ইট তৈরিতে ব্যস্ত হিলির ভাটা শ্রমিকরা


মোসলেম উদ্দিন, হিলি, দিনাজপুরঃ
 

ইট তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের হিলির ভাটা শ্রমিকরা। ভোর রাত তিনটা থেকে সকাল সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত ইট তৈরি আর দুপুর দুইটা পর্যন্ত ইট সাজানোর কাজ করছেন তারা। এথেকে দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরি আসে, এমনটিই বলেছেন শ্রমিকরা। হিলির মিঠু খাঁনের ইট-ভাটা ঘুরে দেখা যায়, আগ্রায়ণ মাসের শুরু থেকে শুরু হয়েছে ভাটায় ইট তৈরির সকল কার্যক্রম। 

ভাটার আশপাশের ইট তৈরির স্থানগুলোকে পরিস্কার করে তা সমান করা হয়েছে। ইট তৈরির জন্য লাল ও পলি জাতীয় মাটি ব্যবহার করছেন তারা। মাটিগুলোকে পানি দিয়ে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখা হয়েছে। পরে সেই ভিজা মাটিগুলোকে মেশিন দ্বারা ইট তৈরি করা মতো উপযুক্ত করছেন। আবার শ্রমিকরা ইট তৈরি করে শুকানোর জন্য সাজিয়ে রেখেছেন। 

সেগুলো শুকাতে সময় লাগবে প্রায় ৩ থেকে ৪ দিন। পরে পুড়ার জন্য ভাটার ভিতরে ইট সাজানো হবে। প্রথমে ভাটায় আগুন দিলে তা পুড়ে ইট তৈরি হতে প্রায় সময় লাগে ১৫ দিন। ভাটায় কয়েকটি মিল থাকে, আর সেই মিলগুলোতে ১৬ থেকে ২০ জন অর্থাৎ জোড়া হিসেবে শ্রমিক থাকে। অর্ধেক শ্রমিক ইট তৈরি করেন আর অর্ধেক শ্রমিক ইট বানানোর জন্য কাদা তৈরি করেন। 

এক হাজার ইট তৈরি করলে, ভাটা মালিক তার মজুরি দেন ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা। আর এই টাকার অর্ধেক করে ভাগ পায় ইট তৈরি শ্রমিক ও কাদা তৈরি শ্রমিকরা। কথা হয় রংপুরের মিঠা পুকুর থেকে আসা মোস্তাফিজুরের সাথে, তিনি বলেন, বছরে ৪ থেকে সাড়ে ৪ মাস আমাদের এই ইট বানানোর কাজ হয়ে থাকে। 

দিনে ২৬০০ থেকে ২৮০০ ইট তৈরি করে থাকি। তা থেকে হাজিরা পাই সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার। এথেকে প্রতিদিন ২০০ টাকা আমার খরচ হয় আর বাঁকি টাকাটা বাড়ির জন্য জমা রাখি। ১৫ দিন পর পর বাড়িতে যায়। বছরের বাঁকি মাসগুলো বাড়ির আবদি জমি আবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি। 

নবাবগঞ্জ থেকে আসা কাদা তৈরির শ্রমিক হাসান আলী বলেন, প্রতিদিন বিকেলে মাটির খামাল থেকে লাল ও পলিমাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখি। পরের দিন সকালে তা মেশিন দিয়ে কাদা তৈরি করে, ইট তৈরি করা শ্রমিকদের দেয়। আমরা ৬২০ টাকা হাজারে ইট তৈরি করি। কাদা তৈরি করতে আমাদের বেশি শ্রম দিতে হয় তাই আমরা ৩২০ টাকা ভাগ নেয় আর ইট তৈরি শ্রমিকদের ৩০০ টাকা দিয়ে থাকি। 

এবিষয়ে মিঠু খাঁনের ভাটা পরিচালক মনা মিয়া বলেন, আমার এই ভাটায় বর্তমান ৪ টি ইট তৈরির মিলে ৬৪ জন ইট তৈরি শ্রমিক রয়েছে। ভাটা মৌসুম আসার আগে প্রতিটি মিল শ্রমিকদের দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা অগ্রীম দিয়ে আনতে হয়। 

শ্রমিকরা বর্তমান ইট তৈরিতে ব্যস্ত এবং তা সাজিয়ে শুকানোর কাজ করছেন। আমার ভাটায় ইট দিয়ে সাজাতে প্রায় ৬ লাখ ইট লাগে। তবে এখনও সব ইট প্রস্তুত হয়নি। আশা করছি আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে ভাটায় আগুন দিতে পারবো। এবছর ১ নাম্বার ইট ৭ থেকে ৮ হাজার, ২ নাম্বার ৬ থেকে ৭ হাজার ও ৩ নাম্বার ইট ৫ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ