মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ
আসন্ন সৈয়দপুর পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল শনিবার রাত ১১ টায় শহরের গোলাহাট উর্দুভাষী ক্যাম্প এলাকায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয়পার্টির প্রতিদ্বন্দ্বি মেয়র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ২০ জন কর্মী সমর্থক আহত হয়েছে।
এ সময় ১২টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও ২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। হামলায় আহত ৪ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন শামসুদ্দিন (৪০), সাকিল আহমেদ (৩৫), আরমান (৩৫) ও মো. হাসান (২৭) এর মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ১ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলায় আহত ৩ জন নিজেদের কর্মী বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে।
এ হামলার জের ধরে গতকাল রাতেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর বিক্ষুব্ধ কর্মী সমর্থকরা শহরে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় তারা বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি ও আওয়ামীলীগ নেতা হিটলার চৌধুরীর বাড়িতে হামলাসহ নৌকার কর্মী সমর্থকদের আহত করার প্রতিবাদ জানিয়ে জাপা মেয়র প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেন।পরে তার পোস্টারও ছিড়ে ফেলা হয়। বর্তমানে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনপক্ষই থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়নি। জানা যায়, শনিবার রাত সাড়ে ১০ টায় জাপা মনোনীত মেয়র প্রার্থী সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক গোলাহাট এলাকায় তার নির্বাচনী পথসভায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে ইঙ্গিত করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেন।
এতে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে জাপা ও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং তাদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এ সময় জাপার কর্মী সমর্থকরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিটলার চৌধুরীর ভলুর বাড়ি ভাংচুর করে। হামলায় বঙ্গবন্ধুর ছবি ও তার একটি জীপগাড়ি ভাংচুরের শিকার হয়। পরে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ মারাত্মক আকার ধারণ করায় ১২টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও ২টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়। হামলায় আহত ৪ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর মধ্যে গুরুতর আহত ১ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে মোটর সাইকেলে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ সময় পুলিশ ভাংচুরের শিকার ও আগুন দেয়া ১৪টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সংঘর্ষের পরেই গোটা শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের উপর হামলার প্রতিবাদে সৈয়দপুর উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগ আজ রবিবার দুপুরে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে। মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ করে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভা করে। অনুষ্ঠিত এ সভায় বক্তব্য বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোখছেদুল মোমিন, সাধারণ সম্পাদক মো. মহসিনুল হক মহসিন, পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বাবু, সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক প্রমুখ। সভায় বক্তারা ন্যাক্কারজনক হামলার নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান। এ প্রসঙ্গে কথা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোখছেদুল মোমিন জানান, গতকাল শনিবার রাতে উল্লিখিত এলাকায় নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন করে জাতীয়পার্টির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী পথসভায় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিটলার চৌধুরীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়া হয়।
এতে এলাকার লোকজন প্রতিবাদ জানালে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে জাপার কর্মী সমর্থকদের অতর্কিত হামলায় তাদের ১০জন কর্মী আহত হয়। এদের মধ্যে তাদের আহত ৩ জন কর্মীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পরপরই জাপার কর্মী সমর্থকরা ফের জড়ো হয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিটলার চৌধুরীর বাড়িতে হামলা চালিয়ে বাড়ি ভাংচুর করে এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীর ব্যানার ছিড়ে ফেলে। পরে নৌকা মার্কার কর্মী সমর্থক ও এলাকাবাসির প্রতিরোধে হামলাকারীরা পালিয়ে আসে। হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সভা করে ঘটনা নিন্দা জানানো হয়েছে।
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের প্রস্তুতি চলছে। অপরদিকে সৈয়দপুর পৌর জাতীয় পার্টির আহবায়ক ও মেয়রপ্রার্থী সিদ্দিকুল আলম সিদ্দিক জানান এঘটনার রাতে পথসভা শেষ করে ফেরার সময় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিটলার চৌধুরীর বাড়ির সামনে জাপার নেতাকর্মীদের সাথে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে তার ২০-২২ জন কর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ১ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ হামলায় তার ২০টি মোটরসাইকেল ভাংচুর ও ২টি মটর সাইকেলে আগুন দেয়া হয়। এটি আওয়ামী লীগের পরিকল্পিত হামলা বলে দাবী করেন তিনি ।
জানতে চাইলে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব আবুল হাসনাত খান বলেন,গতকাল শনিবার রাতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন পক্ষই লিখিত ভাবে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে পরবর্তী যাতে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য পুলিশ সতর্ক ও তৎপর রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গোটা শহরে পুলিশি টহল চলছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থল থেকে আগুনে পুড়ে যাওয়া ২টি ও ভাংচুর ১২টিসহ মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। উল্লেখ্য সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাচন আগামী ২৮ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয়পার্টির প্রার্থীসহ ৫ জন মেয়র পদে প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন।
0 মন্তব্যসমূহ