গাইবান্ধা প্রতিনিধিঃ
গাইবান্ধার যমুনা ব্রহ্মপুত্র নদের করাল গ্রাসে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়ার ইউনিয়নের গলনা চরের ঝানঝাইড় আত তাওহীদ আস-সালাফিয়া মাদ্রাসাটি নদীগর্ভে বিলিনের পথে। নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় মাদ্রাসাটি ভেঙ্গে আসবাবপত্র ও টিনের চালাগুলো জবুথবু করে খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে।
ব্যক্তি মালিকানা ও স্থানীয় ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতায় পরিচালিত মাদ্রাসাটির শিক্ষা ব্যবস্থা, নদী ভাঙ্গন ও করোনাকালীন সময়ে বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল। ইতোমধ্যে উক্ত চরের শতাধিক ঘর বাড়ি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় মাদ্রাসাটি অন্যত্র স্থানান্তরে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের নিকট আর্থিক সহযোগীতার জোরদাবি জানিয়েছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা।
এছাড়াও অত্র উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গনের ফলে এরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বতসবাড়ী ও কবরস্থান এবং সমাধি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাচ্ছে । অসহায়ের মতো নির্বাক চোখে ছল ছল নদীর মতো শরীর বয়ে যাচ্ছে চোখের পানি।
ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৩ সাল প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম (আবু সামাদ) এর উদ্যোগে, প্রধান পৃষ্ঠপোষক ড.সাইফুল্লাহ মাদানী’র আর্থিক সহযোগীতায় মাদ্রাসাটি স্থাপন করা হয়।
পরবর্তীতে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গে সাহায্য সহযোগীতায় মাদ্রাসাটিতে জামাতে মেশকাত (১ম থেকে অষ্টম শ্রেনী) পর্যন্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়। মাদ্রাসাটির শিক্ষা কার্যক্রম এলাকার শিক্ষার্থীসহ পার্শ্ববর্তী জেলাসমূহের শিক্ষার্থীদের মাঝে বহুমুখী শিক্ষার গুনগত মানের বিস্তার ঘটায় ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থী বাড়তে থাকে।
শুভাকাংখী ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সহযোগিতায় ধাপেধাপে পরিবর্তিত হতে থাকে মাদ্রাসার অবকাঠামো । দু’শ হাত লম্বা আবাসিক অনাবাসিক মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রত্যান্ত চরাঞ্চলের মানুষের শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটলেও পিছু ছাড়েনি রাক্ষুসে যমুনার ভাঙ্গন দুর্ভোগ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গন ক্রমান্বয়ে মাদ্রাসার দিকে এগিয়ে আসছে। বর্তমানে মাদ্রাসা মাঠে স্তুপ করে রাখা মালপত্র জরুরী ভিত্তিতে অন্যত্র সরানো এবং নতুন জায়গায় মাদ্রাসাটি স্থানান্তর নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সুধিমহল উদ্বিগ্ন হলেও আর্থিক সংকটে নতুন জায়গা কিনে মাদ্রাসা স্থাপন করা প্রধান শিক্ষকের মরার উপর খড়ার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে করে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল।
অতি জরুরী ভিত্তিতে স্তুপ করে রাখা বাঁশ, কাঠ, টিন, চেয়ার-টেবিল, ইট ও কংক্রিটের খুটি অন্যত্র সরানো না হলে যমুনা গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। মাদ্রাসার ছাত্র হাফেজ ওবাইদুল্লাহ বলেন, আমি এই মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে পাগড়ি পেয়েছি।বর্তমানে মাদ্রাসাটি অন্যত্র পূন:স্থাপন করে শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই। অত্র মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর অভিভাবক রফিকুল ইসলাম জানান,আমি এই প্রতিষ্ঠানের পড়ালেখার গুনগত মান ভালজেনেই কুড়িগ্রাম থেকে আমার মেয়েকে এখানে ভর্তি করাই।
কিন্তু দুঃখের বিষয় সর্বগ্রাসী যমুনার ভাঙ্গনে মাদ্রাসাটি বিলিনের পথে। মাদ্রাসাটির দুর্দশার কারণ দেখে নিজেই সেচ্ছাশ্রম দিচ্ছি। এই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এই চরাঞ্চলে দক্ষ শিক্ষক দ্বারা অল্প সময়ে গুনগত শিক্ষা কার্যক্রম বিস্তারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
বর্তমানে প্রায় ৩শতাধিক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নিয়ে আমি চিন্তিত। আর্থিক সংকট নিরশনসহ প্রতিষ্ঠানটি অন্যত্র পূন:স্থাপন করতে সমাজের বিত্তবানসহ শিক্ষা কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা করে নতুন কোন স্থানে প্রতিষ্ঠানটি নেয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।
ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম সেলিম পারভেজ এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে জানান, আমি অনেক আগে উক্ত প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করি। উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি হিসেবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভালো-মন্দ বিষয়ে আমাকে জানানো হয়। তবে এই প্রতিষ্ঠানটি নদী ভাঙ্গনের শিকার এ বিষয়ে আমি অবগত না। বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
0 মন্তব্যসমূহ