মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সমর্থন ও নৌকায় ভোট দেওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের দোকান ভাংচুরসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর ওপর নির্মম ভাবে হামলা চালানোর নেতৃত্বদানকারী বিতর্কিত বিএনপির সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি তুলে নিয়ে পানিতে ফেলে অবমাননা এবং স্থানীয় একটি পরিবারকে এলাকা থেকে বিতারিত করার অভিযোগ রয়েছে ওই নেতার বিরুদ্ধে।
সে উপজেলার কোলা ইউনিয়ন যুব দলের সাবেক সভাপতি এবং কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তারন। বিতর্কিত ওই নেতার বিরুদ্ধে একাধিক অপকর্ম ও নানা অভিযোগ স্থানীয় নেতা কর্মীদের মুখে মুখে থাকলেও সাংগঠনিক ভাবে তা আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে কাউকেই তেমন মাথা ঘামাতে দেখা যায় নি! ২০০৮ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর সংগঠন (আওয়ামী লীগ) বিরোধী লাগামহীন আচরণ, দেলীয় নেতাকর্মীদের কোন্ঠাসা করে রাখা ও নেতা কর্মীদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টিসহ দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অভিযোগ এনে ওই নেতার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
নানা অপকর্মসহ একাধিক অভিযোগ থাকার পরও বিএনপি থেকে আগত বিতর্কিত ওই নেতা কি করে ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ হাকিয়ে বহাল থাকছেন এমনটাই প্রশ্ন ওই ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের? এগিদকে বিএনিপি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিএনপির গুনগান সম্বলিত বাংলাদেশ জাতীয়তা বাদী যু্বদল কোলা ইউনিয়ন শাখার সাবেক সভাপতি লিখে রফিকুল ইসলাম তারন পোষ্টার ছাপিয়ে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এঁটে দেন। যে পোষ্টারটির ছবি আজ অবদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইজবুকে ঘুরপাক খেতে লক্ষ্য করা যায়। পোষ্টারটিকে ঘিরে রয়েছে নানা তর্ক বিতর্ক। এমনকি স্থানীয় নেতাকমর্ীদের মাঝে পোষ্টারটি নিয়ে সমালোচনাও চলছে বহুদিন ধরে।
স্থানীয়রা জানান, ২০২০ সালের ১৫ই আগষ্ট শোক দিবস উপলক্ষ্যে কোলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আঙিনায় শোকসভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওইদিন শোকসভা পন্ড করে একই ইউনিয়নের বিএনপির এক নেতার ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াতে যান কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কপাসের হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তারন। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় একাধিক পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালী সময় আওয়ামী লীগের সমর্থন এবং নৌকায় ভোট দেওয়ায় রফিকুল ইসলাম তারনের নেতৃত্বে কোলা ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম ফকির ও তপন ডাক্তারকে মারধরসহ তাদের দোকান ভাংচুর এবং আওয়ামী লীগের সমর্থকারী বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে মারধর করা হয়।
ছাতিয়ানতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের কক্ষ থেকে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ছবি খুলে এনে পানিতে ফেলে দিয়ে জাতীর জনকের চরম অবমাননা করা হয়! এছাড়া ছাতিয়ানতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের হিন্দু ধর্মালম্বি এক শিক্ষককে আওয়ামী লীগ করায় মারধর করা হয় এবং পরবর্তীতে তাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী ও নানা ভাবে নির্যাতন করে দেশ ছারতে বাধ্য করে রফিকুল ইসলাম তারন ও তার লোকজন। সে সময় কোলা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতির দায়ীত্বে থাকায় ছাতিয়ানতলী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন দোকান রফিকুল ইসলাম তারনের অনুমতি নিয়ে খুলতে হতো! তৎকালীন সময়ে তার প্রভাবে ওই এলাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থনকারী ও নিরীহ মানুষজনকে নানা ভাবে অত্যচারের শিকার হতে হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম তারন আলোচিত ছাত্রলীগ নেতা আসিফ হত্যা মামলার প্রধান আসামী। সে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় বিচার শালিশে পক্ষপাতিত্বের মাধ্যমে জিতিয়ে দিয়ে হাতিয়ে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। জমির দালালী, জোর পূর্বক অন্যের সম্পত্তি দখল ও মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকার লোকজনকে হয়রানী করার অভিযোগও রয়েছে রফিকুল ইসলাম তারনের বিরুদ্ধে। এদিকে কোলা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগে ত্যাগী নেতাদের পদ বঞ্চিত করে বিএনপি থেকে আগত মো. কপাসের হোসেনকে কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করায় মো.নূর ইসলাম নামে কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির বিরুদ্ধে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে লিখিত অভিযোগের বিষয়টি মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগকে তদন্তের নির্দেশ দেন। অন্যদিকে বিতর্কিত নেতা রফিকুল ইসলাম তারন গেলো কয়েক বছরে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছেন। বর্তমানে তিনি কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষনা দিয়েছেন এবং দলীয় (নৌকা) মনোয়ন চেয়ে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর খান বাবু জানান, আলোচিত আসিফ হত্যা মামলার প্রধান আসামী রফিকুল ইসলাম তারনকে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক করায় আওয়ামী লীগের কমিটি নিয়ে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা।
কোলা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নোবেল হাওলাদার বলেন, জাতীয় শোক দিবস, ২১ শে ফেব্রুয়ারী কোন প্রোগ্রামই তারা পালন করে না। ছাত্রলীগ, যুবলীগ কাউকে তারা ডাকে না এবং মূল্যায়নও করে না। ১৫ আগস্ট ও ২১ শে ফেব্রুয়ারী গেলো তারা দলীয় কোন ভূমিকা রাখে নাই। এগুলাতো উপরের নেতাদের জানাই কাজ হয় না। এরপর আওয়ামী লীগের ক্লাবটাকে গরুর ঘর বানাইয়া রাখছে। যত আজে বাজে পোলাপানের আড্ডা খানা। ওই ক্লাব তারনের বাবার টাকায় উঠাইছে! তালাটাও তার দেওয়া। অনুমতি ছাড়া কেউ ডুকতে পারে না।
আলোচিত আসিফ হত্যা মামলার রাজ স্বাক্ষী কোলা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বিদ্যুত মোল্লা বলেন, রফিকুল ইসলাম তারন আগে বিএনপির যুবদলে ছিলো। সে আসিফ হত্যা মামলার এক নাম্বার আসামী। আমি ওই মামলার এক নাম্বার স্বাক্ষী। আমিসহ আমার পরিবারের লোকজনকে সে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে আসছে। এমনকি সে মামলা দিয়েও আমাদের হয়রানী করতেছে। কতদিন আগে আমাকে একটা ৭ ধারার মামলা দেয় সেই মামলায় আমি খালাস পাই। ওই মামলা মিথ্যা প্রমানিত হয়। তারন এলাকার অনেক মানুষকে হয়রানী করেছে।
সে টাউটারি বাটপারি করে এলাকার অনেক বাড়ী দখল করে বসে আছে। তার বাড়ীর পাশের বাসার এক লোক ৪ টা রায় পাওয়ার পরও ওই সম্পত্তি সে জোর করে দখল করে বসে আছে। আওয়ামী লীগের এবারের কমিটিতে কোন পুরান লোক নেয় নাই টাকা পয়সা খাইয়া সব নতুন লোক ঢুকাইছে। এলাকার ক্ষমতা দেখায় মানুষকে হুমকি ধমকি দিয়া রাখে। এ জন্য কেউ তার বিরুদ্ধে বলতে পারে না। যদিও কেউ বলে তাদের মারধর করে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করে।
তারনের আরেক ভাই তরুন আসিফ হত্যা মামলার ৪ নাম্বার আসামী। দুই ভাই মিলে এলাকায় যত অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। এদের কারণে এলাকার লোকজন অনেক অশান্তিতে আছে। আওয়ামী লীগে থেকে সাংগঠনিক কোন প্রোগ্রামই করে না বরং ধান্দা নিয়া পরে থাকে। ১৫ই আগষ্ট শোক দিবস বাদ দিয়ে বিএনপি নেতার বিয়ের দাওয়াত খেতে গেছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া ২১শে ফেব্রুয়ারী গেলো তারও কোন প্রোগ্রাম করে নাই। তারণ খুব খারাপ লোক।
0 মন্তব্যসমূহ