মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ
আর মাত্র ক’দিন পরেই পবিত্র শবেবরাত। তারপর রমজান মাস। যা আসতে এখনো প্রায় ২৪/২৫ দিন বাকি। তার আগেই সৈয়দপুরে মুরগির বাজারে তাপ ছড়াচ্ছে। হু হু করে বেড়েই চলেছে দেশিসহ বিভিন্ন জাতের মুরগির দম। গত এক মাসে ওইসব মুরগির দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৭০ টাকা প্রতি কেজিতে।
মুরগির আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন করোনার কারণে খামারে মুরগির উৎপাদন কমেছে এবং মোকামে আমদানি কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। উৎপাদন ও আমদানি স্বাভাবিক হলে দাম কমে আসবে। তবে তাদের কথায় বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। বাজারে মুরগির পর্যাপ্ত আমদানি থাকলেও দাম কমার কোন লক্ষণ নেই। খুচরা ব্যবসায়ীদের দাবি পাইকারি ব্যবসায়ীরা রমজানকে সামনে রেখে বাড়তি লাভের আশায় জোট বেধে এখন থেকেই তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে সাধারণ ক্রেতাদের আশংকা এখন থেকেই বাজার মনিটরিংয়ে প্রশাসন তৎপর না হলে আসছে রোজায় সংঘবদ্ধ ওইসব ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত দাম বাড়িয়ে দিবেন বিভিন্ন জাতের মুরগিতে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ইনচার্জ মো. খালিদ আরমান ও এনজিও কর্মী ইসমাইল খান জানান, গত ৮/১০ দিন আগে শহরের পৌর বাজারে দেশি মুরগি প্রতি কেজির মূল্য ছিল ৩১০/৩২০ টাকা, সোনালী মুরগির প্রতি কেজি ছিল ২৫০ টাকা। কিন্তু গত বুধবার বাজারে সেই মুরগির দামে বিস্তর তফাৎ। দেশি মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩৭০/৩৮০ টাকা ও সোনালী মুরগি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩২০ টাকায়। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দামে এত পার্থক্য হওয়ায় তার মত অনেকেই মুরগি না কিনে খালি হাতে বাসায় ফিরেছেন। তারা বলেন, মুরগির দামে আগুন লাগায় তাদের মতো অনেকেই হতশা। সামনে রমজান মাসে কি হবে তা এখন থেকে বোঝা যাচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার শহরের কয়েকটি বাজার ঘুরে দেশিসহ বিভিন্ন জাতের মুরগির অগ্নিমূল্যে বিক্রি হতে দেখা গেছে। ওইসব মুরগি ৩০ থেকে ৭০ টাকা বেড়েছে প্রতি কেজিতে। আমদানি স্বাভাবিক পর্যায়ে না এলে মুরগির দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের। পৌর বাজার, মুরগি বাজার, গেট বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত ৮/১০ দিন আগে দেশি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ৩১০ থেকে ৩২০ টাকায়। গতকাল বিক্রি হয়েছে ৩৭০/৩৮০ টাকায়। একই সময়ে পাকিস্তানী সোনালী মুরগি বিক্রি হয়েছিল ২৫০ টাকা দরে। কিন্তু আমদানি কম থাকার অজুহাতে গত কয়েকদিন থেকে বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা কেজিতে। এক লাফে দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৭০ টাকা। তবে সামান্য বেড়েছে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির দাম। ব্রয়লার ১১৫/১২০ থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি। আর লেয়ার মুরগি ১৯০ থেকে এখন ২০০/২১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগি ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫/২০ দিন আগেও বাজার মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু মোকামে আমদানি কম থাকায় এবং ফার্মে মুরগির উৎপাদন কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে। বাজারে মুরগি কিনতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাজমুল, এনজিও কর্মকর্তা আনারুলসহ কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা জানান, হঠাৎ করে মুরগির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই বিপাকে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে মুরগির পাইকারি ব্যবসায়ীরা আমদানি কম অজুহাত দেখাচ্ছে। মূলত তারা সিন্ডিকেট করে মুরগির দাম বাড়িয়েছেন এখন থেকেই। যাতে রমজান মাসে কেউ বলতে না পারে মুরগি দামের বৃদ্ধির কথা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌর বাজারের খুচরা এক মুরগি ব্যবসায়ী বলেন, আমরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। তারা যা দাম নেয় তার থেকে কেজিতে ১০/২০ টাকা লাভ রেখে আমরা মুরগি বিক্রি করি। রমজান মাসে আমদানি স্বাভাবিক না হলে দাম আরও বাড়তে পারে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, সৈয়দপুরে মুরগি বেচাকেনার জন্য ৫/৭ জন পাইকারী ব্যবসায়ী রয়েছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গোটা বাজার। পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন মো. সাফদার, শমসের, কাজী মতিয়ার, সাদ্দাম, আশরাফ ও রাজা। তাদের পক্ষে ব্যবসায়ী সাফদার জোড়ালো কন্ঠে সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন মোকাম থেকে তারা সোনালী, দেশি, লেয়ার, ব্রয়লার জাতের মুরগি আমদানি করে সৈয়দপুরসহ আশপাশের এলাকার মানুষজনের চাহিদা পূরণ করে থাকেন। কিন্তু গত ১৮/২০ দিন থেকে ওইসব মোকামে মুরগির আমদানি একেবারেই কম। যা মিলছে তা বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে। তার উপর পরিবহন ও লেবার খরচতো রয়েছেই। এসব কারণে মুরগির দাম বেড়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালে মুরগির চাহিদা কম থাকায় দাম ছিল হাতের নাগালে। তার উপরে শীত মওসুমে খামারে মুরগির উৎপাদনও কম হয়েছে। এখন চাহিদা বাড়লেও মুরগির উৎপাদন এবং আমদানি কম থাকায় মোকামেই মুরগির দাম অনেক বেশী। অন্যান্য পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলেন, আমদানি স্বাভাবিক হলে মুরগির দাম অনেক কমে যাবে। রমজান মাসে দাম বাড়বে না বলে জানান তারা।
0 মন্তব্যসমূহ