মো. কামরুল ইসলাম কামু, পঞ্চগড়ঃ
পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়ায় দেখা মিলছেনা কাঞ্চনজঙ্ঘার। হতাশ পর্যটকরা। শীতের আমেজে ঢাকা পড়েছে কাঞ্চন জঙ্ঘা। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হওয়ার খবরে পর্যটকের ঢল নেমেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
তবে গত তিন দিন ধরে কুয়াশা ও ঝাপসা থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা তেঁতুলিয়া থেকে দেখা যায়নি। তারপরও প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমন পিপাসু হাজারো মানুষ। দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড় থেকে খালি চোখেই স্পষ্ট দেখা মেলে পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ এই পর্বতশৃঙ্গের। চলতি মৌসুমে গত এক সপ্তাহ মেঘমুক্ত আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা দৃশ্যমান হওয়ায় পর্যটকের ঢল নেমেছে তেঁতুলিয়ায়।
ভালো ভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে কেউ আবহাওয়ার খবর নিয়ে আসছেন, আবারও কেউ খবর না নিয়েই ছুটে আসছেন। এতে করে প্রচুর পর্যটকের সমাগমের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। এ সমাগমে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয় হোটেল-রেস্তোরা, আবাসিক হোটেলগুলো। ব্যস্ত হয়ে উঠেছে দুই ও তিন চাকারভ্যান আর অটোরিকশার চালকরা।
পর্যটকদের আগ্রহ কেন: কাঞ্চনজঙ্ঘা:ভারতের পাহাড়কন্যা দার্জিলিং, কাঞ্চনজঙ্ঘা আর নেপালের আকাশচুম্বী হিমালয় পর্বত দেখতে ভ্রমণ করেন হাজার হাজার পর্যটক। পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে সারা পৃথিবী থেকে সিকিম নেপাল ও পশ্চিমবঙ্গে ভীড় জমান। কাঞ্চনজঙ্ঘা মূলত হিমালয় পর্বতমালার পর্বতশৃঙ্গ।
মাউন্ট এভারেস্ট ও কেটু’র পরে এটি পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। যার উচ্চতা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট বা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার। ভারতের সিকিম রাজ্যের সঙ্গে নেপালের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে অবস্থিত নান্দনিক টুরিস্ট স্পট কাঞ্চনজঙ্ঘা। পশ্চিমবঙ্গের বহু জায়গা থেকেই দেখা যায় পাহাড়ের রানী কাঞ্চনজঙ্ঘা।
রঙ বদলায়, দৃষ্টি মোহিত করে এই হিমালয় র্পবত শূঙ্গার। শুভ্র সাদা বরফে আচ্ছাদিত পর্বতমালা কাঞ্চনজঙ্ঘা। কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর সূর্যোদয়ের দিনের প্রথম সূর্যকিরণের সৌন্দর্যের ঝিলিক মারে। ভোরে উষার সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর রোদ পড়ে সেই রোদ যেন ঠিকরে পড়ে দু’চোখে। দিনের স্বচ্ছ রৌদ্র আলোয় দেখা মেলে হিমালয়ের সর্বোচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘার নানা রুপ। একই অঙ্গে অনেক রূপ এই কাঞ্চনজঙ্ঘার। প্রথমে কালচে, এরপর ক্রমান্বয়ে টুকটুকে লাল, কমলা, হলুদ এবং সাদা রং ধারণ করে।
এদিকে যাদের নেপালের হিমালয় আর ভারতে সিকিমের পাহাড় দেখার সুযোগ হয় না তাদের জন্য দেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে খুব কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার সুযোগ রয়েছে। এজন্য কোনো দূরবীনের প্রয়োজন হয় না। খালি চোখেই কাছ হতে দেখা যায় দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় আসলেই। প্রতিবেশী দেশ ভারত কাঁটাতারে ঘিরে রাখলেও সীমান্তের খুব কাছ থেকেই দেখা যায় ভারতের পাহাড়কন্যা দার্জিলিং, কাঞ্চনজঙ্ঘা আর নেপালের আকাশচুম্বী হিমালয় পর্বত।
ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের দূরত্ব প্রায় ৫শ কিলোমিটার হলেও ভারতের সীমান্তের কোল হতে ভারতের সিকিমের দূরত্ব অতি কাছে। দেশের চারদেশীয় ব্যবসা ও পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ বন্দর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ১১ কিলোমিটার। নেপালের দূরত্ব মাত্র ৬১ কি.মি, এভারেষ্ট চূড়া ৭৫ কি:মি, ভূটান ৬৪ কি:মি:, চীন ২০০ কি:মি: ভারতীয় পশ্চিমবঙ্গে সমৃদ্ধ শহর শিলিগুড়ি ও শৈল্যশহর শহর দার্জিলিং। এ বন্দর হতে শিলিগুড়ির দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার ও দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৫৪ কিলোমিটার। পাসপোর্ট-ভিসা থাকলে যে কেউ এ বন্দর দিয়ে ঘুরে আসতে পারবেন এসব দৃষ্টিনন্দিত পর্যটন স্পটগুলো।
কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপশৈর্য কাছ হতে দেখতে প্রতিদিন ছুটে আসছেন শতশত পর্যটক। মেঘমুক্ত নীল আকাশে উত্তর-পশ্চিম কোণে দৃশ্যমান হয়ে উঠা কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখতে পেয়ে বিমোহিত হচ্ছেন। দেখছেন, ঘুরছেন, ছবি তুলছেন। প্রযুক্তির উৎকর্ষে ক্যামেরা ও স্মার্টফোনে ধারণ করা ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট ও শেয়ার করছেন।
এভাবে যতো প্রচার বাড়ছে, ততোই আকৃষ্ট হয়ে প্রতিদিন পারি দিচ্ছেন ভ্রমণ পাগল পর্যটক। এদিকে গত এক সপ্তাহে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে আসা পর্যটকদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। কথা হয় মৌরি হাসান, তানিয়া হামিদ, কাশমিরা জাহান, নিশাত, লুবনা রহমান, আব্দুল্লাহ মাহমুদ, তাহসানের সাথে। তারা জানান, সংবাদ মাধ্যম ও ফেসবুকে জেনেছি, এই সময়টাতে তেঁতুলিয়া হতে কাছ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা ও হিমালয় দেখা যায়। তাই ছুটে এসেছি।
কাছ হতে দেখতে পেয়ে খুব ভালো লেগেছে। মুগ্ধ হয়েছি। এছাড়াও এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও দর্শনীয় স্থানগুলোও মুগ্ধ করার মতো। সময় পেলে আবার ছুটে আসবো।যদিও গত তিন ধরে কুয়াশা ও মেঘের আবছা থাকায় দেখা যায়নি বহুল প্রত্যাশিত কাঞ্চনজঙ্ঘা। তাতে মন্দ ভাগ্য বলে কষ্ট পেয়েছেন অনেক ভ্রমণ পিপাসু।
তারা আবহাওয়া বার্তা না জেনেই ছুটে এসে হতাশা নিয়েই ফেরার পথে কথা হলে বলেন, নাটোরের মাসফিকুল হাসান টনি, দ্যা বেইজ ক্যাম্প বাংলাদেশ’র রাজশাহী এম্বাসেডর শাহাদত হোসেন সরকার, ফাহিম আহমেদ (সৌমিক), আব্দুল বারী রাবিন, নারায়ণগঞ্জের তানভীর আহম্মেদ ও নরসিংদীর রিফাত মোল্লা, ঢাকার তানজিলা মাহমুদ, আরফিনা নাফিস, সাঈদ ও আজমল হোসাইন। তারা জানান, কুয়াশা ও ঝাপসা থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেলাম না। তবে এটা না দেখতে পেলেও এখানকার প্রকৃতি, চিত্তবিনোদনের পর্যটনস্পটগুলো মুগ্ধ করেছে।
বাংলাবান্ধাস্থলবন্দরের একজন রাজস্ব কর্মকর্তা মনোমুগ্ধকর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেরে বেশ উৎফুল্ল। তিনি বলেন‘ আমি এই কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিডিও করেছি। আমি এটা রেখে দিবো। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন ‘ কয়েকদি;ন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাবেনা। কারন শীত সাথে কুয়াশা এই শৈত্যপ্রবাহে ঢাকা পড়ছে।
0 মন্তব্যসমূহ