উলিপুর পৌর নির্বাচন তৃতীয় দফায় জমে উঠেছে


নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামের উলিপুর পৌরসভা নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই পরস্পরের দিকে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের তীর নিক্ষেপ করছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী-সমর্থকরা। পাল্টাপাল্টি এসব অভিযোগের পরও থেমে নেই নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা। ভোর থেকে মাঝরাত পর্যন্ত ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন প্রার্থীরা, দিয়ে যাচ্ছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি।

এই নির্বাচন বিএনপির জন্য যেমন পৌরসভার দায়িত্ব ধরে রাখার লড়াই, ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগের জন্য মর্যাদা ও অস্তিত্বের লড়াই। পৌর এলাকা বরাবর বিএনপির ঘাঁটি বলে বিবেচিত। এখানে রয়েছে তাদের বিশাল ভোট ব্যাংক। অপরদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যকে পুঁজি করে বিএনপির ঘাঁটি ভেঙে সরকারের উন্নয়নের হাতকে আরও শক্তিশালী করতে চায় নৌকার প্রার্থী। এ জন্য আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে তারা।

এ দিকে, জেলার শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। দোয়া নিচ্ছেন। সাথে ভোটারদের উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপি প্রার্থীসহ দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন উন্নয়ন-পরিকল্পনা তুলে ধরে ভোটারদের আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা। ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোট সেন্টারে গিয়ে বিএনপি প্রার্থীকে ভোট দিতে উৎসাহ দিচ্ছেন।

এখন পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চললেও ছোটখাটো অভিযোগ বিএনপির পক্ষে থাকলেও সেটা অস্বীকার করছে আওয়ামী লীগ। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আশংকা রয়েছে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে। তবে জেলা নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে সকল ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছে। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে উলিপুর পৌরসভা নির্বাচন। এই পৌরসভাটি ১৯৯৮ সালে ২৭ দশমিক ৩৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ওপর অবস্থিত। পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ভোটার রয়েছে ৩৭ হাজার ৯১৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৮ হাজার ৫৩৯ জন এবং নারী ১৯ হাজার ৩৭৬ জন। মোট ১৮টি ভোটকেন্দ্রে রয়েছে ১১৩টি কক্ষ।

নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ জন প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর পদে ৫৬ জন এবং সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মাঝি হয়েছেন মামুন সরকার মিঠু। এছাড়া বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে সাবেক মেয়র হায়দার আলী মিঞা নির্বাচন করছেন। পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আতাউর রহমান। এ দিকে, পিছিয়ে পরা উলিপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীরা লিফলেট বিতরণ আর গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের শ্লোগানে মুখর এখন পৌর এলাকা। দেওয়া হচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতি। তবে সুষ্ঠু ভোট আর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চান ভোটাররা। উলিপুর পৌরসভা নির্বাচন যে প্রার্থীই মেয়র নির্বাচিত হবে তিনিই উলিপুরের দীর্ঘদিনের যানজট সমস্যা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি, সন্ত্রাস-মাদকমুক্ত একটি পৌরসভা গঠনসহ বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করবেন- এমন প্রত্যাশা নতুন ভোটারদের।

তবে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি প্রার্থী হায়দার আলী মিঞা অভিযোগ করেন, সরকার দলীয় লোকজন তার দলের নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। এতে স্থানীয় বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। তবে তিনি আশা করছেন আবারও তাকে মেয়র করবে উলিপুরের মানুষ। এ সময় দ্বিতীয়বার মেয়র হলে পৌরবাসীর জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, রাস্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মামুন সরকার মিঠু জানান, নির্বাচিত হলে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের সকল সুযোগ-সুবিধা পৌরবাসীর জন্য বাস্তবায়নসহ একটি মডেল পৌরসভা তৈরির অঙ্গিকার ব্যক্ত করছি।

এরই মধ্যে কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সাবেক এমপি মো. জাফর আলী উলিপুরে গণসংযোগ করতে এসে জানান, এখানকার মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তবে বিএনপি নির্বাচকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিভিন্ন ধরণের মিথ্যা অভিযোগ করছে। যার কোনো ভিত্তি নেই। 

এ দিকে, জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম রাকিব দৈনিক অধিকার জানান, উলিপুর পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে এরই মধ্যে সকল ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ