মো. কামরুল ইসলাম কামু, পঞ্চগড়ঃ
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের কুদ্দুস মাস্টার ও তার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট ওই এলাকার অনেক মানুষ। জমির জাল দলিল তৈরী করে মানুষের জমি দখল করাই এই বাহিনীর কাজ। স্থানীয় কালিয়াগঞ্জ বাজারের পাশে মানুষের জমি দখল করে কয়েকটি জায়গা টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে কুদ্দুস বাহিনী।
কুদ্দুস মাস্টার যে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন সেই স্কুলের জমি জাল দলিল তৈরী করে দখলে রেখেছিলেন অনেকদিন। কেউ তার কাজে বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিয়ে তার রাজত্ব কায়েম করেছে।
ওই এলাকার কালিয়াগঞ্জ গ্রামের মৃত মালেক লস্করের স্ত্রী হালিমা বেগম সম্প্রতি পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে তিনি জানান, ওই ইউনিয়নের ডানাকাটা মৌজার ৪ নং খতিয়ানের দুইটি দাগের ১.১৫ একর জমি ক্রয় এবং তার ভাতিজা ওয়ারিশ সূত্রে ভোগদখল করে আসছেন। একই গ্রামের দানেশ আলীর ছেলে আব্দুল কুদ্দুসের নজর পড়ে ওই জমির ওপর।
কুদ্দুস ওই জমির জাল দলিল তৈরী করে তার বাহিনী দিয়ে জমি দখলের পায়তারা করতে থাকে। তিনি উক্ত জমি নিজের দাবি করে হালচাষে বাধা সৃষ্টি করে। এ নিয়ে হালিমা খাতুন পঞ্চগড় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে একটি বাটোয়ারা ও একটি দলিল বাতিলের মামলা করেন। মামলা দুটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। কুদ্দুস মাস্টার বিচারাধীন মামলা দুুটি তুলে নিতে তার বাহিনী দিয়ে বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে।
এতে কোন কাজ না হওয়ায় গত ৬ মার্চ বিকেলে তার বাহিনী নিয়ে এসে হালিমার বাড়িঘর ভাংচুর করে। এ বিষয়ে বোদা থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নিয়ে আদালতে মামলা করার কথা বলেন।
এ নিয়ে হালিমার ভাতিজা আবুল কাশেম বাদী হয়ে গত ৮ মার্চ আমলী আদালত-৩, বোদা, পঞ্চগড় এ একটি মামলা দায়ের করলে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোদা থানার এসআই জাহিদ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে কালক্ষেপন করতে থাকেন।
হালিমা অভিযোগে বলেন, আমাদের মামলা বোদা থানা কর্তৃপক্ষ না নিলেও কুদ্দুস গং আমাদের জমিতে একটি ঘর তুলে তা নিজেরাই ভাঙচুর করে গত ৯ আগষ্ট বোদা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাহিদ মামলা দায়েরের একদিন আগেই ৮ আগষ্ট মহসিন আলীকে আটক করে।
পরদিন মামলা দায়েরের পর ওই মামলায় ১ নং আসামী করে তাকে আদালতে সোপর্দ করে। এর আগেও কুদ্দুস গং আমাদের বিরুদ্ধে আরও চারটি মিথ্যা মামলা করে। আদালত কর্তৃক সকল মামলা মিথ্যা প্রমানিত হয়। তারপরও কুদ্দুস বাহিনী প্রতিনিয়ত আমাদের বিভিন্ন ধরণের হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে। এলাকার মানুষের অভিযোগ, শুধু হালিমা বেগমের নয়; কুদ্দুস মাস্টার জমির জাল দলির তৈরী করে ওই এলাকার অনেক মানুষের জমি দখল করে আছে।
কুদ্দুস মাস্টার স্থানীয় কালিয়াগঞ্জ নবারুণ দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকাকালে সীমান্ত সংলগ্ন গোপিপাড়া এলাকায় জাল দলিল তৈরী করে স্কুলের দুই বিঘা জমি দখল করে নেয়। কুদ্দুস মাস্টার অবসরে যাওয়ার পর নতুন প্রধান শিক্ষক নতুন কমিটির মাধ্যমে ওই জমি উদ্ধার করে স্কুলের আয়ত্বে নিয়ে আসেন। এছাড়া কুদ্দুস বাহিনী একই এলাকার জয়নাল আবেদীন, মিঠু শেখ, লতিফ শেখ, মেহের আলী ও তছর শেখের ওয়ারিশদের জমি জাল দলিল তৈরী করে জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে।হালিমা বেগম জানান, আমি নিজে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের চাকুরী করি।
আমার ছেলে নীলফামারীতে চাকুরী করে। এ কারণে আমরা বাড়িতে থাকতে পারি না। এই সুযোগে কুদ্দুস তার বাহিনী দিয়ে আমাদের কিছু জমি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। বাকি জমিগুলোও দখলের চেষ্টা করছে। আমরা থানা থেকে কোন প্রতিকার পাচ্ছি না। বাধ্য হয়ে আমি ন্যায় বিচারের স্বার্থে পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে আবেদন করেছি। আশা করছি তিনি আমাদের এহেন কার্যকলাপ থেকে রক্ষা করবেন।
এ বিষয়ে কথা বললে আব্দুল কুদ্দুস তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্মীকার করে বলেন, আমি জাল দলিল তৈরী করে কারো জমি দখল করিনি। আমার কেনা সম্পত্তি আমার দখলে রয়েছে। আমি জমির মূল মালিক ও তার ওয়ারিশদের কাছ থেকে ১৯৭২ সালে জমি ক্রয় করেছি। নিয়মিত খাজনা নেই, আমার নামে খারিজও আছে। আর অভিযোগকারী এক ওয়ারিশের কাছে হালিমা বেগম ২০১১ সালে জমি ক্রয় করেছে। তাই তার অভিযোগের কোন ভিত্তি নাই। ওই মহিলা আমার নামে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করে আমাকে হয়রানী করছে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ আমি পেয়েছি। আমরা এটি যাচাই বাছাই করে দেখছি। অভিযোগকারী বোদা থানায় ডাকাতি মামলা করার কথা বললেও বোদা থানায় কোন ডাকাতি মামলা হয়নি। সেখানে ওই ঘটনায় মারামারির মামলা হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। পুলিশ আইন অনুযায়ী কাজ করছে।
0 মন্তব্যসমূহ