রাশেদ কুড়িগ্রামঃ
পরপর ৫ দফা বন্যার ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই কুড়িগ্রামে জেঁকে বসেছে শীত। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রবাহিত হচ্ছিল কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে চরম দুর্ভোগে পরেছে জেলার সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। সরজমিন সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ফারাজি পাড়ার শ্রমজীবী সামছুল হক জানান, ‘ভোর থাকি কুয়াশায় কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। তারমধ্যে ঠাণ্ডা বাতাস। প্যাটের দায়ে অটো বাইর করছি। রাস্তা-ঘাটে মানুষ নাই। ভোর থাকি বসি আছি। প্যাসেঞ্জার পাই নাই।’
এই গ্রামের জরিনা, তহিরন ও ছামিনা জানান, হামরা কামলা খাটি খাই। বানে সউগ খায়া গেইছে। এলা মাঠোত কাম নাই। বসি আছি। তারমধ্যে মরণের ঠাণ্ডা। ঘরোত যে কম্বল আছে তাকে দিয়া ঠাণ্ডা কমে না। হামাকগুলাক মোটা কাপড় দেন। গত দু’সপ্তাহ ধরে কুড়িগ্রামে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ১৩ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করলেও (শনিবার) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬.৬ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ফলে লোকজন পরেছে চরম বিপাকে। হাড় কাঁপানো শীতেই কাজে বের হতে হচ্ছে তাদেরকে। বেশির লোক কাজ পাচ্ছে না। ফলে পরিবার নিয়ে দুর্ভোগে কাটছে তাদের দিন। বিকেল থেকে শুরু হয় গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা আর হীম ঠাণ্ডা হাওয়া। পরদিন সকাল ১০-১১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলে না।
এবারের বন্যায় অনেকের জামা কাপড় নষ্ট হয়ে গেছে। আয় নেই তাই নতুন কাপড় কেনার সামর্থও নেই। ফলে পুরনো জীর্ন কাপড় দিয়েই শীত নিবারনের চেষ্টা করছে তারা। পার্শ্ববর্তী পাঁচগাছী ইউনিয়নের শুলকুর বাজার এলাকার হবি ও কামাল জানান, শীতের কারণে বৃদ্ধ ও শিশুদের বেশি কষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে দেখা দিয়ে সর্দি-কাশি-জ্বর ও পাতলা পায়খানা।
জেলা ত্রাণ ও পূণর্বাসন কর্মকতা মো. আব্দুল হাই জানান, জেলার শীতার্ত মানুষের জন্য ১ লাখ কম্বল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এরমধ্যে ৩৫ হাজার কম্বল পাওয়া গেছে। সেগুলো ৯টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি উপজেলার জন্য ৬ লাখ টাকা শীতবস্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও ৯ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে।
কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার জানান, তাপমাত্রা কয়েকদিন নিম্নগামী থাকবে। হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাতেরও সম্ভাবনা রয়েছে। শনিবার দেশে সর্বনিম্ন ৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রামে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, ইতোমধ্যেই জেলার ৯ উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়ন এবং ৩টি পৌরসভায় ৩৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৯ উপজেলার প্রত্যেকটিতে ৭ লাখ করে ৬৩ লাখ টাকা ও ৯ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেট দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ জেলায় চরাঞ্চলের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মন্ত্রণালয়ে আরো ব্যাপক চাহিদা দিয়ে বরাদ্দ চেয়েছি। অতি শীঘ্রই চলে আসবে।
0 মন্তব্যসমূহ