পরিকল্পিত কক্সবাজার গড়তে নবাগত জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাবনা

পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলন একটি সামাজিক দায়বদ্ধ সংগঠন। ‘আজকের পদক্ষেপ আগামীর পরিকল্পিত কক্সবাজার’ এই শ্লোগানকে ধারণ করে পর্যটন নগরীর উন্নয়নে এই যাত্রা। বৃটিশ ক্যাপ্টেন হিরাম কক্সের বাজার, এখন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্বাস্থ্যকর নগরী এই কক্সবাজার। দেশের সাহিত্যাঙ্গনে দরিয়া নগর নামেই পরিচিত, আর বিশ্বের দীর্ঘতম বালিয়াড়ি’র বারান্দা। আমাদের গর্ব।
হিরাম কক্স এর যুগের পূর্ব থেকে এতদাঞ্চলে মনুষ্য ও প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা নগর ব্যবস্থাপনা, আর মাত্র কয়েক যুগ আগের অপরিকল্পিত স্থাপনাসমুহ নির্মাণ যাত্রা ভাবিয়ে তুলছেন সচেতন ও চিন্তাশিল মানুষদের। কক্সবাজার শহরসহ জেলার অভ্যন্তরীণ শহরগুলোর কোনটি পরিকল্পনা মাফিক এগুচ্ছেনা। এমনটি হতে থাকলে আগামী প্রজন্ম বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়বে। যন্ত্রণা আর যান্ত্রিক শহরে পরিণত হবে, এই সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সেটি আর বেশি দুরে নয়! পরিচ্ছন্ন, সুস্থ, সুন্দর, পরিবেশ বান্ধব পর্যটন নগরীর প্রয়োজন। যে কোন পরিকল্পিত পরিকল্পনার প্রয়োগ চাই ‘পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলন’। আসুন, একসাথে কাজ করি আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর পৃথিবী গড়ার।

বর্তমান সরকারের সু-দৃষ্টির কারণে ইতোমধ্যে কক্সবাজারে মেগা প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এতো উন্নয়নের পরেও পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলন, আরো কিছু প্রস্তাবনা আকারে সচেতন মানুষের দাবি উত্থাপন করছে-

    পরিকল্পিত পরিবেশ বান্ধব পর্যটন নগরী বিনির্মাণে টেকসই, পরিচ্ছন্ন, যানযট ও দখল মুক্ত করে গড়ে তুলতে যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আগত পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করণ।
    কক্সবাজারসহ দেশের পর্যটন কেন্দ্র গুলোকে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রচারের স্বার্থে বিভিন্ন দেশে ট্যুরিজম এ্যাম্বেসেডর নিয়োগ। এছাড়া প্রতি বছর ‘কক্সবাজার লংগেষ্ট সী বিচ মেলা’ ও শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাপক ভাবে আন্তর্জাতিক খেলা পরিচালনা করা।
    পরিকল্পিত নগর উন্নয়নে যে কোন পরিকল্পনায় সচেতন নাগরিকের মতামত গ্রহণ। পর্যটন শিল্প উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উন্নয়ন কমিশন গঠন।
    স্পোর্টস ট্যুরিজম, প্রেস ট্যুরিজমকে পর্যটন শিল্পে কাজে লাগানো এবং অত্যাধুনিক পরিকল্পিত শিশু পর্যটন বান্ধব বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা। এছাড়া সমুদ্র সৈকতে নারিকেল বাগান, প্যারাবন ও উপকূলীয় বনাঞ্চল সংরক্ষণে বৈজ্ঞানিক পন্থায় বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ।
    জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য মন্ডিত পর্যটন স্পটগুলোকে পর্যটকমুখী করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ ও সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ গুলোকে পরিবেশ বান্ধব পর্যটন জোন ঘোষণা করা। এছাড়া বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঝুঁপড়ি দোকানসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হবে।
    বাঁকখালী নদী সহ অন্যান্য নদী-খাল গুলোকে দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পর্যটন স্পটে রূপান্তরিতকরণে পরিকল্পনা গ্রহণ।
    জেলার দরিদ্র মানুষের জন্য পরিকল্পিতভাবে উন্নত বাসস্থান গড়ে তোলা।
    আধুনিক কক্সবাজার বিনির্মাণে দেশের সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সহিংস আন্দোলন পরিহার করা।
    জেলার মাদক, রোহিঙ্গা, পাহাড় নিধনকে জাতীয় সমস্যার আওতায় এনে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ।
    ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, টেকনাফ নেচার পার্ক, টেকনাফের জাহাজপুরা গর্জন বাগান ও খুটাখালীস্থ মেধাকচ্ছপিয়া জাতীয় উদ্যানকে পর্যটনমুখী করতে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।
    সরকারের উন্নয়নের মেগা প্রকল্প এক্সক্লুসিভ জোন, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ও রেল লাইনসহ যাবতীয় প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন।
    চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও কক্সবাজার-টেকনাফ, মেরিন ড্রাইভ সড়ক ৪ লেন এবং অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর ব্যাপক উন্নয়ন প্রয়োজন।
    জলবায়ু সমস্যা মোকাবেলায় জেলার উপকূলীয় এলাকা ও টেকসই শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণসহ নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।
    জেলার পরিত্যক্ত জায়গা গুলোকে পরিকল্পিত বনায়ন ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমজনতার স্বার্থে ব্যবহার উপযোগি করা হউক।
    পর্যটন মৌসুমে টমটম ও রিক্সা চালকদের নির্দিষ্ট পোষাক পরিধান বাধ্যতামূলক করতে হবে।
    কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদনবিহীন স্থাপনার তালিকা প্রণয়ন।
    হোটেল-মোটেল গুলোতে কক্সবাজারের স্থানীয় যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীদের ৩০% কোটা ভিত্তিক চাকুরি নিশ্চিত করে বেকার দূরীকরণ।
    রাতের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও মেরিন ড্রাইভ সড়ক সহ সকল পর্যটন স্পটগুলো সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আলোকিত করা।
    কক্সবাজারসহ দেশের লবণ শিল্প বাঁচাতে বিদেশ থেকে আমদানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও লবণ বোর্ড গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ।
    কক্সবাজার পৌর শহরের অভ্যন্তরে বাস কাউন্টার না রাখা ও লক্কর-ঝক্কর গাড়ি নিষিদ্ধ করা।
    বার্মিজ মার্কেট গুলোকে বার্মিজ পণ্য বিক্রির জোন ঘোষণা ও শহরে আলাদা শুটকি মার্কেট স্থাপন করা।
    কাঁকড়া চাষকে সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় এনে আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টির জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ।
    শহরের সকল ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য আলাদা ডাম্পিং ষ্টেশন তৈরি ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে কাজ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ।
    টাকা, ডাক টিকেট ও অনলাইনে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের ছবি প্রকাশ করা এবং পাঠ্য পুস্তকে পর্যটন বিষয়কে গুরুত্ব প্রদান করে পর্যটন শিক্ষা বৃত্তি চালুকরণ। কক্সবাজারকে জাতীয় পর্যটন নগরী ঘোষণা।
    জাতির সূর্য সন্তানদের নামে সড়ক নামকরণ ও সামুদ্রিক প্রাণীর ভাস্কর্য ও এ্যাকুরিয়াম নির্মাণ এবং সামুদ্রিক প্রাণী জাদুঘর গড়ে তোলা।
    কক্সবাজার শহরের লালদিঘী, গোলদিঘী, শৈবাল লেক সহ সকল জলাশয়ে বিভিন্ন গাছ লাগিয়ে পর্যটন স্পটে রূপান্তর করা। এছাড়া সৈকতস্থ জেলা পরিষদের ফুল বাগানটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া।
    কলাতলী-হিমছড়ি সড়কের সুঁউচু পাহাড়ের সৌন্দর্য কাজে লাগিয়ে ক্যাবল কার স্থাপন ও প্যারাসাইলিং জোন গড়ে তোলা।
    হোটেল-মোটেল, হ্যাচারি ও শহরের নানা স্থাপনার বর্জ সাগরে ফেলা বন্ধ করা এবং পরিবেশ বান্ধব উন্নিতকরণে পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
    জেলার যে কোন স্থানে আইকন ভিলেজ তৈরি করণ। যেখানে থাকবে বাংলাদেশের সেরা মানুষের একটি বাড়ি বা ফ্লাট।
    কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেরিন ড্রাইভ সড়কের জমি মালিকদের ক্ষতি পূরণের সকল টাকা পরিশোধ করা।
    পর্যটকদের জন্য আলেদা বাস কাউন্টার নির্মাণ করা, মাষ্টার প্লানে উল্লেখিত কলাতলীতে পর্যটকদের বাস রাখার দুইটি মাঠ দখল থেকে উদ্ধার করা।
    কক্সবাজার শহরের আবাসন মাঠ ও খেলার মাঠ দখল মুক্ত রাখতে হবে।
    এফডি সেভেনের জন্য আসা  রোহিঙ্গাদের ত্রাণের ট্রাক কক্সবাজার শহরে ঢুকতে দেওয়া বন্ধ করা।
    কক্সবাজার শহরের যানযট মুক্তকরণে টমটম গ্যারেজ বন্ধ করা, অতিরিক্ত টমটম বের করে দেওয়া।
 
প্রস্তাবকারী,
আব্দুল আলীম নোবেল, সাংবাদিক ও সমন্বয়ক, পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ