কাজী সামছুজ্জোহা মিলন,নওগাঁ
নওগাঁর মহাদেবপুরে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি পিইডিপি-৪ প্রকল্পের আওতায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ২ কোটি টাকার প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলোর কাজ না করেই শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে ভুয়া ভাউচার দাখিল করা হয়েছে। কাজ করা না হলেও প্রকল্প থেকে সমুদয় টাকা উত্তোলন করে অবৈধভাবে শিক্ষা অফিসারের একাউন্টে রাখা হয়েছে। প্রকাশ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দাতা সংস্থা জাইকা, ইউএসএইড ও ইউকে এইডের অর্থায়নে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ১৩৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রুটিন মেরামত কাজের জন্য প্রতিটিতে ৪০ হাজার টাকা করে মোট ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা, ক্ষুদ্র মেরামত বাবদ ৪৭ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২ লাখ টাকা করে ৯৪ লাখ টাকা ও ২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড় লাখ টাকা করে তিন লাখ টাকা, ১০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ওয়াশ ব্লক কাজের জন্য প্রত্যেকটিতে ২০ হাজার টাকা করে ২ লাখ টাকা এবং নিয়মিত মেরামত বাবদ স্লিপে ১৩৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালযের কোনটিতে ৫০ হাজার টাকা ও কোনটিতে ৭০ হাজার টাকা করে সর্বমোট ২ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ করা হয়। অর্থবছরের শুরুতেই এই অর্থ বরাদ্দ করা হলেও বিদ্যালয় গুলো নির্বাচন করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দীর্ঘ ১০ মাস সময় ব্যয় করে। অর্থবছর শেষ হবার মাত্র দেড় মাস আগে বিদ্যালয় গুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়। বিদ্যালয়গুলোকে জানানো হয়, নিজের টাকায় প্রকল্পের কাজ শেষ করে ভাউচার দাখিল করতে হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা সদরে অবস্থিত মহাদেবপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহান জানান, বিদ্যালয়ে জায়গা না থাকায় শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া ফাজিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আইলন জানান, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বিল ভাউচার দাখিল করা হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নিয়োাগ করা প্রতিনিধির দেয়া প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হওয়া সংক্রান্ত সনদ প্রাপ্তির পর এই অর্থ ছাড় করা হবে। গত ৩০ জুন এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার বিধান ছিল। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন প্রকল্পের কাজই সমাপ্ত হয়নি। কোন কোনটির কাজ শুরুই হয়নি। একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন খুব দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। ২৩ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের কথা থাকলেও একটিতেও শুরু হয়নি। কিন্তু তালিকাভুক্ত বিদ্যালয়গুলো থেকে কাজ একশভাগ সমাপ্ত হয়েছে বলে ভাউচার সংগ্রহ করা হয়েছে। এই ভুয়া ভাউচার দাখিল করে প্রকল্পের সমুদয় টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বরাদ্দ করা টাকা উত্তোলন করতে বিদ্যালয় গুলোর প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিরা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে প্রতিদিন ধরনা দিচ্ছেন।জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাযহারুল ইসলাম জানান, ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারলে প্রকল্পের বরাদ্দ করা টাকা ল্যাপস হয়ে যাবে এবং তা ফেরত পাঠাতে হবে। তাই তিনি অ্যাডভান্স ভাউচার সংগ্রহ করে প্রকল্পের সমুদয় টাকা উত্তোলন করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের একাউন্টে জমা রেখেছেন। প্রকল্প গুলোর কাজ শেষ হলে সেখান থেকে বিল পরিশোধ করা হবে। কিন্তু এই পরিশোধ দেখানো হবে ব্যাকডেটে, ৩০ জুনের মধ্যে। নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইউসুফ রেজা জানান, ৩০ জুনের পরে কোনক্রমেই প্রকল্পের কাজ করা যাবে না। প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করে শিক্ষা অফিসারের একাউন্টে রাখা বিধিসম্মত নয় বলেও তিনি জানান। তিনি জানান, ৩০ জুনের পর প্রকল্পের অব্যয়িত টাকা ল্যাপস হিসেবে গণ্য হবে এবং তা ফেরত যাবে। সরকারি নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মহাদেবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কিভাবে ভুয়া ভাউচার দাখিল করে শতভাগ কাজ সমাপ্তির বিল উত্তোলন করলেন, অর্থবছর শেষ হবার ৩ সপ্তাহ পরেও বরাদ্দ করা টাকা স্কুলগুলোর মধ্যে বিতরণ না করে কিভাবে তিনি একাউন্টে জমা রাখলেন তার কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। স্থানীয় সুধীমহল বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে সুষ্ঠু তদন্ত করে অবৈধভাবে দাখিল করা ভুয়া ভাউচার গুলো সনাক্ত করে প্রকল্পের অব্যয়িত টাকা ফেরত পাঠানোর দাবি জানিয়েছেন।
0 মন্তব্যসমূহ