রতন কুমার রায়, স্টাফ রিপোর্টার:
মো. নুরুজ্জামান রুপক (৩২) নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সদর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে পরিদর্শক পদে বর্তমানে কর্মরত। বাবা বেলাল উদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের স্বাস্থ্য পরিদর্শক ইনচার্জ। রুপক চাকুরীর পাশাপাশি অবসর সময়ে ফ্রিল্যান্সিং করে প্রতি মাসে ৮০ হতে এক লক্ষ টাকা উপার্জন করেন। এখন সে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে অনলাইনে কাজ করে উপার্জন করার।
রুপক জানান, বর্তমানে সরকারী চাকুরী যেন সোনার হরিণ। হাজার হাজার শিক্ষিতরা চাকুরী না পেয়ে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি চাকুরী করার পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করে অধিক অর্থ উপার্জন করছি। অনলাইনে প্রচুর কাজ রয়েছে। কাজ জানা থাকলে এখান হতে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করা সম্ভব। তাই চাকরীর পিছনে না ঘুরে একটা কোর্স করে অনলাইনে কাজ করেও সাবলম্বী হওয়া যায় বলে তিনি জানান।
তিনি তার অতীত জীবনের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন,এক সময় পকেটে ১০ টাকাও ছিল না। অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিয়ে করি। ওই সময় কোন উপার্জনের পথ ছিল না। ডোমার পৌরসভার চিকনমাটি মোড় এলাকায় বাবার পয়ত্রিক বাড়ীতে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করি। কোন উপার্জন না থাকায় বাবার উপার্জনেই নির্ভরশীল ছিলাম। পরে মামার ব্যবসা দেখাশুনা করি। সেখান হতে সামান্য কিছু টাকা বেতন পাই। এভাবেই চলতে থাকে দিন। এরপর প্রথম পুত্র সন্তানের বাবা হলাম।
খরচ আরো বেড়ে যায়। বাবার কাছ থেকে আর কত চাইবো? মাঝে মধ্যে লজ্জ্বাও লাগে। উপায় তো নাই। কোন কিছু একটা করতেই হবে। ওয়েব ডিজাইন কোর্স করে কাজের সন্ধান করি। কিন্তু অনলাইন বা অফলাইনে কোন কাজ পাই না। নাছরবান্দার মতো লেগেই থাকি। অবশেষে ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরের ডোমার ইউনিয়ন পরিদর্শক হিসেবে সরকারী চাকরী হয় আমার। চাকুরী পাওয়ার পর ভাবতে থাকি, এতোদিন অনলাইনে কাজ করার জন্য শ্রম দিয়েছি। সে শ্রম কি বৃথা যাবে! না, কাজে লাগাতেই হবে সেই শ্রম ও অভিজ্ঞতা।
চাকরীর পাশাপাশি অবসরে ইউটিউব হতে ডাটা এন্ট্রির কাজ শিখি। পরের বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে অনলাইন মার্কেটপ্লেস “ফাইভার” হতে একশত ডলারের একটি কাজের অর্ডার পাই। তখন থেকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। মাসে দেড় হতে দুই হাজার ডলার পর্যন্ত উপার্জন করতে সক্ষম হই। অনলাইন থেকে কাজের অর্ডার নিয়ে চারজন বেকার যুবকের মাধ্যমে কমিশনে কাজ করছি। এতে ওই বেকারদের মাসে পাঁচ হতে ১০ হাজার টাকা উপার্জন হয়। করোনা মহামারি শুরু হলে কাজ কিছুটা কমে যায়। তারপরও প্রতিমাসে এক হাজার ডলারের মতো উপার্জন হয়। তিনি জানান, অনলাইনে কাজের অভাব নাই। কিন্তু দক্ষ কাজের লোকের অভাব আছে।
ফ্রিল্যান্সার রুপক সমাজের শিক্ষিত বেকার যুবকদের চাকরী খোঁজার পাশাপাশি অনলাইনে উপার্জনের বিভিন্ন কোর্স করে উপার্জন করার আহবান জানান। তিনি অনলাইন ই-লার্নিং প্লাটফর্ম “ইন্সট্রাকটরী” তে কোর্স করান নতুনদের। আবার অনেককে হাতে-কলমেও শেখান। এ কোর্সসহ বিভিন্ন কোর্স করে শিক্ষিত যুবক-যুবতী ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়ার আহবান জানান রুপক।
0 মন্তব্যসমূহ