কুড়িগ্রামে চরাঞ্চলে মিষ্টি আলু চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষক


নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ও উচ্চ ফলনশীল বারি আলু-৮ জাতের মিষ্টি আলু লাভের আশায় চাষ করেছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। অল্প খরচে ও কম পরিচর্যায় বেশি ফলন এবং অধিক লাভ হওয়ায় মিষ্টি আলু চাষে আগ্রহী বেশি এ অঞ্চলের কৃষকদের। ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে।

রোববার (৩১ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে জেলা সদরের বিভিন্ন চরাঞ্চল ঘুরে মিষ্টি আলু চাষের ভালো ফলনের চিত্র দেখা যায়। কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ৭২০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৭৫৯ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে।

মোগলবাসার চর সিতাইঝাড় গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এবার ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে আড়াই বিঘা জমিতে মিষ্টি আলুর চাষ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। আশা করি লাভবান হবো। গত মৌসুমেও ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছি। সেই টাকায় দুটি গরু কিনেছি। আশা রাখি এবারও মিষ্টি আলু চাষে লাভবান হয়ে লাভের টাকায় কিছু একটা করবো। একই এলাকার দেলদার হোসেন দৈনিক ইনফো বাংলা পত্রিকার  সংবাদকর্মী নয়ন দাস'কে  বলেন, আমাদের এলাকা চরাঞ্চল হওয়ায় এখানে অনান্য ফসলের চেয়ে মিষ্টি আলু চাষ করলে ফলন বেশি হয়। মিষ্টি আলু চাষে পরিশ্রম কম ও লাভ বেশি। ৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৫ শতক জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। ফলন ভালো হওয়ায় আশা রাখি এবারও লাভবান হবো।

যাত্রাপুরের পোড়ারচর এলাকার জহুর আলী দৈনিক ইনফো বাংলা পত্রিকার সংবাদকর্মী নয়ন দাস'কে বলেন, ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ২ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করেছি। গতবার ২ বিঘা জমিতে মিষ্টি আলু চাষ করে প্রতি কেজি ২০ টাকা দরে বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা আয় করেছি। মিষ্টি আলুতে রোগবালাই নেই বললেই চলে। পরিচর্যা কম লাগায় অল্প খরচে বেশি লাভ করা যায়। এবারও ফলন ভালো হওয়ায় লাভের আশা আছে। যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী সরকার দৈনিক ইনফো বাংলা পত্রিকার  সংবাদকর্মী নয়ন দাস'কে বলেন, আমার ইউনিয়নের কালির আলগা, গোয়াইলপুরী, রলাকাটা, ভগবতীপুর, পোড়ারচর, খাসের চর ও শিবের বাতি এলাকার কৃষকরা মিষ্টি আলু চাষ করছেন। মিষ্টি আলু চাষে এসব এলাকার অনেক কৃষকই লাভবান হয়ে সংসারের উন্নতি করছেন।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম দৈনিক ইনফো বাংলা পত্রিকার  সংবাদকর্মী নয়ন দাস'কে বলেন, কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলায় চলতি মৌসুমে মোট ৭২০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ৭৫৯ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। মিষ্টি আলু চাষের উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস। মিষ্টি আলু চাষে তেমন রোগবালাই নেই। এতে লেদা পোকা নামের এক ধরনের পোকার আক্রমণ হয়, যা থেকে পরিত্রাণের জন্য অনুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়।

তিনি দৈনিক ইনফো বাংলা পত্রিকার সংবাদকর্মী নয়ন দাস'কে বলেন, ভালো ফলন পেতে হলে আগাছা পরিষ্কার, সুষম সারের ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হয়। সাধারণত বেলে-দোঁ-আশ মাটিতে মিষ্টি আলুর চাষ ভালো হয়। বীজ রোপণের ১৫০ থেকে ১৬০ দিন পর মিষ্টি আলুর ফলন ঘরে তোলার উপযোগী হয়। প্রতি শতকে ৬০০ থেকে সাড়ে ছয়শ আলুর কাটিং ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। এবার জেলায় মিষ্টি আলুর ফলন ভালো হওয়ায় লাভবান হবেন কৃষকরা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ