ডেস্ক নিউজঃ
পর্যটন শিল্পকে সুরক্ষা দিতে কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকার শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পটি জরুরি ভিত্তিতে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, দুর্যোগ, শরণার্থী ও ত্রাণ পুনর্বাসন বিভাগ এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কাঁটাতার দিয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়াসহ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো ঘিরে নিরাপত্তা বাড়াতে এরইমধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া শুরু করেছে সরকার। ডিসেম্বরের (২০২০) শেষ সপ্তাহে উখিয়ার বালুখালি এলাকায় এ কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ শুরু হলেও তা একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও এ নিয়ে রয়েছে নানা প্রশাসনিক জটিলতা। যে কারণে বৃহস্পতিবারের এ জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের শরণার্থী বিষয়ক সেল সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের রাখাইন এলাকা থেকে উচ্ছেদ হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত সাত লাখ ৪১ হাজার ৮৪১ জন মিয়ানমার নাগরিক (রোহিঙ্গা) বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সব মিলিয়ে পাসপোর্ট অধিদফতর নিবন্ধিত আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছে ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। এছাড়া সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপ অনুযায়ী আশ্রয়প্রার্থী এতিম শিশু রয়েছে ৩৯ হাজার ৮৪১ জন। যার মধ্যে ছেলে শিশুর সংখ্যা ১৯ হাজার ৫৯ জন এবং মেয়ে শিশুর সংখ্যা ২০ হাজার ৭৮২জন। ৮ হাজার ৩৯১ জন শিশুর মা-বাবা কেউই নেই।
ইউএনএফপির সহযোগিতায় পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে এ বছরের শুরুর দিকে জরিপ কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে এ জরিপ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তাদের জরিপ অনুযায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গর্ভবতী নারীর সংখ্যা ২৮ হাজার ১৫৫ জন। তবে ক্যাম্পগুলোর বাইরেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেক অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা নাগরিক রয়েছে বলে ধারণা অনেকের।
উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী নতুন ক্যাম্প এলাকাকে ২২টি ক্যাম্পে বিভক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও উখিয়ার হাকিমপাড়া, জামতলী ও পুটিবুনিয়া এবং টেকনাফের কেরণতলী, উনছিপ্রাং, আলীখালি, লেদা, জাদিমুরা, নয়াপাড়া শালবন ও শামলাপুরকেও পৃথক পৃথক ক্যাম্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সবমিলিয়ে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য তৈরি করা হয় ৩২টি ক্যাম্প। এসব ক্যাম্পে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে দুই লাখ ১২ হাজার ৬০৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এজন্য ওই এলাকার বনাঞ্চলসহ ৬ হাজার ৫০০ একর জমির রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু শামলাপুর ক্যাম্পের কারণে মেরিন ড্রাইভ এলাকার পর্যটন সৌন্দর্য হুমকির মুখে পড়ে। ফলে এ ক্যাম্পটি আগামী এক মাসের মধ্যে যাতে কুতুপালং এলাকায় সরিয়ে নেওয়া যায় সেজন্য উদ্যোগ নিতে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের শরণার্থী বিষয়ক সেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শামলাপুর ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছাড়াও দ্রুত কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ, ক্যাম্পের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গা নাগরিকদের শনাক্ত করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসাসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৃহস্পতিবারের (৬ ফেব্রুয়ারি) বৈঠকে। এসব বাস্তবায়নে ২০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের সমন্বয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) খোরশেদ আলমসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক ও আইসিটি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, বিষয়গুলো নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তবে কবে নাগাদ শামলাপুর ক্যাম্পটি সরিয়ে নেওয়া হবে সেটা বলা যাচ্ছে না। কারণ, এর সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় জড়িত রয়েছে। বিষয়টি তদারকির জন্য দুর্যোগ মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও শরণার্থী সেলের প্রধান শাহ্ রেজওয়ান হায়াত বলেন, বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। তবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণসহ অনেকগুলো বিষয় বাস্তবায়নে কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
0 মন্তব্যসমূহ