ডেস্ক রিপোর্টঃ
তিন মাস ধরে শিকলবন্দি জীবন কাটছে ফাহিমার। এইচএসসি পরীক্ষায় বহিষ্কার হওয়ার পর থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন তিনি। বর্তমানে তিনি পাগলপ্রায়।
ফাহিমা কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বুরুজের পাড় গ্রামের মৃত নুরুজ্জামানের মেয়ে। গত তিন মাস ধরে শিকলবন্দি অবস্থায় রয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মেধাবী শিক্ষার্থীদের একজন ফাহিমা। একসময় সবার সঙ্গে হেসে-খেলে মেতে থাকতেন। সবার মতো বিদ্যালয়ে যেতেন। ১৯৯৬ সালে অংশ নেন দাখিল পরীক্ষায়। দ্বিতীয় বিভাগে পাস করেন তিনি।
এরই মধ্যে বাবা নুরুজ্জামান হঠাৎ প্যারালাইজড হয়ে যান। শুরু হয় সংসারে অভাব। তখন সংসার বাঁচাতে ফাহিমা পাড়ি জমান চট্টগ্রাম। চাকরি পান পোশাক কারখানায়। কিন্তু পড়ালেখার আগ্রহ তাকে সবসময় টানত। তারপর ভর্তি হন উচ্চ মাধ্যমিকে। ফাইনাল পরীক্ষায়ও অংশ নেন। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করায় তাকে বহিষ্কার করা হয়। তখন থেকে ভেঙে পড়েন ফাহিমা। একদিন গভীর রাতে কী যেন ভেবে হঠাৎ চিৎকার করে উঠেন। তখনই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।
ফাহিমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে খুঁটির সঙ্গে লোহার শিকলে বাঁধা ফাহিমা। শিকলের শেষ অংশে ঝুলছে তালা। পায়ের সঙ্গে লাগানো শিকলই সারাদিনের সঙ্গী তার। শিকলের আঘাতে এখন পা ক্ষত হয়ে গেছে। সারাদিন রোদ-বৃষ্টি যাই হোক তাকে শিকলবন্দি থাকতে হয়। ঘুমানোর সময়ও পায়ে শিকল থাকে তার। মা বাসায় না থাকলে সারাদিন বাসায় বা যেখানে বেঁধে রেখে যাওয়া হয় সেখানেই শুয়ে কিংবা বসে থাকতে হয় তাকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে খড়ের বেড়াবেষ্টিত ছোট একটা টিনের চালায় বসবাস ফাহিমার। আট-বোনের সংসার তাদের। ছোটবেলায় ফাহিমা বাবাকে হারায়। তখন থেকে মা রাবেয়া বেগম মেয়েদের নিয়ে চরম অর্থকষ্টে পড়েন। ফাহিমার বড় বোনেরা অভাবের কারণে খেতে পারেন না তিনবেলা।
ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে ফাহিমার বোনেরা ঢাকাতে চলে যায়। সেখানে পোশাক কারখানায় চাকরি করে। এতে যা আয় হয় তা দিয়ে খেয়ে-পরে জীবন চলে তাদের। কিছু টাকা বাড়ি পাঠায়। কোনো মতেই সেই টাকা সঞ্চয় করে রাবেয়া বেগম একে একে ছয় মেয়ের বিয়ে দেন। পরে সংসার থেকে সবাই যখন চলে যায়, তখন থমকে যায় তার সংসার। এখন ফাহিমার সংসার চলে ৬৫ বছরের বৃদ্ধা মায়ের বিধবা ভাতায়।
ফাহিমার মা রাবেয়া বেগম জানান, তার মেয়েটি এখন মানসিক ভারসাম্যহীন। সবসময় কথা বলতেই থাকে। নিজেই নিজের হাত পা কামড়ায়, শরীর থেকে জামাকাপড় খুলে ফেলে। সুযোগ পেলেই বাসা থেকে পালিয়ে যায়। কয়েকদিন আগেও বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে পাওয়া যায়। সবাইকে মারতে যায়। তাই তাকে শিকলে বন্দি করে রাখা হয়।
ফাহিমার ছোট বোন ফেরদৌসী বেগম জানান, ফাহিমা খুব মেধাবী ছিলেন। এইচএসসি পরীক্ষায় তাকে বহিষ্কার করার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তখন থেকেই আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি।
প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফাহিমা আগের মতো আর নেই। সবসময় আবোল-তাবোল বলে। যেকোনো সময় যে কাউকে আঘাতের চেষ্টা করে। তাই তাকে শিকলে বন্দি করে রাখা হয়।
ফাহিমার মা মনে করেন, সমাজের বিত্তবান বা সরকারি সহযোগিতা পেলে তাকে উন্নত চিকিৎসা করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে পরিষদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার চেষ্টা করব।
0 মন্তব্যসমূহ