শিমুল, দিনাজপুরঃ
গনটিকা কার্যক্রম শুরুর পরে একজন চিকিৎসক হিসাবে যে প্রশ্নগুলোর সব থেকে বেশী উত্তর দিতে হয়েছে এবং হচ্ছে চেম্বারসহ সামাজিক বিভিন্ন আলাপ চারিতায় তা হলো ডায়াবেটিস ,উচ্চরক্তচাপ , হ্রদরোগ , শ্বাসকষ্ট ,হাঁপানী এ্যালার্জী জনিত রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি করোনা ভাইরাসের টীকা নেবেন কি না বা নেওয়া উচিত হবে কিনা। গণটিকা কার্যক্রম শুরুর দিকে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব থাকলেও সময়ের সাথে সাথে তা কাটতে শুরু করেছে । আমার আজকের এই লিখা সেই সব প্রশ্নের উত্তরের ক্ষুদ্র প্রয়াস ।
সর্বশেষ প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ,যকৃত(লিভার) সমস্যা , কিডনীরোগী এবং যারা এ্যাজমা ,এ্যালার্জী , ক্যানসার সহ বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভূগছেন তারা নির্দ্বিধায় এই কোভিড-১৯ (কোভিশিল্ড) এর ভ্যাকসিন নিতে পারবেন । সতর্ক থাকতে হবে এইসব দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভূগা রোগীরা যেন দ্রুত করোনা টিকা গ্রহন করেন, কারন এই সব রোগীরা করোনা আক্রান্ত হলে মৃত্যু ঝুঁকি কয়েকগুন বেড়ে যায়। তবে টিকা নেওয়ার পূর্বে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা উচিৎ।
টিকা গ্রহনের পর কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মৃদু আর তা অন্য যে কোন টিকার ক্ষেত্রেই হতে পারে যা মাত্র কয়েকঘন্টা স্থায়ী হয় । যে ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক সিডিসি ( সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ) বলছে বর্তমানে ব্যবহৃত ফাইজার-বায়োএনটেক ও অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রোজেনেকার টিকা গুলোর ইনজেকশন দেওয়ার স্থানে মৃদু ব্যাথা ও ফুলে যাওয়া , মাথা ব্যাথা ,অবসাদ ,কাঁপুনি ও জ্বরের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।
এছাড়া কিছু দূর্লভ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে যেমন মাংসপেশী ও অস্থিসন্ধিতে ব্যাথা ,স্থানীয় লসিকা গ্রন্থি যেমন বগলের গ্রন্থি ফুলে যাওয়া এবং তীব্র মাত্রার এ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া বা এ্যানাফাইলেক্সিস হওয়ার রেকর্ড থাকলেও তা শুধুমাত্র ফাইজার-বায়োএনটেক উদ্ভাবিত টিকার ক্ষেত্রেই পরীলক্ষিত হয়েছে । সুখের খবর আমাদের দেশে গণটিকা কার্যক্রম (অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রোজেনেকা) শুরুর পর এ পর্যন্ত পঞ্চাশ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ টিকা গ্রহন করলেও অস্বাভাবিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখন পর্যন্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি ।
বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায় বয়স্কদের চেয়ে বরং অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের এ ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশী হচ্ছে , এর কারন হিসাবে বলা হচ্ছে বয়সের সাথে সাথে আমাদের ইমিউন রেসপন্স কিছুটা কমে আসে ,বরং কম বয়সীদের ইমিউন সিস্টেম টিকার পর ভাল প্রতিক্রিয়া দেখায় । এর অর্থ দাঁডায় টিকার পর মৃদু বা সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রমান করে আপনার ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক আছে। টিকা গ্রহনের পূর্বে প্রতিরোধমূলক হিসাবে প্যারাসিটামল ও এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন একেবারেই অনূচিত , যা ব্যবহারে টিকার কার্যকারীতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ।
করোনা টিকা নেবার পরেও আক্রান্তের খবরে অনেকেরই টিকার কার্যকারিতা বিষয়ে প্রশ্ন বা টিকা বিষয়ে অনাগ্রহ থাকতে পারে কিন্তু বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট এর ডিসেম্বর সংখ্যায় দেখা যায় কোভিড-১৯ (কোভিশিল্ড) টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার ন্যূনতম চৌদ্দ দিন পর থেকে সর্বোচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী হয় ,এই সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় ।
করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহন করলে পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় তবে কারও ইমিউন সিস্টেম দূর্বল থাকলে আবারও আক্রান্ত হতে পারেন । আপাতত গর্ভবতী,দুগ্ধদানকারী মা এবং আঠারো বছরের কম বয়সী বাদে সবাই দুই ডোজ টিকা নিয়ে স্বাস্থ্যবিধির প্রাথমিক বিষয়গুলো মেনে চললে করোনার ভয়াবহতা রোধ করা সম্ভব হবে । লেখক : ডাঃ নুরুজ্জামান, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, মেডিসিন বিভাগ, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর।
0 মন্তব্যসমূহ