মিজানুর রহমান মিলন, স্টাফ রিপোর্টারঃ
সৈয়দপুরসহ নীলফামারী জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তালিকা ছোট হলেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে না। দিনের পর দিন এ সংখ্যা বাড়ছেই। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আক্রান্তের তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন আক্রান্তের নাম।
সৈয়দপুরে এ পর্যন্ত ৭৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১১৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৬ জন। করোনায় আক্রান্তের মিছিল ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেলেও মানুষের মাঝে স্বাস্থ্যবিধি মানা বা মানানোর কোন উদ্যোগ নেই জনবহুল সৈয়দপুর শহরে। করোনা প্রতিরোধে সরকারীভাবে নতুন করে চার নির্দেশনা জারি করে তা মেনে চলতে জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে জারি করা নির্দেশনা মানাতে সৈয়দপুর উপজেলা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি নিরবতা পালন করছে। অন্যান্য উপজেলায় করোনা প্রতিরোধে ব্যাপক তৎপরতা চললেও সৈয়দপুরে চলছে ঢিলেঢালাভাব। অথচ প্রতিদিনই সৈয়দপুরসহ গোটা নীলফামারী জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনাকে কেউই পাত্তা দিচ্ছেন না।
পরিস্থিতি এমন করোনা থেকে সুরক্ষা পেতে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যু নিয়তির হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনে হরহামেশাই বাইরে বের হচ্ছেন সব শ্রেণীর মানুষ। বিশেষ করে প্রথম দিকে করোনা প্রতিরোধে সক্ষম অস্ত্র মাস্ক পরা মানুষের সংখ্যা চোখে পড়ার মত হলেও এখন মাস্ক পরার সংখ্যা দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে।
এদিকে জীবিকার তাগিদে সরকারিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দিয়ে সবকিছু খুলে দেয়ার পর আগের মতই চলাফেরা করছে সবাই। কেউ সরকারি নির্দেশনা মানছেনা। ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেও করোনা ভুলতে বসেছে সৈয়দপুরের জনসাধারণ। সব মিলিয়ে সরকারি স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা অমান্য করে চলাফেরা করছেন মানুষজন।
জানা যায়, সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা সর্বশেষ নির্দেশনায় সংক্রমণ প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ আইনে কেউ মাস্ক না পরে বের হলে জেল অথবা জরিমানা বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবেন। আইনের বাইরেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক পরিধান করতে মানুষকে প্রতিনিয়ত উদ্বুদ্ধ করছেন।
অথচ এ অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেনী পেশার অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরিধানকে তোয়াক্কা না করে সর্বত্র স্বাভাবিকভাবে চলাচল করছেন। কেউ সংক্রমণ প্রতিরোধের এই অতি দরকারি সতর্কতা আমলেই নিচ্ছেন না।
শহরের মূল সড়ক ও বাজারে দেখা যায়, কেউ কেউ মাস্ক পরলেও অনেকের মুখে মাস্ক নেই। অনেকে কথা বলার সময় মাস্ক খুলে ফেলছেন। বাজারের কয়েকজন দোকানীরা বলেন, আমরা ক্রেতাদের দূরে দাঁড়াতে ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলি। কিন্তু ক্রেতারা কোন কথাই শুনতে চান না। বাজারে পণ্য কিনতে আসা আনোয়ার নামে এক ক্রেতা জানান, সৈয়দপুরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও মানুষ সচেতন হচ্ছেন না।
তিনি বাইরে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রশাসনের অভিযান চালানোর তাগিদ দেন। অপরদিকে গ্রামাঞ্চলের হাট বাজারে মানুষজন মুখে মাস্কতো লাগাচ্ছেই না, শারীরিক দূরত্ব পর্যন্ত বজায় রাখছে না। জীবন- জীবিকার জন্য মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ, বস্তি ও ক্যাম্পবাসী মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই।
শহরের প্রতিটি হোটেল রেস্তোরাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মানার সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছেনা। চলছে সব আগের মতই। এ কারণেই অনেকেই নিজের অজান্তে করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন। এদিকে রংপুর অঞ্চলে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা প্রশাসন জনগনকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে তৎপর হয়ে উঠেছে।
ওইসব উপজেলায় মাস্ক পড়াতে সচেতন করতে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালতও পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ সৈয়দপুরে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কমিটি থাকলেও বর্তমানে তাদের কোন তৎপরতাই দেখা যাচ্ছে না। ফলে সৈয়দপুরে মাস্ক পরার বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে। অথচ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের বড় অস্ত্র মাস্ক পরিধান করা। কিন্তু প্রশাসনিকভাবে মানুষকে সচেতন করার কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে না।
এমনকি সরকার কর্তৃক জারি করা মাস্ক পরার নির্দেশনা মানাতে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। ফলে সৈয়দপুরে গভীররাত পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকছে। যানবাহনসহ মানুষজনের চলাচলও অব্যাহত রয়েছে। আর এসব কারণেই সৈয়দপুরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন শহরের বিশিষ্টজনরা। তারা মাস্ক পরিধানে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন।
স্বাস্থ্যবিধি ও মাস্ক পরার বিষয়ে জানতে চাইলে শহরের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক জানান, বাইরে চলাচলে অবশ্যই মাস্ক পরা এবং সাধ্যমত শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা উচিৎ। এর অন্যথা হলে সংক্রমণের বিপদ বাড়বে। তিনি করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গঠিত উপজেলা কমিটিসহ প্রশাসনকে মাস্ক পরিধানের বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ্যবিধির নির্দেশনা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু মো. আলেমুল বাশার সৈয়দপুরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গণসচেতনতা ও মাস্ক পরিধান করার বিকল্প নেই। বিষয়টি কেবল স্বাস্থ্য বিভাগ একা পালন করতে পারবে না। এর জন্য প্রশাসনসহ সামাজিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
তিনি বলেন গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি বিষয়টি তুলে ধরেছেন। তিনি সভায় করোনা প্রতিরোধ গণসচেতনতা এবং জনসাধারণকে মাস্ক পরিধান করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন। আশা করি এ নিয়ে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ কমিটিসহ উপজেলা প্রশাসন শিগগির কাজ শুরু করবে।
0 মন্তব্যসমূহ