আব্দুল মালেক, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর কচুকাটা ইউনিয়নের তালুক মানুষমারা গ্রামের নিজ বাড়ী থেকে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বের হয়ে প্রেমিকের সাথে বেড়াতে গিয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হয় রুমাাইয়া ইয়াসমিন রিমু নামের এক কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী।
তবে রিমুর পরিবারের দাবী পর্ব পরিকল্পিতভাবে রিমুকে অপহারনের পর হত্যা করেছে বন্ধু ফয়জুল করিম ফয়সাল। এ ব্যাপারে জলঢাকা থানায় অপহরন ও হত্যার অভিযোগ এনে ফয়সল ও তার বন্ধু রিজভির নামে মামলা দায়ের করা হয়। তবে নীলফামারী সদর থানা ও জলঢাকা থানার পুলিশ বলেছেন, তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উম্মোচন করা হবে। নিহত রুমাইয়া ইয়াসমিন রিমু(২১) রংপুর কারমাইকেল কলেজের অনার্স পড়ুয়া বাংলা বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী। সে কচুকাটা ইউনিয়নের তালুক মানুষমারা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে। তার বন্ধু ফায়জুল করিম ফয়সাল একই গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার ছেলে। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
এলাকাবাসী জানান, গতকাল সোমবার নীলফামারী-জলঢাকা সড়কের রাজারহাট নামক স্থানে মোটর সাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আহত হয় রিমু আর ফয়সাল। স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। রিমুর অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় হাসপাতাল কতৃপক্ষ তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এঘটনায় রিমুর বাবা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে জলঢাকা থানায় ফয়সল ও তার বন্ধু রিজভিসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলা সূত্রে জানা যায়, প্রভাষক রশিদুল ইসলামের বাড়ী থেকে প্রাইভেট শেষে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেংগনমারী বাজারের রজনীগন্ধা হোটেলের একশ’গজ পশ্চিমে অভিযুক্ত ফয়সাল ও তার বন্ধুরা রিমুকে জোরপূর্বক মোটর সাইকেলে তুলে জলঢাকা অভিমুখে রওনা দেয়। রাজারহাটে যাওয়ার পর্বেই ফয়সাল ইচ্ছাপূর্বক নিজ মটরসাইকেল ইটভর্তি ট্রলির সাথে ধাক্কা লাগিয়ে রিমুকে গুরতর আহত অবস্থায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। রিমুকে গুরুতর আহত অবস্থায় স্থায়ীরা উদ্ধার করে জলঢাকা উপজেলা হাসাপতালে নিয়া যায়। সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রিমু মারা যায়।
রিমুর মা লিলি বেগম অভিযোগ করে জানান, আমার মেয়েকে জোড় পূর্বক অপহরন করা হয়েছে। অপহরনের পর তাকে ইচ্ছাপূর্বক মোটর সাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি আমার মেয়ের হত্যার বিচার চাই। রিমুর মামাতো ভাই রংপুরের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র ওয়াকিব ইসলাম জানান, আমি রংপুরে থাকার সুবাদে মুঠো ফোনে জানতে পেরে মেডিকেল কলেজে গেলে রিমুকে লিফটে মৃত অবস্থায় পেয়েছি।
আমার সামনে দিয়ে ফয়সাল ও রিজভী পালিয়ে যায়। কিন্তু রিমুর বান্ধবী নীলফামারী সরকারি মহিলা কলেজের ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী নুরী আক্তার জানান, আমরা টেংগনমারী বাজারে রশিদুল স্যারের কাছে ইংরেজি প্রাইভেট পড়ি। সোমবার আমি, রিমুসহ চার জন একসাথে ভ্যান যোগে প্রাইভেট পড়তে যাই। যাওয়ার পথে ব্রীজের সামনে ফয়সালের দেখা হয়েছিলো। টেংগনমারী বাজারে যাওয়ার সময়ে হটাৎ রিমুর ফোনে কল আসলে সে প্রাইভেট পড়বে না জানিয়ে চলে যায় এবং বলে প্রাইভেট শেষ হলে তাকে ফোন দিতে। প্রাইভেট শেষ করে তাকে কল ও ম্যাসেজ পাঠালে তার কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
তবে সরেজমিনে ঘটনাস্থল গেলে প্রত্যক্ষদ্বর্শী গ্যালামাল ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম, দর্জি বাবলা ও বই ব্যবসায়ী মাসুদসহ অনেকে জানান, জলঢাকা থেকে আসা ট্রাক্টরটলি ও টেংগনমারী থেকে আসা একটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি হলে মোটরসাইকেল চালক হডব্রেক ধরায় মেয়েটি ছিটকে পড়ে ট্রলির পিছনের চাকায় চাপা খেলে আমরা তাদের দুইজনকে উদ্ধার করে ছেলে এবং আহত মেয়েটিকে জলঢাকা হাসপাতালে পাটাই। প্রত্যক্ষদ্বর্শীরা আরো জানান, এটা সড়ক দূর্ঘটনা হত্যা নয়, কারন চালক নিজেই মোটরসাইকেলের তলায় পড়ে যায়।
নীলফামারী সদরের কচুকাটা ইউনিযন পরিষদ চেযারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরী বলেন, ২৪ঘন্টা অতিবাহিত হলেও আমাকে কোন পক্ষ থেকে আমায় অবহিত করেন নাই। ফয়সলের সঙ্গে নিহত রিমুর প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে লোকমুখে জানতে পেরেছি। জলঢাকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘নিহত রিমুকে অপহরনের পর হত্যা করা হয়েছে মর্মে রিমুর বাবা থানায় মামলা করেছে। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানাবো।
0 মন্তব্যসমূহ