মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুরঃ
মাঘ মাসের শুরু থেকে সৈয়দপুরসহ নীলফামারী অঞ্চলে শীত জেঁকে বসেছে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে মানুষ ও প্রাণিকূল। শীত আর কনকনে হিমেল হাওয়ার কারণে কষ্ট ভোগ করছে শ্রমজীবীসহ প্রান্তিক জনপদের শীতার্ত মানুষ। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী ৫ সেলসিয়াস থেকে ১১ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসছে। কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে গোটা জনপদ। যানবাহনগুলোকে দিনে লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে বিঘি্নত হচ্ছে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের উড়োজাহাজের অবতরণ ও উড্ডয়ন। দুপুরের পর উত্তাপহীন সূর্য্যরে দেখা মিললেও তাতে উত্তাপ মিলছে না। কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা ক্ষতির মুখে পড়েছে। বীজতলা রক্ষা করতে জমির ওপর পলিথিন ব্যবহার করছে কৃষকরা।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সৈয়দপুরসহ নীলফামারী অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২২ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। দিনে ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে বলে সূত্রটি জানায়। প্রচন্ড ঠান্ডায় স্বচ্ছলরা বাড়ির বাইরে আসছে কম, তবে খেটে খাওয়া মানুষ জীবিকার সন্ধানে বের হতে হচ্ছে। শীতের কাঁপুনি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে দিন মজুরদের। শহরের নির্মাণ কাজে আসা মধ্যবয়সী আব্দুর রহমান নামের এক নির্মাণ শ্রমিক জানান, কনকনে ঠান্ডার কারণে নিয়মিত কাজে যেতে পারছি না। তীব্র ঠান্ডা নিবারণের মত গরম কাপড়ের অভাব রয়েছে। ফলে অতিকষ্টে দিন চলছে।
এদিকে শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। এ অবস্থায় গরম কাপড়ের অভাবে শীতের কষ্টে কাহিল হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। উপজেলার শহর ও গ্রাম মিলিয়ে কমপক্ষে ২০ হাজার দুস্থ মানুষ শীতের কবলে পড়ে দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। দুস্থ মানুষের মাঝে দুই ধাপে সরকারিভাবে ৪ হাজার ৩০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদার বিপরীতে কম্বল অপ্রতুল হওয়ায় সবার ভাগ্যে তা জুটছে না। ফলে আরও বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসনে তালিকা পাঠিয়েছে সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন। অতিতে শীতের প্রকোপ বাড়লে বেসরকারি সংগঠন শীতার্তদের সহায়তায় শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসলেও এবার সে উদ্যোগ তেমন নেই বললেই চলে।
শীতের তীব্রতা বাড়ায় সবচেয়ে বেশী কষ্ট ভোগ করতে শিশু, নারী ও বয়স্করা। প্রতিদিনই সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত সব শ্রেণীর বিপুলসংখ্যক মানুষ হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে ভীড় করছে। শীত থেকে বাঁচতে শহরের ফুটপাত ও রেললাইনের পাশে বসা পুরাতন কাপড়ের দোকানে কাপড় কেনার হিড়িক পড়েছে। ফলে গরম কাপড়ের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে দোকানীরা। কয়েক দিন আগে একখন্ড গরম কাপড় ৫০/৬০ টাকায় পাওয়া গেলেও এখন দাম হাঁকা হচ্ছে ১০০ টাকার উপরে। রেললাইনে বসা পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী এসকে নোমান জানান, শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের ভীড় বেড়ে গেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।
জানতে চাইলে, সৈয়দপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবুল হাসনাত সরকার জানান, গোটা উপজেলায় শীতার্ত মানুষের সহায়তায় এ যাবত ৪ হাজার ৩০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদামত শীতবস্ত্র বরাদ্দের জন্য তালিকা জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ মিললে আরও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
0 মন্তব্যসমূহ