ফুলছড়িতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে গাইবান্ধায় মানববন্ধন ও পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন

আশরাফুল ইসলাম গাইবান্ধাঃ 
গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার নানা অনিয়ম -দুর্নীতির প্রতিবাদে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

জেলার ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদে ১৩ জুন শনিবার উপজেলা পরিষদ ভূক্ত সকল ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের উদ্যোগে গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন এবং পরে প্রেসক্লাব সংলগ্ন সড়কে এক মানববন্ধনের কর্মসূচী পালন করে। 

ফুলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মন্ডল সংবাদ সম্মেলনে লিখিব বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ উপজেলার নানা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছেন। 

এতে নদী ভাঙ্গন কবলিত এই অবহেলিত উপজেলার মানুষ উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছে। লিখিত বক্তব্যে আরও উল্ল্খে করা হয়, টিআর প্রকল্পের আওতায় টিন বিতরণে তিনি অন্যায়ভাবে নিজের অংশ দাবি করেন। এছাড়া টিআর কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের শতকরা ৮০ ভাগ নিজে দাবি করেন এবং বাকি ২০ ভাগ চেয়ারম্যানদের প্রদান করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 


তার এই অন্যায় দাবি না মানায় তিনি এ পর্যন্ত কোন নথিতে স্বাক্ষর করবে না মর্মে হুমকি দেয়। এছাড়া এই উপজেলার নতুন প্রায় ৭শ’ জন বয়স্ক ও বিধবা ভাতার নামের তালিকা উপজেলা পরিষদে উত্থাপন করা হলেও দীর্ঘ এক বছর অতিক্রান্ত হলেও চেয়ারম্যান তাতে স্বাক্ষর করছেন না। 

এতে এ সমস্ত বয়স্ক, বিধবা পরিবারগুলো সরকারি ভাতা না পেয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এছাড়া এলাকার জনপ্রিয় এমপি ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার সম্পর্কে নানা অশালীন মন্তব্য করেন এবং এ সমস্ত প্রকল্পের ব্যাপারে নিজে অন্যায় করে তাকে দোষারোপ করেন। ফলে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের সকল চেয়ারম্যানরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। 

সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ১১ জুন উপজেলা পরিষদের অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় কোন সিদ্ধান্ত  গ্রহণ না করেই তিনি সভা থেকে প্রস্থান করেন। পরবর্তীতে তিনি বহিরাগত লোকজন দিয়ে সভায় উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানদের লাঞ্ছিত করার উদ্দেশ্যে উপজেলা পরিষদ হলরুমেই আক্রমণ করেন। 

এসময় চেয়ারম্যান নিজে এবং তার লোকজন মুহুর্তেই ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষ ভাংচুরের উদ্দেশ্যে চেয়ার, ফুলের টবসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ছুড়ে মারে এবং ভাংচুর করে। 

একজন জনপ্রতিনিধির এধরণের আচরণ অনভিপ্রেত, নৈতিক স্থালনজনিত ও ফৌজদারি অপরাধের শামিল বলে উল্লেখ করে তারা উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। 

এব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে তারা জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত আবেদনও করেছেন বলে উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. হুকুম আলী, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আঞ্জুমনোয়ারা বেগম, কঞ্চিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. লিটন মিয়া, উড়িয়া চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন, উদাখালী চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন, গজারিয়া চেয়ারম্যান মো. শামছুল আলম, এরেন্ডবাড়ি চেয়ারম্যান মো. আজিজুর রহমান, ফজলুপুর চেয়ারম্যান আবু হানিফ প্রামানিক প্রমুখ।  

অপরদিকে এদিন  গাইবান্ধা  জেলার ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের নিয়ম বহির্ভূত কার্যকলাপ ও অনিয়ম-দুর্নীতি এবং স্থানীয় এমপি ডেপুটি স্পীকারের অন্যায় হস্তক্ষেপের ফলে নদী ভাঙ্গন কবলিত দরিদ্রপ্রীড়িত ফুলছড়ি উপজেলার দরিদ্র মানুষ সরকারের প্রকৃত উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

এর প্রতিকার দাবিতে শনিবার ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ ও এলাকার লোকজনদের পক্ষ থেকে গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, গত ১১ জুন ফুলছড়ি উপজেলার প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে পূর্ব নির্ধারিত উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসারের আহবানে চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সভার শুরুতেই ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে উপজেলায় কাবিখা, টিআর, সাধারণ উন্নয়ন ও সোলার বরাদ্দের বিভাজন নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় শতকরা ৮০ বরাদ্দ ফুলছড়ি উপজেলাধীন বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নামে বিভাজন করা হয়। অবশিষ্ট শতকরা ২০ ভাগ বরাদ্দের বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বি মিয়া এমপির নিজ স্বাক্ষরিত ও সীল মোহরকৃত একটি ডিও লেটার উপস্থাপন করেন । 

এবং উপজেলা পরিষদের উল্লেখিত প্রকল্প সমূহের শতকরা ২০ ভাগ জাতীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে বিতরণের দাবি জানান। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ উপজেলা পরিষদের নামে উক্ত ২০% বরাদ্দে সংসদ সদস্যের মাধ্যমে বিতরণের ব্যাপারে আইনগত ব্যাখ্যা জেনে 

পরবর্তীতে উক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করার প্রস্তাব করেন। কেননা বিগত সময়ের উপজেলা পরিষদের বরাদ্দে জাতীয় সংসদ সদস্যের এহেন অন্যায় হস্তক্ষেপ করার ফলে এলাকার স্বাভাবিক উন্নয়ন ব্যাহতসহ উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নিজেরা কোন কাজ করতে না পেরে এলাকার মানুষের কাছে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। উল্লেখ্য, ওইদিন সভা শেষে উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক ভবনের বারান্দার উপর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজের উপর অতর্কিত হামলা চালায় ।

এবং তাকে লাঞ্ছিত করে সংসদ সদস্যের সমর্থিত সস্ত্রাসী লোকজন। এব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান ফুলছড়ি থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। অথচ হামলাকারিদের যোগসাজসে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সাধারণ নিরীহ জনগণের নামে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের একজন কর্মচারি একটি মিথ্যা ভিত্তিহীন বানোয়াট অভিযোগ দাখিল করেন। 


এব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে এর তীব্র প্রতিবাদ ও অবিলম্বে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে করোনা মহামারি আকার ধারণ করায় ফুলছড়ি উপজেলার নিম্ন আয়ের গরীব, অসহায়, কর্মহীন মানষের জন্য ১৫২ মে. টন চাল, শিশু খাদ্যসহ আনুমানিক ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। 

উক্ত বরাদ্দগুলোর বিষয়ে উপজেলা পরিষদকে পাশ কাটিয়ে সংসদ সদস্যের নিজের একক সিদ্ধান্তে বিতরণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার সরাসরি উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানান, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকারের মতামতের বাইরে তাদের কিছু করার নাই। 

বর্তমানে কুচনীর বিল, কাঠুর বিল ও কাঠুর বিল খনন কাজের প্রায় এক কোটি টাকার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। সেই বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে ২০ লাখ টাকার কাজও হয় নাই এমনকি এব্যাপারে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিষয়টি লিখিত বা মৌখিকভাবেও জানানো হয়নি। 

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের ভেতরে একটি পুকুর খননের জন্য প্রায় ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ হলেও উপজেলা মৎস্য অফিসার তার পছন্দীয় বহিরাগত লোকদের নিয়ে একটি পিআইসি কমিটি করেন। উপজেলা পরিষদের সাথে কোন আলোচনা না করেই এ ধরণের কমিটি করায় পরবর্তীতে প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে। 

কিন্তু বিভিন্ন সরকারি জলাশয়ে নির্ধারিত মাছের পোনা অবমুক্ত করার কথা থাকলেও মৎস্য বিভাগ তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন করেননি। এছাড়া দেশের বর্তমান সার্বিক অবস্থায় মানুষের মুখে খাদ্য তুলে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ১০ টাকা কেজি চাল ডিলারদের মাধ্যমে বিতরণের কথা। 

কিন্তু বর্তমান সরকার ডিলারদের প্রদানকৃত সুবিধাভোগী নামের তালিকা যাচাই বাছাই করতে গিয়ে দেখা যায় ফুলছড়ি উপজেলার প্রত্যেকটি ডিলারের বিরুদ্ধে শত শত রেশন কার্ড নিজেদের কবজায় রেখে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে গরীব, অসহায় মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত চাল লুটপাট করে আসছে। 

অথচ এব্যাপারে কোন আইনানুগ ব্যবস্থা উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে করা হয়নি। সেজন্য অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দুর্নীতিবাজ ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল করার দাবি জানানো হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান আরও উল্লেখ করেন, উপজেলা পরিষদের ২০% বরাদ্দের মধ্যে উপজেলা 

পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানকে ১৬টি সোলার লাইট, টিআর উন্নয়নে ২ লাখ টাকা ও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ষ্ট্রিট লাইটের প্রকল্প রেখে সভায় একটি প্রকল্প দাখিল করা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে ২০% এককভাবে দাবি করার মিথ্যা একটি বানোয়াট অভিযোগ জেলা প্রশাসক বরাবরে চেয়ারম্যানদের পক্ষ দাখিল করা হয়েছে। 

যা সম্পুর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। পরিশেষে সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে উল্লেখিত অনিয়ম-দুর্নীতি ও বেআইনী কাজ কারবারের প্রতিকার দাবি করেন। 

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. নয়া মিয়া সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ কবীর ছাকা, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম জাভেদ, মো. জাহাঙ্গীর আলম, ত্রাণ ও সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা কামাল পাশা, ফুলছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আজহারুল হান্নান, ফুলছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মো. মামুন মিয়া প্রমুখ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ