হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাটঃ
রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার মহিপুর এলাকায় তিস্তা নদীর অববাহিকায় সূর্যমূখী ফুলের চাষ করেছেন স্থানীয় কৃষক অনু মিয়া(৪০)। তিস্তা বৈচিত্র্যময়।বর্ষায় এ নদীর মিলিত বান ভাসিয়ে নেয় জেলার বিস্তীর্ণ প্রান্তর। বর্ষা শেষে জমে থাকা পলি কৃষিজমিকে করে তোলে উর্বর। তিস্তার চর জেলার কৃষি খাতে একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জের জন্ম দিয়েছে, অন্যদিকে রয়েছে সম্ভাবনার হাতছানি। চরের জমির কার্যকর ও পরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে স্থানীয় কৃষকদের আয় বাড়ানো সম্ভব হবে।
এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের চরাঞ্চলের পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। সূর্যমুখী চাষের ব্যাপক প্রসার ও সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব হলে এতে পাল্টে যেতে পারে অবহেলিত চরগুলোর দৃশ্য। এবারের মৌসুমে কৃষি বিভাগের সহযোগীতায় চরের ধুধু জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন আনু মিয়া। সরকারীভাবে বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হয়েছে তাকে। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি হাতেকলমে সূর্যমুখীর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরেছে। সে লক্ষে ৪ শতক জমিতে সূর্যমূখি ফুলের চাষ করেছেন আনু মিয়া।পাচ্ছেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ। ফলে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে চরের জমিতে সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বাড়তে শুরু করেছে।
আনু মিয়া জানায়, মহিপুর তিস্তা নদীর চরে এ বছর ৪শতক জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি। সহায়তা ও পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক চাষ নিয়ে কোনো ধারণা ছিল না। আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রর সহযোগীতায় চরের পতিত জমিতে চাষ শুরু করি। শুরুর দিকে চিন্তায় ছিলাম। মনে হয়েছিল, আর্থিকভাবে লোকসানে পড়ব। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। এখন জমিজুড়ে হলুদ সূর্যমুখী ফুল দেখে মন ভরে গেছে। আশা করছি, বিক্রি করে মুনাফা ঘরে তুলতে পারব।এবার লাভ হলে পরবর্তীতে আরো বেশি লাগাবো।'
তিনি আরো বলেন, হারভেস্ট মেশিন ছাড়া সূর্যমুখী বীজ সংগ্রহ করতে সমস্যা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি মূল্যে হারভেস্ট মেশিন সরবরাহ করা হলে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সহজ হবে।একই সঙ্গে সূর্যমুখী বীজের বাজারমূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হলে প্রান্তিক কৃষকদের লাভ হবে। স্থানীয়রা জানায়, মহিপুর চরে এসব আগে কোনদিন দেখি নাই। এবার প্রথম আনু মিয়াকে চাষ করতে দেখলাম। তার ফসল ভালো হলে পরবর্তীতে সূর্যমূখি চাষে সিদ্ধান্ত নিব। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, চরের জমির উর্বরতা ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের জন্য উপযুক্ত। এ সুবিধা কাজে লাগিয়ে চরাঞ্চলে সহজেই ফসলটির বাণিজ্যিক আবাদ বাড়ানো সম্ভব। এজন্য উন্নত মানের বীজের নিশ্চয়তা দিতে হবে। বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তবেই চরাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক হারে সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক চাষ বাড়ানো সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানায়, সূর্যমুখীর বাণিজ্যিক চাষ তিস্তা চরের চেহারা বদলে দিতে পারে। এ সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সরকারের পক্ষ থেকে স্থানীয় কৃষকদের ফসলটি চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।এক কেজি সূর্যমুখী বীজ থেকে আধা লিটার ভোজ্যতেল উৎপাদন করা যায়। আশা করা হচ্ছে,আনু মিয়ার কাযর্যক্রম দেখে এখানকার কৃষকেরা সূর্যমূখি চাষে পদক্ষেপ নিবে। বদলে যাবে চরের চেহারা।
0 মন্তব্যসমূহ