাতো ভাই হারুন অর রশিদ ও ফুফুতো ভাই হারুন (দুই জনের নামই হারুন)। এমনকি তারা দোকানের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে তেঁতুলিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখান থেকে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত আঁচলের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তারা আমাকে আমার স্বামীর ভিটে থেকে উচ্ছেদ করতে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দিতে থাকে। আমার নামে আমার স্বামী বাড়ি ভিটে ও দোকানসহ সাড়ে ৫২ শতক জমি লিখে দেয়ায় তারা আমাকে সহ্য করতে পারছে না। এমনকি আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর একদিনেরও জন্য আমাকে দোকান খুলতে দেয় নি। তারা দোকানে তালা মেরে রেখেছিল। প্রতিদিন তারা আমাকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হুমকি দিতো। এ বিষয়ে আমি আদালতে একটি মামলাও করেছি। অথচ তারা আমার স্বামীর আপন কেউ না, দুঃসম্পর্কের স্বজন। এ বিষয়ে আমি পুলিশ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছি।
কিন্তু কোন প্রতিকার পাই নি। দোকানটি চালু করতে না পারায় আমি খুব কষ্টে দিন যাপন করছিলাম। মঙ্গলবার রাতে থানায় বৈঠক হয়। কিন্তু তারা কোন সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। পরে আমি নিরুপায় হয়ে একাই দোকান খুলতে গেলে তারা আমার ও আমার মায়ের উপর হামলা করে এবং দোকানের সব মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। প্রায় ৩ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় তারা। মোহাম্মদ আলী, আব্দুল কাদের ও দুই হারুন এলাকায় অশান্তিপ্রিয় মানুষ হিসেবেই পরিচিত। প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিপক্ষে কেউ কথা বলার সাহস পায় না। আমি আমার স্বামীর ভিটেতে থাকার অধিকার চাই। যারা আমার উপর হামলা করেছে তাদের বিচার চাই।
এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর বাবা মো আমির হামজা জানান, আমার জামাইয়ের চাচারা জমি, দোকান দখলে নিতে আমার মেয়ের জমির উপর নানা রকম হুমকী-ধামকী দিতো। এ নিয়ে অনেক স্থানে ঘোরাঘুরি করেও প্রতিকার পাইনি। পরে আমাদের দোকান খোলার ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিরা ইঙ্গিত দিলে আজ তারা আমার মেয়ে ও আমার বউয়ের উপর হামলা করেছে। তারা বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আমি হামলার বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা ওই আচঁলকে মারধর করিনি বরং সেই আমার স্ত্রী আয়েশা আক্তার (৫০) কে মারধর করেছে। নিজেই দোকান ভাঙচুর করেছে। আমরা তাকে দোকানের মালামাল বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে মালামাল না নিয়ে দোকানের দখল চায়। দোকানটি আমাদের জমিতে হওয়ায় আমরা দোকানের দখল দিতে রাজি নই। তাই সে এ কাজ করেছে। আচঁলের নামে করা জমি দলীল বাতিলে জন্য আমি,আমার ভাই আব্দুল কাদির,আব্দুল্লাহ ও সাইফুলের মা বিউটি বেগম সহ ৪ জন মিলে একটি মামলা দায়ের করেছি।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি আবু সায়েম মিয়া বলেন, আসলে ওই নারী দীর্ঘদিন ধরেই তাদের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। মঙ্গলবার রাতে আমরা বিজয়ের রেখে যাওয়া দোকান খোলার বিষয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে থানায় বসেছিলাম। কিন্তু বিষয়টি অমিমাংসিত অবস্থাতেই শেষ হয়। এরপর আজকে ওই নারী দোকান খুলতে গেলে তাকে তারা মারধর করা হয়। তিনি অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
0 মন্তব্যসমূহ