ঘনকুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় থমকে গেছে তিস্তা পাড়


হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাটঃ
 

তীব্র শীতে হিমালয় নিকটবর্তী লালমনিরহাটের জনজীবন থমকে দাঁড়িয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম, ভোগান্তিতে আছে নিম্ন আয়ের মানুষ। আবারও কনকনে ঠান্ডা আর ঘন কুয়াশায় তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদীর তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের কয়েক লাখ শীতার্ত মানুষের কষ্ট বেড়েছে নিদারুণ। পরিবার গুলোর শীতে পোশাক না থাকায় খড়কুটোর আগুনই ভরসা করে চলছে শীতার্ত দুস্থ মানুষ।

শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় সূর্যের দেখা মেলেও বেড়েছে কনকনে ঠান্ডা। এতে কাবু হয়ে পড়েছে তিস্তাপারের শিশু,বৃদ্ধ সকলেই। তিস্তাপারের মানুষ জন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। প্রতিদিন সকাল ৬ টা থেকে সকাল ১০ টা ও সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে দিনে ও রাতে খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিচ্ছেন তারা। ঠান্ডার কারণে কাজের সন্ধানে ঘরের বাইরে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে-খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।

একটু উষ্ণতা পাওয়ার আশায় গ্রামাঞ্চলের শীতবস্ত্রহীন মানুষ তাকিয়ে থাকছেন সূর্যের আলোর দিকে। সারাদিন ঠাণ্ডার তীব্রতার কারণে হাট-বাজারেও লোকসমাগম অনেকটাই কম। শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ১১টায় লালমনিরহাটের তাপমাত্রা ১০.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ইনচার্জ সুবল চন্দ্র রায়।

তিস্তাপাড়ের জহিরুল ইসলাম জানান, সকাল ৬ থেকে ৯ পর্যন্ত কুয়াশা ও ঠান্ডা বাতাসের কারনে ঘর থেকে বেড় হওয়া যায় না। তিস্তা পাড়ে প্রচুর শীত। এই এলাকায় বেশী ভাগ মানুষ দিনমজুর ও জেলে। ঠান্ডায় কাজ কর্ম না পেয়ে এই শীতের মৌসুমে তাদের কষ্ট বেড়ে যায়। হাতীবান্ধার উপজেলার ফকিরপাড়ার ভ্যান চালক মকবুল হোসেন বলেন, ঠাণ্ডা আর কুয়াসার জন্য সকাল থেকে ভ্যান বের করার সাহস পাইনি। শীতে যাত্রীও পাওয়া যায় না। দালালপাড়া গ্রামের আলাল মিয়া বলেন, ঠাণ্ডার কারণে কোনো কাজকর্ম করতে পারছি না। অনেক কষ্টে রাত কাটিয়েছি। গায়ে কাপড় নাই তাই বাহিরে বের হতে পারি নাই।

হাতীবান্ধার উপজেলার ফকিরপাড়ার ইউনিয়নের দিনমজুর বাহেজ আলী বলেন, এই ঠান্ডার মধ্যে কাজকাম করতে পাই না আমি গরিব মানুষ পরিষদে কম্বল আসে সবাই পায় আমি পাই না। শুধু হাতের উপর সংসার আমার। চরবেষ্টিত আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী বলেন, আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা দুর্গম। এখানে প্রায় ১২টি চর রয়েছে। এসব চরে বসবাসকারী শীতার্ত মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, দহগ্রাম ইউনিয়নের পাশেই হিমালয় তাই এই এলাকায় প্রচুর শীত আর কনকনে ঠান্ডা। দুই দফায় ২৯০টি কম্বল আমার ইউনিয়নের জন্য সরকারিভাবে পেয়েছি। তিস্তার পাড়ের শীতার্তদের মাঝে তা বিতরন করেছি।

লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা.নির্মলেন্দু রায় বলেন, হাসপাতালে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। উপজেলা মেডিকেল টিম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অন্যান্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, লালমনিরহাটের শীতার্তদের জন্য প্রায় ২১ হাজার ৭ শত কম্বল ও ৩০ লক্ষ টাকা ৫ উপজেলার জন্য শুকনা খাবার পেয়ে তা বিতরন করা হয়েছে। গত বছর আমরা অসহায় শীতার্ত মানুষের জন্য প্রায় ৫৪ হাজার কম্বর বিতরন করা হয়েছে। শীতার্ত মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ চলমান আছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ